স্টাফ রিপোর্টার ::
ঝুঁকিতে রয়েছে দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার খাই হাওর উপ-প্রকল্পের ৮নং পিআইসির বেদাখালি ভাঙ্গা। ২০১৭ সালে এই ভাঙ্গা দিয়ে খাই হাওরে পানি ঢুকে ফসল তলিয়ে যায়।
মঙ্গলবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ভাঙ্গাটিতে মাটি ফেলা হয়েছে নামমাত্র। ভাঙ্গার বড় বড় ফাটল এখনো দৃশমান রয়েছে। স্লোপ খাড়া হওয়ায় ভাঙ্গার মাটি ধসে গেছে। ভাঙ্গাকে টেকসই করতে বাঁশ, চাটাই, বস্তা দিয়ে আঁড় তৈরি করে মাটি ফেলার কথা থাকলেও তার কোনো আলামত দেখা যায়নি। ৯ লক্ষ ৩২ হাজার টাকা বরাদ্দে ৬৬৬ মিটার দীর্ঘ বাঁধের কিছু অংশে এখনও মাটি ফেলা হয়নি। নির্মিত বাঁধে স্লোপ, কম্পেকশন, দুরমুজ দেয়া হয়নি। তবে বাঁধে বাঁশ, বস্তা দিয়ে আঁড় তৈরি করে মাটি ফেলা হবে বলে দাবি করেন পিআইসি’র সভাপতি আব্দুল শহীদ। নির্দিষ্ট সময় পার হওয়ার পরও কবে নাগাদ কাজ করবেন এমন প্রশ্নে বুধবার মোবাইল ফোনে তিনি জানান, বৃষ্টির কারণে লেবাররা বাড়ি ফিরে যাচ্ছে। দিন একটু ভালো হলেই অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করা হবে।
এদিকে খাই হাওর উপ-প্রকল্পের ৯নং পিআইসি’র অধীনে প্রায় ৭ লক্ষ টাকা বরাদ্দে ৯০০ মিটার দীর্ঘ বাঁধের কাজ করছেন স্থানীয় ইউপি সদস্য সাইদুল ইসলাম। সাইদুল ইসলামের বাঁধে ৩০০ মিটারের উপরে মাটি ফেলার কাজ এখনো বাকি। বাঁধের দীর্ঘস্থান খালি থাকায় হাওর নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করছেন খাই হাওরপাড়ের কৃষকরা। তবে একদিনের মধ্যে বাঁধের বাকি স্থানে মাটি ফেলে দেয়া যাবে বলে জানান পিআইসি’র সভাপতি সাইদুল ইসলাম। বাঁধে যেটুকু মাটি ফেলা হয়েছে সেটুকুর স্লোপ ঠিক নেই। সামান্য বৃষ্টিতেই বাঁধের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
খাই হাওর উপ-প্রকল্পের ১১নং পিআইসি’র কাজের অবস্থা খুবই করুণ। পূর্বের দৃশ্যমান কাজে মাটির প্রলেপ দেয়া হয়েছে। বাঁধের গোড়া থেকে মাটি উত্তোলন করায় বাঁধ রয়েছে ঝুঁকিতে। ইতোমধ্যে বাঁধে অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে পিআইসির সেক্রেটারি আবুল খয়েরকে দুই দিনের কারাদ- দিয়েছেন উপজেলা বাঁধ বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।
খাই হাওরের বাঁধ নির্মাণকাজের এমন অবস্থায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় কৃষকসহ হাওর বাঁচাও সুনামগঞ্জ বাঁচাও আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ। হাওর বাঁচাও সুনামগঞ্জ বাঁচাও কেন্দ্রীয় কমিটির বাঁধ বিষয়ক সম্পাদক ও দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল হক মিলন বলেন, উপজেলার অধিকাংশ বাঁধ নির্মাণকাজ পরিদর্শন করেছি। এখনো অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভাঙ্গায় মাটি পড়েনি। অনেক বাঁধেই নামমাত্র মাটি ফেলা হয়েছে। কোনো নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা করছেন না সংশ্লিষ্ট পিআইসিরা। খাই হাওর উপ-প্রকল্পের বেদাখালি ভাঙ্গা ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। নদীতে পানি বাড়লে এই ঝুঁকিপূর্ণ ভাঙ্গা দিয়েই হাওরে পানি ঢোকার শঙ্কা রয়েছে। তাছাড়া এই হাওরের ৯নং ও ১১নং পিআইসি যাচ্ছেতাই করেছেন।
উপজেলা বাঁধ নির্মাণ বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সফিউল্লাহ বলেন, বাঁধ নির্মাণকাজ তদারকিতে প্রতিদিনই আমার মাঠে আছি। যেখানেই অনিয়ম পাচ্ছি সেখানেই ব্যবস্থা গ্রহণ করছি। বেদাখালি ভাঙ্গার ব্যাপারে তিনি বলেন, ৩ দিন আগে কাজ দেখে সংশ্লিষ্ট পিআইসি’র সভাপতিকে তাগাদা দিয়ে আসছি। আমি আবারো এ ব্যাপারে কথা বলছি।