স্টাফ রিপোর্টার ::
দুর্বৃত্তদের হামলায় নিহত হাওর বাঁচাও সুনামগঞ্জ বাঁচাও আন্দোলন, সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক আজাদ মিয়ার দাফন সম্পন্ন হয়েছে। সোমবার সন্ধ্যায় সদর উপজেলার মোল্লাপাড়া ইউনিয়নের জালালপুর গ্রামের কবরস্থানে আজাদ মিয়া’র দাফন সম্পন্ন হয়।
সৎ, নির্লোভ, সদালাপি আজাদ মিয়াকে শেষবারের মতো দেখতে জালালপুর গ্রামে উপজেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসেন হাজার হাজার মানুষ।
সোমবার বিকেল সাড়ে ৫টায় আজাদ মিয়ার লাশবাহী গাড়ি জালালপুর গ্রামে পৌঁছলে স্বজনদের আহাজারিতে চারপাশের বাতাষ ভারি হয়ে ওঠে। নিহত আজাদ মিয়ার ছোট দুই মেয়ে ও ছেলে এবং স্বজনদের আর্তনাদে চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি উপস্থিত কেউই। এ সময় এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। শোকে স্তব্ধ হয়ে পড়ে জালালপুর গ্রাম।
গত বৃহস্পতিবার রাতে দুর্বৃত্তদের হামলায় গুরুতর আহত কৃষক নেতা আজাদ মিয়া চিকিৎসাধীন অবস্থায় সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রোববার রাত সাড়ে ৮টায় মারা যান। সোমবার ময়না তদন্ত শেষে সন্ধ্যায় বেতগঞ্জ বাজার মাঠে জানাজার নামাজের পর পারিবারিক কবরস্থানে তাঁর দাফন সম্পন্ন হয়।
নিহতের পরিবার ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, মোল্লাপাড়া ইউনিয়নের জালালপুর গ্রামের লাল মিয়ার ছেলে আজাদ মিয়া গত কয়েক বছর ধরে সুনামগঞ্জ শহরে অবস্থান করতেন। তবে প্রতিনিয়তই এলাকার কৃষকের স্বার্থে তিনি উচ্চকণ্ঠে কথা বলতেন। ২০১৮ সালে দেখার হাওরের ৬টি অপ্রয়োজনীয় প্রকল্পে কয়েক কোটি টাকার দুর্নীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে সুনামগঞ্জ সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে অভিযোগ করেন তিনি। আদালত অভিযোগটি তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে দুদককে নির্দেশ দেয়। এ ঘটনায় ওই প্রকল্পগুলোর সঙ্গে জড়িতরা তার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে হুমকি ধমকি দিয়ে আসছিল।
গত বৃহস্পতিবার আহত হওয়ার আগেও তিনি এলাকায় হাওরের ফসলরক্ষার দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন। নিহতের পরিবারের অভিযোগ, এই দুর্নীতিবাজ চক্রই আজাদ মিয়াকে সুনামগঞ্জ শহরের পিটিআই গেট সংলগ্ন এলাকায় হামলা চালায়। সন্ত্রাসী হামলায় মাথায় গুরুতর আঘাত পেয়ে ঘটনাস্থলেই লুটিয়ে পড়েন তিনি। তাকে তাৎক্ষণিকভাবে সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত ডাক্তার জরুরি চিকিৎসা দিয়ে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি রোববার রাত সাড়ে ৮টায় মারা যান।
এই ঘটনায় নিহত আজাদ মিয়ার ভাই আজিজ মিয়া বাদী হয়ে ৪ জনের নাম উল্লেখ করে ১২ জনকে আসামি করে সুনামগঞ্জ সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। মামলার ৪ আসামি হলেন – মোল্লাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নূরুল হক, জালালপুর গ্রামের হাজী আসক আলীর পুত্র উকিল আলী, উকিল আলীর পুত্র পাভেল মিয়া, হাসন আলীর পুত্র রিপন মিয়া। এদিকে সোমবার রাতেই ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে উকিল আলীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে উকিল আলী আজাদ মিয়ার সঙ্গে পূর্ববিরোধের বিষয়টি স্বীকার করলেও পিটিআইয়ের সামনে হামলার ঘটনায় জড়িত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করে বলে জানান সদর থানার ওসি মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ। তিনি বলেন, গ্রেফতারকৃত উকিল আলী হামলার দায় স্বীকার না করলেও এই ঘটনায় অন্য তিন আসামি জড়িত থাকতে পারে বলে জানান। ওসি আরো জানান, উকিল আলীকে সোমবার আদালতে হাজির করলে আদালত তাকে জেল হাজতে প্রেরণের নির্দেশ দেন।
এদিকে হত্যাকারীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি জানিয়েছেন নিহত আজাদের পরিবার, স্বজন, বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ হাওর বাঁচাও সুনামগঞ্জ বাঁচাও আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ। এদিকে, আজাদ মিয়া হত্যাকারীদের গ্রেফতার ও শাস্তির দাবিতে আগামীকাল বুধবার সকাল ১১টায় বেতগঞ্জ বাজারে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করবে হাওর বাঁচাও সুনামগঞ্জ বাঁচাও মোল্লাপাড়া ইউনিয়ন কমিটি ও সচেতন নাগরিক সমাজ।