শহীদনুর আহমেদ ::
গত সোমবার সকাল ৮টার দিকে তীব্র গতিতে বয়ে যায় কালবৈশাখী ঝড় ও শিলাবৃষ্টি। বয়ে যাওয়া কালবৈশাখী ঝড়ে দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের ৫ শতাধিক ঘরবাড়ি ও গাছপালার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আকস্মিক ঝড়ের তা-বে উড়ে গেছে অনেক পরিবারের মাথাগোঁজার ঠাঁই। ক্ষতিগ্রস্ত শতাধিক পরিবার খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবনযাপন করছে। অপরদিকে, ঝড়ের পাশাপাশি শিলাবৃষ্টিতে একাধিক হাওরের পাকা ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। শিলাবৃষ্টির আঘাতে ঝরে গেছে পাকা ধান। এই ধান কাটতে অনীহা প্রকাশ করছেন ভাগালুরা। ঝড়ের তা-বে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের গ্রামে গ্রামে ঘরবাড়ির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হলেও এখন পর্যন্ত সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে কোনো সাহায্য পাননি বলে জানিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যরা।
দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনের দেয়া তথ্য অনুযায়ী- কালবৈশাখী ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় সাড়ে পাঁচশত ঘরবাড়ি। ইতোমধ্যেই ইউনিয়ন অনুযায়ী ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের তালিকা তৈরি করে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান ও জেলা প্রশাসক বরাবরে পাঠানো হয়েছে।
মঙ্গলবার সরেজমিনে ক্ষতিগ্রস্তদের সাথে কথা বলে জানাযায়, ঝড়ের কবলে উপজেলার পূর্ব বীরগাঁও ইউনিয়নের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় অর্ধশত ঘরবাড়ি। ঝড় উড়িয়ে নিয়ে গেছে ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের বুইদ্ধা মিয়ার বসতঘর। কাপড় ও পলিথিন দিয়ে পরিবার নিয়ে খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছেন বয়স্ক বুইদ্ধা মিয়া। বুইদ্ধা মিয়ার মতো বসতঘর হারিয়েছেন ৮নং ওয়ার্ডের রেশন বিবি, ৩নং ওয়ার্ড নতুন বাবনগাঁয়ের রবউল্লাহ, খেলাই মিয়া, জুনেল মিয়া, সেলঙ্গীর আহমদ, ময়না মিয়া, ফেরদৌস আহমদ, জুবায়েল আহমেদসহ শলফ, ধরমপুর গ্রামের অনেক পরিবার। এসব পরিবারের সদস্যরা খোলা আকাশের মানবেতর জীবনযাপন করছেন। ঝড়ে গাছ পড়ে ভেঙে গেছে ৪নং ওয়ার্ডের বীরগাঁও গ্রামের খালপাড়ের মখদ্দুস আলী ও ওয়াহাবুল্লাহ মিয়ার বসতঘর। ঝড়ে সর্বস্ব হারানো রেশন বিবি বলেন, তুফানে আমার সবকিছু নিয়ে গেছে। কাপড় তেরফাল দিয়ে উড়া বানাইয়া কোনোভাবে রাইত পার কররাম ছেলেমেয়ে নিয়া। সরকার যদি আমারে না দেখে আমি কোয়াই যাইমু।
ঝড়ের তা-বে শিমুলবাঁক ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের প্রায় অর্ধশত ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঝড়ে উড়ে গেছে শিমুলবাঁক গ্রামের কাচামালা বিবি, মালা বিবি, নেজামুল ইসলাম, আবিদ মিয়া, রগুনাথপুর গ্রামের মহিবুর রহমান, চেরাগ আলী, শহীদুল ইসলাম, আকবর আলী, মাসুক মিয়া, গোবিন্দপুর গ্রামের সোহেল মিয়া, ময়না মিয়াসহ ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের অনেক পরিবারের ঘর। কারো সম্পূর্ণ ঘর, কারো ঘরের ছাউনি পড়ে গেছে। ঝড়ে হতাহতের ঘটনা না ঘটলেও মাথাগোঁজার ঠাঁই না থাকায় নিরাপত্তাহীনতায় ভোগছেন ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার।
শিমুলবাঁক ইউনিয়নের হাওর বাঁচাও সুনামগঞ্জ বাঁচাও আন্দোলনের আহ্বায়ক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, কালবৈশাখী ঝড়ে ইউনিয়নের ব্যাপক ঘরবাড়ির ক্ষতি হয়েছে। অনেকেই খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছেন। ঝড়ের পাশাপাশি শিলাবৃষ্টিতে লালুখালী, মুরাদপুর, বাদরপুর, তলের বন, রগুনাথপুর, পাথারিয়া এলাকার বিভিন্ন হাওরের ফসলি জমির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এসব ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক পরিবারের তালিকা করে পুনর্বাসনের আওতায় আনতে সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।
স্থানীয়রা জানান, ঝড়ে ভেঙে গেছে দরগাপাশা ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের আমরিয়া গ্রামের ছয়ফুল মিয়া, ফজলু মিয়া, সুজন মিয়া, ফটিক মিয়াসহ ইউনিয়নের প্রায় ২০ থেকে ৩০টি পরিবারের ঘরবাড়ি। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অসংখ্য গাছপালা। এছাড়াও পশ্চিম বীরগাঁও, পাথারিয়া, জয়কলস ও পূর্বপাগলা, পশ্চিম পাগলা ইউনিয়নের ব্যাপক ক্ষতির খবর পাওয়া গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের তালিকা করে পুনবার্সনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন উপজেলা হাওর বাঁচাও সুনামগঞ্জ বাঁচাও আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ।
এ ব্যাপারে দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সফিউল্লাহ বলেন, সোমবারের সকালে কালবৈশাখী ঝড়ে উপজেলার ৫ শতাধিক ঘরবাড়ির ক্ষতি হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির তালিকা পরিকল্পনামন্ত্রী ও জেলা প্রশাসক বরাবরে পাঠানো হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে সহযোগিতার আওতায় আনার সুপারিশ পাঠানো হয়েছে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে।