বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো সম্প্রতি প্রকাশিত শ্রমশক্তি জরিপ অনুযায়ী ২০১৬-১৭ অর্থবছরে সারাদেশে বেকারের সংখ্যা ২৬ লাখ ৭৭ হাজার। এর মধ্যে ১০ লাখ ৪৩ হাজার শিক্ষিত তরুণ-তরুণী যারা উচ্চ মাধ্যমিক/¯স্নাতক/¯স্নাতকোত্তর পাস অর্থাৎ শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা প্রায় ৪০ শতাংশ। ২০১৩ ও ২০১০ সালের শ্রমশক্তি জরিপে বাংলাদেশে বেকারের সংখ্যা ২৬ লাখ দেখানো হয়েছিল। অর্থাৎ বেকারের সংখ্যা কমেনি, অপরিবর্তিতই রয়েছে। প্রতি বছর যে বিপুলসংখ্যক তরুণ উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে বের হচ্ছেন, তাদের সিংহভাগই থেকে যাচ্ছেন উপযুক্ত কর্মসংস্থানের বাইরে।
এই জরিপ যাই বলুক- বেসরকারি হিসাবে বেকারের সংখ্যা যে আরো বেশি হবে তাতে সন্দেহ নেই। বিভিন্ন জরিপে দেখা গেছে, দেশে বেকারদের বেশিরভাগ তরুণ এবং এদের বড় অংশ শিক্ষিত। দেশে শিক্ষিত বেকার বেড়ে যাওয়া বর্তমানে একটি বড় উদ্বেগের বিষয়। বর্তমানে বাংলাদেশে শিক্ষায় পাসের হার বেড়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বেড়েছে। বিনামূল্যে বই দেয়া, উপবৃত্তি প্রদানসহ সরকারের নেয়া নানা পদক্ষেপের কারণে ঝরেপড়া শিক্ষার্থীর সংখ্যাও কমে এসেছে। তার ফলে দেশে বেড়েছে শিক্ষিত জনসংখ্যাও। উচ্চশিক্ষা নিতে আসা শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য থাকে নির্ভর করার মতো কর্মসংস্থান। কিন্তু সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশ প্রতি বছর বেকার থেকে যাচ্ছেন। শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর প্রধান আকর্ষণ সরকারি চাকরি, যা সীমিত। এর বাইরে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানেও কর্মসংস্থানের সুযোগ আছে। কিন্তু বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ আশানুরূপ না হওয়ায় সেখানেও কর্মসংস্থানের সুযোগ কমে গেছে। উপযুক্ত কর্মসংস্থানের অভাবে দেশের একটি বড় অংশ হতাশায় ডুবে যাচ্ছে।
একটি দেশের উন্নতির প্রধান সোপান হলো সে দেশের জনসংখ্যাকে যোগ্যতা অনুযায়ী কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে দেওয়া। একমাত্র কর্মসংস্থানের মাধ্যমে দেশের মানুষ দেশের উন্নয়নে যথাযথ ভূমিকা রাখতে পারে। যেদেশে বেকারত্বের হার কর্মজীবী মানুষের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি সে দেশের উন্নয়ন অসম্ভব। তাই দেশের উন্নতির স্বার্থে বেকারদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। সরকার বিভিন্ন যুগোপযোগী উপায় বের করে বেকার সমস্যার সমাধান করতে পারে। উন্নত প্রযুক্তির যথাযথ ব্যবহার, কৃষিক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যবহার, তথ্যের অবাধ প্রবাহ বিদ্যমান রাখা, পর্যাপ্ত কর্মসংস্থানের সৃষ্টি, শিক্ষার সঠিক মান সুনিশ্চিত করা ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করে মানব স¤পদ উন্নয়নে অবদান রাখা সম্ভব বলে আমরা মনে করি। তাছাড়া কাজের বাজারের চাহিদার সঙ্গে শিক্ষাব্যবস্থাকেও সঙ্গতিপূর্ণ করা দরকার। কারিগরি ও বিশেষায়িত শিক্ষার ক্ষেত্রে অধিকতর জোর দেয়া উচিত। উন্নয়নের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে হলে জরুরিভিত্তিতে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির উদ্যোগ নিতেই হবে।