বিশেষ প্রতিনিধি ::
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী খায়রুল হুদা চপলের দলীয় মনোনয়ন বাতিল করে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোবারক হোসেনকে নতুন করে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে – এই বিষয়টি দিনভর গুঞ্জন ছিল। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ সর্বত্র ছিল সরব আলোচনা। এই সময়ে এসে শক্তিশালী প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল করে অপেক্ষাকৃত দুর্বল প্রার্থী বাছাই করায় কর্মীরাও নানা কথা বলতে শুরু করেন। তারা অনেকে নির্বাচনী বিধি নিয়েও প্রশ্ন তুলে জানান, এই সময়ে এসে মনোনয়ন বাতিলের আইনি সুযোগ নেই। সারাদিন দুই পক্ষের দৌড়ঝাঁপ ও নানা নাটকীয়তা শেষে সন্ধ্যায় কেন্দ্রীয় আ.লীগের একাধিক সূত্র জানিয়েছে আ.লীগ মনোনীত প্রার্থী খায়রুল হুদা চপলই দলীয় প্রার্থী থাকছেন। এই খবরে খায়রুল হুদা চপলের সমর্থকরা বুধবার সন্ধ্যায় শহরে আনন্দ মিছিল করে দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনাসহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ ও মনোনয়ন বোর্ডকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।
এদিকে পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচন পরিচালনা ম্যানুয়েল অনুযায়ী ১২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত নতুন করে মনোনয়ন দেওয়ার সুযোগ নেই বলে আইনজ্ঞরা জানিয়েছেন। মোবারক হোসেনকে নতুন করে মনোনয়ন দেওয়ার পর এই বিষয়টি আলোচনায় আসলে কেন্দ্রীয় আ.লীগের একটি দায়িত্বশীল সূত্রও বিব্রত হয়। পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচন পরিচালনা ম্যানুয়েল মতে ‘শর্ত থাকে যে, কোন রাজনৈতিক দল কোন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বা ভাইস চেয়ারম্যান পদে একাধিক ব্যক্তিকে মনোনয়ন প্রদান করিতে পারিবেনা, একাধিক ব্যক্তিকে মনোনয়ন প্রদান করিলে সংশ্লিষ্ট উপজেলা পরিষদে উক্ত দলের প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল বলিয়া গণ্য হইবে’। আরো শর্ত থাকে যে, সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দল উহার ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তির নাম, পদবি, নমুনা স্বাক্ষরসহ একটি পত্র তফসিল ঘোষণার ৭ দিনের মধ্যে রিটার্নিং অফিসারের নিকট এবং উক্ত পত্রের একটি অনুলিপি নির্বাচন কমিশনেও প্রেরণ করিবে’। তাই নির্বাচনী বিশ্লেষকদের মতে আইনগতভাবে ১২ ফেব্রুয়ারি এসে প্রার্থী বদলের আইনগত কোন সুযোগ নেই।
এদিকে জেলা আ.লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি নূরুল হুদা মুকুটের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার কাছে ভুল তথ্য দিয়ে প্রার্থী বদলের জোরালো অনুরোধ জানানোয় তিনি প্রার্থী বদলের নির্দেশনা দিয়েছিলেন বলে জানা গেছে। তার নির্দেশনার প্রেক্ষিতেই সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক খায়রুল হুদা চপলের মনোনয়ন বাতিল করে সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোবারক হোসেনকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়। অন্যদিকে গত ৭ ফেব্রুয়ারি দলীয় প্রার্থী হিসেবে খায়রুল হুদা চপলকে মনোনয়ন দেওয়ার পর তিনি নিয়মানুযায়ী দলীয় মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে বাছাইয়েও উত্তীর্ণ হন। কিন্তু গতকাল বুধবার সকালেই গুঞ্জন শুরু হয় নানা অভিযোগের প্রেক্ষিতে খায়রুল হুদা চপলের মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে। মোবারক হোসেনের দলীয় মনোনয়নপত্রের কপি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল করেন তার সমর্থকরা। এতে হতাশ হন খায়রুল হুদা চপলের সমর্থকরা। তাদের অনেকেই ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। এই খবরের পরেই খায়রুল হুদা চপলের পক্ষ থেকেও জোরালো তদবির শুরু করেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা। শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনা দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে খায়রুল হুদা চপলের প্রার্থিতা বহালের নির্দেশনা দেন বলে জানা গেছে। এই খবর সুনামগঞ্জে এসে পৌঁছার পরই খায়রুল হুদা চপলের সমর্থকরা জেলা শহরে আনন্দ মিছিল করে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন।
দ্বিতীয় দফায় দলীয় মনোনয়নপ্রাপ্ত মোবারক হোসেন বলেন, দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা আমাকে পুনঃমূল্যায়নের মাধ্যমে দলীয় মনোনয়ন দিয়েছেন।
খায়রুল হুদা চপল বলেন, আইনগতভাবে আমার অনুকূলেই প্রতীক বরাদ্দের কথা। আমি সেই লক্ষ্যে প্রচারণাও চালিয়ে যাচ্ছি। মাঝপথে একটি চক্র আমার মনোনয়ন বাতিলের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে। জননেত্রী শেখ হাসিনা আমার প্রার্থিতাই বহাল রেখেছেন।