1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
  3. [email protected] : wp-needuser : wp-needuser
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ০৮:০৭ পূর্বাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

ঘরশত্রু বিভীষণের কোনও দরকার নেই

  • আপডেট সময় শনিবার, ২ মার্চ, ২০১৯

নির্ধারিত সময়ে সুনামগঞ্জের ৩৭ হাওরে ৪০০ কিলোমিটার দীর্ঘ বোরো ফসলরক্ষা বাঁধের কাজ শেষ হয়নি। ২৮ ফেব্রুয়ারি নির্ধারিত সময় শেষ হয়ে গেছে এবং সরকারি হিসাব (বলা ভালো, পানি উন্নয়ন বোর্ডের হিসাব) মতে ৮৬ ভাগ, হাওরের সচেতন কৃষকমহলের মতে ৫০ ভাগের মতো, হাওর বাঁচাও সুনামগঞ্জ বাঁচাও আন্দোলনের মতে ৬০ ভাগের কম এবং পরিবেশ ও হাওর উন্নয়ন সংস্থার মতে ৭০ ভাগের মতো কাজ হয়েছে। যে যাই বলুন, সময় মতো কাজ হয়নি এবং এর ফলে ফসলহানির দুশ্চিন্তা নাছোড়বান্দার মতো কৃষকের পিছু ছাড়ছে না। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি হাওর বাঁচাও সুনামগঞ্জ বাঁচাও আন্দোলনের করা সংবাদ সম্মেলন থেকে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে যে, বাঁধের কাজে বিলম্বের কারণে ফসলহানি ঘটলে এর দায় সংশ্লিষ্টদের নিতে হবে।
কাজে বিলম্ব হয়েছে – তা সরকার নির্ধারিত সময়ে সমাপ্ত না হওয়ায় প্রমাণ হয়েছে, সেটাতে সন্দেহ করার কোনও অবকাশ কারও নেই। অভিজ্ঞমহল তো বটেই, সাধারণ মানুষও এ বিষয়ে নিশ্চিত যে, পাউবো’র দাখিল করা হিসাব কোনও যুক্তিতেই বিশ্বাসযোগ্য নয়, এটি সম্পূর্ণ প্রতারণাপূর্ণ। এটি যে একটি প্রতারণা তার স্পষ্ট প্রমাণ হলো হাওর বাঁচাও সুনামগঞ্জ বাঁচাও আন্দোলন, পরিবেশ ও হাওর উন্নয়ন সংস্থা এবং স্থানীয় কৃষকসমাজের দাখিল করা হিসাব। এই তিন তরফের হিসাব একটির সঙ্গে আর একটির মিল না থাকলেও এ হিসাবগুলো প্রত্যেকটিই প্রমাণ করে যে, পাউবো’র দাখিল করা হিসাব কোনও যুক্তিতেই মেনে নেওয়া যায় না, পাউবো’র হিসাবে কাজের পরিমাণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বাড়িয়ে দেখানো হয়েছে। তা ছাড়া, পাউবো’র বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে যে, সরকারের কাছে প্রস্তাবিত ফসলরক্ষা বাঁধের প্রকল্পের ভেতরে বাঁধের তালিকায় অপ্রয়োজনীয় বাঁধকে অন্তর্ভুক্ত করে দিয়ে বরাদ্দের টাকার পরিমাণ বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এই করে প্রকারান্তরে সরকারি অর্থ লুটের সহজ সড়ক তৈরি করে প্রকারান্তরে দুর্নীতিকে আমন্ত্রণ করা হয়েছে।
সমাজে শুভঙ্করের ফাঁকি বলে একটা কথা প্রচলিত আছে। এই শুভঙ্করের ফাঁকি কী, তা সকলের কাছে স্পষ্ট কি না জানা নেই। তবে যারা শুভঙ্করের ফাঁকির উত্তম উদাহরণ খোঁজছেন, তারা হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধের হিসাবটাকে একটি ভালো উদাহরণ হিসেবে ধরে নিতে পারেন। বাংলাদেশের মতো দেশগুলোকে সেই ঔপনিবেশিক আমল থেকেই দীর্ঘসূত্রিতার ফাঁদে ফেলে পিছিয়ে রাখার একটি কূটকৌশল প্রয়োগ হয়ে আসছে এবং সেটা সাধারণত করা হচ্ছে সংশ্লিষ্ট দেশটার প্রশাসনিক ক্ষেত্রে একটি করিতকর্মার বিপরীতে করিবকর্মা আমলাতান্ত্রিক শ্রেণি বসিয়ে রেখে, যাদেরকে বিশেষ প্রযতেœ তৈরি করা হয় এবং অতি পরিতাপের বিষয় যে, স্বাধীনোত্তর কালেও সে করিবকর্মাদের কোনও পরিবর্তন সাধিত হয়নি। তারা একদিকে দীর্ঘসূত্রিতার জনক ও অন্যদিকে হিসাবের সময় শুভঙ্করের ফাঁকি মারতেও ধীমান ওস্তাদ। সুতরাং ফসলরক্ষা বাঁধ তো কোন ছার, সময়মতো কোনও কাজই এখনও পর্যন্ত করা সম্ভব হয়ে উঠবে না বলে ধরে নেওয়া যায়। দীর্ঘসূত্রিতা সাধারণ মানুষের গা সহা হয়ে গেছে। কিন্তু যে দীর্ঘসূত্রিতা ভাত কেড়ে নেয়, সেটাকে কীছুতেই মেনে নেওয়া যায় না। মৃত্যুর বিনিময়ে দীর্ঘসূত্রিতাকে ক্রয় করার তো কোনও অর্থ হয় না, হতে পারে না। পাউবো সেই দীর্ঘসূত্রিতার প্রকৃষ্ট উত্তরাধিকার। সাধারণ মানুষের পক্ষ থেকে ২০১৭ সালে ফসলডুবির দুর্যোগের সময়ই দাবি উঠেছিল এই প্রতিষ্ঠানটিকে ফসলরক্ষা বাঁধের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়ার ও প্রকারান্তরে এর বিলুপ্তি সাধনের। সাধারণ মানুষ মনে করেন, ঘরশত্রু বিভীষণের কোনও দরকার নেই।
দীর্ঘসূত্রিতাই বলুন আর হিসাবে শুভঙ্করের ফাঁকির কথাই বলুন, কোনওটাই সাধারণ মানুষের কাম্য নয়। প্রতি বছর পাউবো সরকারি বরাদ্দ নিয়ে প্রকারান্তরে তছনছ করবে এবং হিসেবে শুভঙ্করের ফাঁক গলে পার পেয়ে যাবে, এমনটাই নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমাদের রাষ্ট্রের পরিচালকদের এই নিয়মটা পাল্টাতে হবে।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com