1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
  3. [email protected] : wp-needuser : wp-needuser
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১০:৫৪ পূর্বাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

পহেলা বৈশাখ ও আমাদের সংস্কৃতিক :নাসরীন আক্তার খানম

  • আপডেট সময় রবিবার, ১৪ এপ্রিল, ২০১৯

ইংরেজি তারিখ অনুযায়ী ১৪ এপ্রিল আমরা পহেলা বৈশাখে বাংলা নববর্ষ পালন করে থাকি। বাংলা নববর্ষ পালনের সময় আমরা আজকাল বহু কিছু যুক্ত করে নিয়েছি পালিত অনুষ্ঠানাদিতে। অনেকে এতে সহমত পোষণ করেন, অনেকে দ্বিমত পোষণ করেন যে এগুলো আমাদের ঐতিহ্যের অংশ নয়।
মূলত সম্রাট আকবর প্রচলিত হিজরি চান্দ্র পঞ্জিকাকে সৌর পঞ্জিকায় রূপান্তরিত করার সিদ্ধান্ত নেন। তাঁর দরবারের বিশিষ্ট বিজ্ঞানী ও জ্যোতির্বিদ আমির ফতেউল্লাহ সিরাজীকে এই রূপান্তরের দায়িত্ব দেন। মূল হিজরি পঞ্জিকা চান্দ্র মাসের উপর নির্ভরশীল। চান্দ্র বৎসর সৌর বৎসরের চেয়ে ১১/১২দিন কম হয়। কারণ সৌর বৎসর ৩৬৫ দিন আর চান্দ্র বৎসর ৩৫৪ দিন। একারণে চান্দ্রবৎসরে ঋতুগুলি ঠিক থাকে না। আর চাষাবাদ আর এ সংক্রান্ত কাজগুলো মূলতঃ ঋতু নির্ভর। এজন্যই এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিলো।
৯৬৩ হিজরী সাল থেকে বঙ্গাব্দ গণনা শুরু হয়। ৯৬৩ হিজরি সালের মুহাররম মাস ছিল বাংলা বৈশাখ মাস, এজন্য বৈশাখ মাসকেই বাংলা বর্ষপঞ্জির প্রথম মাস ও পহেলা বৈশাখকে নববর্ষের প্রথমদিন ধরা হয়।
মোগল আমল থেকেই পহেলা বৈশাখ পালনের কিছু রেওয়াজ শুরু হয়েছিল। প্রজারা চৈত্রমাসের শেষ দিন পর্যন্ত খাজনা পরিশোধ করতেন এবং পহেলা বৈশাখ জমিদারগণ প্রজাদের মিষ্টি দিয়ে আপ্যায়ন করতেন। ব্যবসায়ীরা হালখাতা উৎসব করতেন। ক্রেতাদের থেকে পাওনা আদায় করতেন, ক্রেতাদের মিষ্টিমুখ করাতেন।
সনাতন ধর্মালম্বীগণ তাদের রীতি অনুযায়ী পহেলা বৈশাখ পালন করতেন। পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে ঈশা খাঁর আমলে সোনারগাঁওয়ে বউমেলা নামে এক ব্যতিক্রমধর্মী মেলা শুরু হয় যা পহেলা বৈশাখ থেকে শুরু হয়ে পাঁচ দিনব্যাপী চলতো। সোনারগাঁ থানায় আরেকটি মেলার আয়োজন করা হতো যার নাম ছিল ঘোড়ামেলা। এ মেলার অন্যতম আকর্ষণ ছিল নৌকায় খিচুড়ি রান্না করে রাখা হতো এবং সবাই কলাপাতায় করে তা ভোজন করতো। এই মেলায় নাগরদোলা, পুতুল নাচ, সার্কাস প্রভৃতির আয়োজন থাকতো এবং সকল শ্রেণির মানুষ এই মেলা উপভোগ করতো।
বাংলাদেশের তিনটি প্রধান ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী (ত্রিপুরাদের বৈসুক, মারমাদের সাংগ্রাই ও চাকমাদের বিজু উৎসব) বর্তমানে একসাথে বৈসাবি উৎসব হিসেবে নববর্ষকে পহেলা বৈশাখে পালন করে।
বৈশাখে পান্তার আয়োজন মুঘল শাসনামলেও কিছু কিছু সামাজিকতায় ছিল কিন্তু ইলিশের ব্যাপারটি ছিল না। মিষ্টিপ্রিয় বাঙালির মিষ্টিই ছিল মূলতঃ বৈশাখি খাবার আয়োজনের মূল উপাদান। এছাড়া স্থানীয়ভাবে নিজস্ব উদ্যোগে গ্রামে গ্রামে কৃষক, তাঁতীসহ বিভিন্ন পেশার লোকজন নিজেদের উৎপাদিত বস্তু বিক্রয়ের জন্য মেলার আয়োজন করতো, যেখানে সকল বয়সীদের জন্য বিনোদনের ব্যবস্থাও থাকতো।
পহেলা বৈশাখ কারও নিজস্ব বিষয় নয়, আবার জোর করে চাপিয়ে দেয়ার বিষয় নয়। বাংলাদেশ বহু ধর্মাবলম্বী, বহু সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের মিলনমেলার একটি দেশ। এখানে সবাই মিলেই যে কোনও উৎসব পালন করেন যার যার ধর্মীয় স্বকীয়তা বজায় রেখেই। তাই পহেলা বৈশাখে মিষ্টিমুখ, হালখাতা উৎসব এবং বিভিন্ন মেলায় যেমন মুসলিমগণ অংশগ্রহণ করেন তেমনি অন্যান্য ধর্মালম্বীগণও তাদের ধর্মীয় অনুশাসন অনুযায়ী পূজা-অর্চনার মাধ্যমে বৈশাখ বরণ করেন।
চৈত্র সংক্রান্তিতে নিরামিষ খান, চৌদ্দ রকমের শাক পাতে তুলেন সনাতন ধর্মালম্বীগণ। এর মধ্যে তিতা শাকও রাখতে হয়। পহেলা বৈশাখে তারা সাধ্য অনুযায়ী মাছ খান। তবে অবশ্যই ইলিশ নয়।
অতিউৎসাহীর ধনিক শ্রেণি বছরে একদিন পান্তা ইলিশ খেয়ে, পাঞ্জাবি পরে, রবীন্দ্রসংগীত গেয়ে একদিনের বাঙালি সেজে যে নাটক করেন তা কখনই ঐতিহ্যের অংশ নয়। এদেশের কতজন মানুষ ইলিশ খাবার সামর্থ্য রাখেন পহেলা বৈশাখে? সংস্কৃতির অংশ তাই হয়ে উঠে যা সাধারণের হাতের নাগালে থাকে।
আজকাল আরেকটি রেওয়াজ চালু হয়েছে তা হলো পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে নতুন চিত্র-বিচিত্র কাপড় কেনার। এতে বাঙালি সংস্কৃতির কিছু হোক না হোক- ব্যবসায়ীদের পকেট ভারী হচ্ছে, পুঁজিপতিদের পোয়াবারো হচ্ছে। সারাবছর টাইট জিন্স আর ফতোয়া পরে ‘একদিন বাঙালি হলামরে’ বলে আত্মতৃপ্তির ঢেঁকুর আসলে বদহজমের ঢেঁকুর।
বৈশাখ আসে কৃষকের ঘরে, যার চোখে মুখে চৈত্রের মাঝামাঝি থেকে খেলা করে উৎকণ্ঠা আর অনিশ্চয়তার ছাপ। অকালবন্যায়, অতিবৃষ্টি, শিলাবৃষ্টিতে ফসল টিকবে তো? ধান কাটতে গিয়ে বজ্রপাতে জীবনটা থাকবে তো? অবশেষে যদি ফসল ভালো হয়, ফসল ঠিকমতো উঠানো যায়, মনের আনন্দে তারা তাদের মতো করে বৈশাখের আনন্দ উপভোগ করেন।
সত্যিকারের নববর্ষ পহেলা বৈশাখে পালনের মূল আয়োজক কৃষকরাই। নাগরিক আয়োজনে কৃত্রিমতা আছে প্রাণের পরশ নেই। সারাবছর ইংরেজি কপচিয়ে পহেলা বৈশাখ? গ্রামে যান, দেখুন গ্রামের কৃষকরা বাংলা পঞ্জিকায় দিন তারিখ হিসেব করে, ইংরেজি ক্যালেন্ডারে নয়। সারাবছরই তারা কাঁচামরিচ নুন পেঁয়াজ দিয়ে পান্তা খেয়ে মনের আনন্দে দিন কাটায়। এতে তাদের বদহজম হয় না। বৈশাখের শুভেচ্ছা বাংলার কৃষককুলের জন্য। শুভেচ্ছা সবাইকে বাংলা নববর্ষের।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com