রাষ্ট্রের উচ্চমহল থেকে ইতিবাচক কথা অনেক শ্রবণ করেছেন এই দেশের মানুষ এবং এখনও শ্রবণ করছেন এবং শ্রবণ করা অব্যাহত আছে এবং শ্রবণ করার পর কোনওরূপ প্রতিক্রিয়া ব্যতিক্রম তাঁদের জীবন চলেছে, থেমে যায়নি, এবং তাঁদের জীবন উত্তরোত্তর সমস্যা বাড়ার প্রবণতা নিয়ে সমস্যা সংকুলই থেকেছে এবং সমস্যাসংকুলতার মধ্যে জীবন চালানোর জীবনযাপনে তাঁদের কোনও সমস্যা হয়নি।
নেতিবাচক কথা যে শ্রবণ করা হয়নি এমন নয়। তাও শ্রবণ করা হয়েছে মাঝেমধ্যেই। রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান তো একবার বলেছিলেন, রাজনীতিকে তিনি প্রব্লেম্যাটিক করে তোলবেন এবং তা তিনি করেছিলেনও। ইতিহাস তার সাক্ষী। কিন্তু যাঁরা ইতিবাচক রাজনীতির কথা বলেছিলেন তাঁরা হয় বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার চাপে ব্যর্থ হয়েছেন কিংবা সামর্থ্য থাকার পরও জনকল্যাণবিরোধী রাজনীতিক আদর্শের কারণেই কিংবা শ্রেণিস্বার্থের অনুরোধে জনকল্যাণে রাজনীতিকে সমর্পিত করতে পারেননি। কমিউনিস্ট রাজনীতিবিদেরা এই উপমহাদেশে সাম্যবাদী রাজনীতির সূত্রপাত করেছিলেন, সেই ১৯২০ সালে। কিন্তু তাঁরা শ্রেণিস্বার্থান্বেষী জনবিরোধী রাজনীতির তীব্র আক্রমণের শিকার হয়েছেন প্রতিনিয়ত এবং এখনও হচ্ছেন। তার প্রমাণ গতকাল সুনামগঞ্জ জেলা উদীচীর সম্মেলন হয়ে গেলো, তাতে জনগণের প্রতি প্রধান রাজনীতিক বার্তা ছিল, ‘ধর্মীয় মৌলবাদ ও সা¤্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম অব্যাহত রাখার প্রত্যয়’। ব্রিটিশ, পাকিস্তান, এমনকি বাংলাদেশ আমলেও সাম্যবাদী চিন্তকরা প্রতিহত ও হত হয়েছেন, হচ্ছেন এবং এখনও অবস্থা এমন যে, অনিবার্যভাবে হবেন। মুসলিম লীগ ক্ষমতায় যেতে পেরেছে কিন্তু কমিউনিস্টরা ক্ষমতায় যেতে পারেননি কোন সময়েই। সমাজ পরিবর্তনে তাঁদের রাজনীতির আদর্শ অবশ্যই ছিল ইতিবাচক, কোনও অর্থেই নেতিবাচক ছিল না। স্বাধীন বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু সাম্যবাদী নীতির গোড়াপত্তন করেছিলেন, সংবিধানে সন্নিবেশিত হয়েছিল সে নীতি, কিন্তু কার্যকর করা সম্ভব হয়নি ক্ষমতাসীন কারও পক্ষেই। সাম্যবাদী ধারণাকে সংবিধান থেকে উচ্ছেদ করা হয়েছিল, পুনরায় সন্নিবেশিত করা হয়েছে বটে, কিন্তু আর্থসামাজিক ব্যবস্থা রূপে কার্যত কার্যকর করা যাচ্ছে না। দেশের উন্নয়ন এগিয়ে চলেছে পুঁজিবাদী সড়ক ধরে। জনগণের মধ্যে শ্রেণিবৈষম্য বাড়ছে, বাড়ছে সম্পদের বৈষম্য এবং ভবিষ্যতের ইঙ্গিত করে বলা হচ্ছে, দরিদ্রদের কম খরচে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে হবে। এই দরিদ্রদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার অর্থ হলো ধনীদের পাশাপাশি গরিবদের অধিকার নিশ্চিত করা। এই প্রত্যয় বঙ্গবন্ধুঘোষিত সাম্যবাদী আদর্শের সম্পূর্ণ বিপরীত প্রত্যয়ের অনুসারী। প্রধানমন্ত্রীর দুর্নীতি, মাদক, সন্ত্রাসকে অর্থাৎ দুর্বৃত্তায়নকে শূন্যসহনশীলতা দেখানোর কালে আপাতত সাধারণ মানুষ রাজনীতির এটুকু ইতিবাচকতার প্রতি নির্ভরশীল হয়ে উঠছেন, নাই মামুর চেয়ে কানা মামু ভালো নীতিকে মেনে নিয়ে। মানুষ কেবল স্বাস্থ্যসেবা নয়, প্রতিটি মৌলিক চাহিদার ক্ষেত্রেই সাধ্যমতো সেবাপ্রাপ্তিকে নিশ্চিত করার একান্ত প্রত্যাশী।