বরুণদা বলতেন, ‘সৎ ও ভালো মানুষ ভোটে দাঁড়ায় না। সৎ ও ভালো মানুষকে লোকে ভালোবাসে বটে কিন্তু ভোট দিতে পছন্দ করে না। মোক্তার ভোটে দাঁড়িয়ে পাস করতে পারেনি।’ বরুণদার এই মোক্তার হলেন সুনামগঞ্জের বিখ্যাত আলফাত উদ্দিন মোক্তার। তাঁর একবার সুনামগঞ্জ পৌরসভার চেয়ারম্যান হওয়ার খেয়াল চেপেছিল এবং তাঁর বিরুদ্ধে এই শহরের অভিজাত শ্রেণির যে প্রচারটি সবচেয়ে প্রসিদ্ধি পেয়েছিল সেটি ছিল, তিনি চেয়ারম্যান হলে নাকি শহরের রিকসাওয়ালারা চেয়ারম্যান হয়ে যাবে। এতেই কেল্লা ফতে। তাঁর মতো দলমত নির্বিশেষে সর্বমহলে স্বীকৃত সৎ মানুষেরও পরাজয় হয়েছিল। অর্থাৎ নির্বাচনের রাজনীতি কোনও সুবুদ্ধি, সুচেতনা ও জনকল্যাণের নীতি সাপেক্ষ নয়। সার্বিক বিবেচনায় এমন একটি সমাজবাস্তবতা বাংলাদেশর নির্বাচন পরিস্থিতিকে নিয়ন্ত্রণ করছে, এখনও পর্যন্ত, তাতে কোনও সন্দেহ নেই। তারপরেও আমরা আশাবাদী। আমরা প্রত্যাশা করি আমাদের সমাজের নির্বাচন পদ্ধতি বদলে যাবে এবং নির্বাচনে জিতে আসতে হলে অর্থ, পেশি, রাজনীতিক পৃষ্ঠপোষকতার দরকার হবে না এবং অপেক্ষাকৃত সৎ, জনসেবক রাজনীতিবিদগণ জনপ্রতিনিধি হিসেবে প্রশাসনিক পদগুলোতে অধিষ্ঠিত হবেন। বিশেষ করে স্থানীয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে আক্ষরিক অর্থেই স্বচ্ছ নির্বাচন অনুষ্ঠানকে নিশ্চিত করতে হবে। অন্যথায় দেশে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা ও সমাজ গঠন কীছুতেই সম্ভব হবে না।
গত রোববার উপজেলা পরিষদ নির্বাচন হয়ে গেল। পত্রিকায় লেখা হয়েছে, নির্বাচন মোটামুটি শান্তিপূর্ণ হয়েছে। আমরা আশ্বস্ত হয়েছি এবং আশা করছি স্বনির্ভর প্রভাবমুক্ত উপজেলা প্রশাসন প্রতিষ্ঠা হবে। কিন্তু একজন রাজনীতিবিদ বলেছেন যে, একটি প্রশাসনিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে উপজেলায় নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিগণের তেমন ক্ষমতা নেই। সাংসদরা এই প্রতিষ্ঠানটিকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নিয়েছেন। ফলে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হিসেবে উপজেলায় নির্বাচিতদের কার্যকারিতা প্রকৃতপ্রস্তাবে অকার্যকর হয়ে গিয়ে নির্বাচনটিকে অর্থহীন করে তোলছে। তারপরও আমরা সঙ্গত কারণেই প্রত্যাশা করছি এবার উপজেলায় নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা উপজেলা প্রতিষ্ঠানের বাইরের প্রভাব থেকে নিজেদেরকে মুক্ত করে নিজেদের প্রশাসনিক কাজ চালাবেন এবং প্রকারান্তরে স্থানীয় সরকারকে স্বনির্ভর ও শক্তিশালী করে তোলবেন।
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলায় নির্বাচিত চেয়ারম্যান খায়রুল হুদা চপলকে জানাই বিজয়ের শুভেচ্ছা এবং সেই সঙ্গে জেলার সকল নির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানদের প্রতি রইলো বিজয়ের আনন্দ বিজড়িত লাল গোলাপ শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। সকলে ভালো থাকুন। সকলের মঙ্গল হোক। জয় বাংলা।