গতকালের দৈনিক সুনামকণ্ঠের শীর্ষ সংবাদশিরোনাম ছিল, ‘কৃষক নেতা আজাদ হত্যাকা-ের প্রতিবাদে হাওর বাঁচাও সুনামগঞ্জ বাঁচাও আন্দোলনের মানববন্ধন ॥ খুনীদের গ্রেফতারে ৭ দিনের আল্টিমেটাম’। আমরা জানি, এই রকম আল্টিমেটাম হয়তো ভবিষ্যতে আরও দিতে হবে। কারণ আমাদের সমাজটাই এমন।
পৃথিবীতে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে যত মানুষ খুন হয়েছে, তার চেয়ে বহুবহুগুণ মানুষ খুন হয়েছে মানুষেরই হাতে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে আমেরিকা নিজের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করতে হিরোসিমা নাগাসাকির মতো দুটি শহর সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দিয়েছিল এটম ফাটিয়ে। বাংলাদেশকে স্বাধীনতা অর্জন করতে বিনিময় দিতে হয়েছে ৩০ লক্ষ প্রাণ। পৃথিবীতে সভ্যতার উন্নতির প্রতিটি সোপান তৈরি হয়েছে খুন হওয়া মানুষের রক্তকণিকা দিয়ে। মাঝে মাঝে মনে হয়, মানুষ আসলেই একটি খুনে প্রজাতি, কিন্তু আজাদ মিয়াদের কথা স্মরণ হলে মনে হয় কথা আসলেই ঠিক নয়।
আমাদের সমাজ এমন যে, একজন তাবিজ বিক্রেতাকে প্রতিরোধ করতে চাইলে, তাবিজ বিক্রেতা প্রতিরোধকারীকে উল্টো অভিযোগ করে বলে, ‘আমার পেটে লাথি মারছেন কেন?’ আর আজাদ মিয়া কোটি টাকা মেরে খাওয়ার পথে প্রতিরোধ তোলাতে প্রতিপক্ষ তাকে পেটে লাথি দেওয়া অপবাদ না দিয়ে ¯্রফে খুন করে ফেলে। এই খুনের একটাই কারণ, বাঁধের টাকা লুটেপুটে খাওয়ার প্রতিবন্ধক অপসারণ করা। তাবিজওয়ালা সাধারণ মানুষকে ঠকায় এবং হাওররক্ষাবাঁধের কাজে দুর্নীতিবাজরা সরকারকে ঠকায় এবং অবাক বিষয় যে, সাধারণ মানুষ সরকারের টাকাকে নিজেদের টাকা মনে করে না। আজাদ মিয়া মনে করতেন। এটাই ছিল তাঁর মৃত্যুর কারণ।
মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারী বিদগ্ধজনের মতামত থেকে এ কয়েকটি বিষয় স্পষ্ট হয়েছে এবং সেগুলো দাবি হিসেবে প্রতিস্থাপিত হয়েছে। সে দাবির প্রতি আমাদের অকুণ্ঠ সমর্থন আছে। যেমন প্রথমত অপরাধীর বিচার হতেই হবে, দ্বিতীয়ত আজাদ মিয়ার পরিবারের জন্য, তার অসহায় বাচ্চাদের জীবনে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার পথ সুগম রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। এবং তৃতীয়ত এই পদ্ধতিতে মানুষ খুন করার পথ চিরতরে বন্ধ করে দিতে হবে। আমরা জানি, এই খুন করার প্রক্রিয়ার সঙ্গে সমাজে ক্ষমতাসীন লোকদের উচ্চমহল থেকে নীচমহলের একাংশের সম্পৃক্ততা আছে। এই মহলটিকে অবশ্যই প্রতিরোধ করতে হবে। একদা এরাই রাষ্ট্রের স্থপতিকে পর্যন্ত পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিয়ে দেশকে বিপন্ন করে তোলেছিল। আমাদের প্রশ্ন হলো অপ্রয়োজনীয় বাঁধের প্রস্তাব জেনেশোনে কারা তৈরি করেছে? এদেরকে ঠেকাতে না পারলে কোনও দিনই দুর্নীতিকে ঠেকানো যবে না এবং ঠেকানো যাবে না অন্য কোনও আজাদের খুন হয়ে যাওয়াকে।