স্টাফ রিপোর্টার ::
সুনামগঞ্জের হাওরগুলোর ফসলরক্ষা বাঁধের সর্বশেষ পরিস্থিতি পর্যালোচনা বিষয়ক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের তোপের মুখে পড়েন পরিবেশ ও হাওর উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি কাসমির রেজাসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ। বৃহস্পতিবার দুপুরে জেলা শহরের একটি রেস্টুরেন্টে অনুষ্ঠিত এ সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্নোত্তর পর্বে সাংবাদিকদের নানা প্রশ্নবাণে জর্জরিত হন তারা।
কাসমির রেজা ফসলরক্ষা বাঁধের কাজের অগ্রগতি তুলে ধরে বলেন, হাওরের চলমান ফসলরক্ষা বাঁধে মাটি ফেলার কাজ সম্পন্ন হয়েছে ৮৫ ভাগ। স্লোপ, কম্পেকশন, ঘাস লাগানোসহ সার্বিকভাবে বাঁধের কাজ শেষ হয়েছে ৭০ ভাগ। এসময় কাসমির রেজা বলেন, পিআইসিরা এ পর্যন্ত ৩৫ থেকে ৪০ ভাগ বিল পেয়েছে। যার কারণে কাজের গতি ব্যাহত হচ্ছে। এভাবে তিনি লিখিত বক্তব্যে প্রশাসনের সঙ্গে সুর মিলিয়ে কথা বলেন। অথচ তিনি কৃষকের পক্ষে কাজ করছেন বলে দাবি করে থাকেন। তার এমন বক্তব্যে কৃষক ও কৃষক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ হতাশ হয়েছেন। কাসমির রেজা কর্তৃক এমন মনগড়া অগ্রগতি প্রতিবেদনের সমালোচনা করে ক্ষোভ প্রকাশ করেন স্থানীয় সাংবাদিকবৃন্দ।
সংবাদ সম্মেলনের প্রশ্নোত্তর পর্বে দৈনিক মানবকণ্ঠের সুনামগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি শাহজাহান চৌধুরী বলেন, বাঁধে মাটি ফেলা হলেই বাঁধ শত ভাগ কাজ হয় না। স্লোপ, কম্পেকশন, দুরমুজ ও ঘাস লাগানোর উপরে নির্ভর করে বাঁধের অগ্রগতির হার। আপনার লিখিত বক্তব্যে ৮৫ ভাগ মাটি ফেলার কথা বলা হলেও তা বাস্তবের সাথে সামঞ্জস্য নেই। কেননা আমাদের দেখা অনুযায়ী ২৪ ফেব্রুয়ারি কিছু কিছু বাঁধের কাজ শুরু হয়েছে। কাসমির রেজা এমন প্রশ্নে উত্তর না দিয়ে কৌশলে এড়িয়ে যান।
কাসমির রেজার অগ্রগতি প্রতিবেদনের সমালোচনা করে দৈনিক সুনামকণ্ঠের স্টাফ রিপোর্টার শহীদনুর আহমেদ বলেন, হাওর নিয়ে কাজ করছে হাওর বাঁচাও সুনামগঞ্জ বাঁচাও আন্দোলন। তাদের তথ্য অনুযায়ী হাওরে ফসলরক্ষা বাঁধের কাজ হয়েছে ৫০ থেকে ৬০ ভাগ। তাছাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ড দাবি করে আসছে ৭০ থেকে ৮০ ভাগ বাঁধের কাজ শেষ। আপনাদের সংগঠনের দেয়া তথ্যের সাথে পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যের মিল রয়েছে। তবে বাস্তবের সাথে এর মিল নেই। আপনাদের প্রতিবেদন কতটি প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করে করা হয়েছে তারও কোন উল্লেখ নেই। পিআইসি ও হাওরের নাম উল্লেখ না থাকায় তথ্যের সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়।
এ প্রশ্নের উত্তরে কাসমির রেজা বলেন, আমরা হাওর পরিদর্শন করেছি। আমাদের নিজেদের পরিদর্শন স্বেচ্ছাসেবকদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।
দৈনিক সুনামগঞ্জ সময়-এর সম্পাদক ও প্রকাশক সেলিম আহমদ বলেন, কিছু বাঁধ বালি দিয়ে করা হয়েছে। যা নিয়ম বহির্ভূত। পিআইসি গঠনের শুরু থেকে নানা অনিয়ম-দুর্নীতি অভিযোগ উঠে আসছিল। গত বছর পরিবেশ ও হাওর উন্নয়ন সংস্থা হাওরের বিভিন্ন ইস্যুতে মাঠে কর্মসূচি দিলেও এবার অনেকটা নীরব। সংগঠনের এই নীরবতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেন সাংবাদিক সেলিম।
এই প্রশ্নের উত্তরে কাসমির রেজা বলেন, আমরা মাঠে কর্মসূচি না দিলেও ভিন্নভাবে প্রশাসনের উপর চাপ প্রয়োগ করেছি।
সময় টেলিভিশনের সুনামগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি হিমাদ্রী শেখর ভদ্র বলেন, অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে কিছুদিন আগে তাহিরপুরে ৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। যাদের নুন আনতে পান্তা ফুরায়। এই সকল পিআইসির পিছনে প্রভাবশালী রয়েছে। পিআইসিরা নামে বাঁধের কাজ করলেও এর নেপথ্যে প্রভাবশালীরা। যা এই প্রতিবেদনে উঠে আসার কথা ছিল।
দৈনিক জালালাবাদের জেলা প্রতিনিধি জসীম উদ্দিন বলেন, প্রতিবেদনে সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই। প্রতিবেদনের মাধ্যমে এক ধরনের গোঁজামিল দেয়া হয়েছে। তাছাড়া কোন কোন পিআইসি পরিদর্শন করে এই তথ্য পাওয়া গেছে তা স্পষ্ট করা হয়নি। এই প্রশ্নের উত্তরে কাসমির রেজা বলেন, বাস্তবতায় সকল বাঁধ সরেজমিনে পরিদর্শন করা আমাদের পক্ষে সম্ভব না। তবে তার প্রতিবেদন শতভাগ সত্য বলে জানান তিনি।
এছাড়াও হাওরের বাঁধের কাজের ব্যাপারে পরিবেশ ও হাওর উন্নয়ন সংস্থার এমন তথ্যের সমালোচনা করতে দেখা গেছে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত অন্যান্য সাংবাদিকদের। উপস্থিত অনেক সাংবাদিক হাওর ও পরিবেশ উন্নয়ন সংস্থাকে ‘প্রশাসনের তোষামোদকারী সংগঠন’ হিসেবে আখ্যা দিয়ে প্রতিবেদনের সত্যতা নিয়ে সমালোচনা করেন।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ ও হাওর উন্নয়ন সংস্থার সাধারণ সম্পাদক পিযুষ পুরকায়স্থ টিটু, প্রচার সম্পাদক প্রভাষক মশিউর রহমান প্রমুখ।