1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
  3. [email protected] : wp-needuser : wp-needuser
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০৭:৩০ অপরাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

কালিয়াকোটা হাওর : বাঁধের কাজে সীমাহীন অনিয়ম

  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১৯


বাদল কৃষ্ণ দাস ::

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের দিরাই-শাল্লা উপজেলা অঞ্চলের বিশাল কালিয়াকোটা হাওরে ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণে সীমাহীন অনিয়ম-দুর্নীতি করছেন স্থানীয় পিআইসিরা। পানি উন্নয়ন বোর্ডের ধরে-বেঁধে দেওয়া নির্দেশনা মোটেই অনুসরণ করছেন না তারা।
হাওরপাড়ে স্থানীয় কৃষকরা অভিযোগ জানিয়ে বলেন, পিআইসিরা রাজনৈতিক দলের কিছু নেতার আশীর্বাদপুষ্ট থাকায় কেউই হাওর বাঁধ নীতিমালার কোন তোয়াক্কাই করছেন না। প্রতিটি বাঁধের একেবারে গোড়া থেকে এস্কেভেটর দিয়ে মাটি উত্তোলন করে বাঁধে ফেলছেন পিআইসিরা। গতকাল বুধবার শাল্লা উপজেলার কালিয়াকোটা অংশের বিভিন্ন হাওর বাঁধে গিয়ে বাঁধের ‘বিপজ্জনক অবস্থা’ দেখা গেছে। শাল্লা উপজেলার আটগাঁও ইউনিয়ন এলাকায় অবস্থিত ৪৬নং থেকে ৬০নং পর্যন্ত ১৩টি বাঁধে গিয়ে পিআইসি’র কাউকেই দেখা যায়নি। ভাড়া করা লোক দিয়ে বাঁধের কাজ চলছে। এই এলাকার বাঁধ পুরোটাই বালিময়। বালি মাটি দিয়ে বাঁধানো হচ্ছে পুরো বাঁধ। সে সব বাঁধের মাত্র ৫/৬ ফুট দূরত্ব থেকেই এস্কেভেটর দিয়ে মাটি উত্তোলন করা হচ্ছে।
৪৯নং পিআইসিতে গিয়ে পিআইসি সভাপতি কামরুল হাসানকে পাওয়া যায়নি। তার ভাই পরিচয়ে সাজিবুর রহমান নামে জনৈক ব্যক্তি বাঁধের কাজে নিয়োজিত বলে জানান। এই বাঁধে মাত্র ৫ ফুট দূরে থেকে মাটি উত্তোলন করা হচ্ছে। এসময় স্থানীয় রাহুতলা-শান্তিপুর গ্রামের কৃষক হুমায়ূন মিয়া, জালাল উদ্দিন অভিযোগ জানিয়ে বলেন, এতো কাছে থেকে মাটি উত্তোলনে বাধা দিলেও পিআইসি সংশ্লিষ্টরা কারো কথায় কর্ণপাত করছেন না। ৫০নং পিআইসিও এভাবেই মাটি উত্তোলন করেছেন। কোন বাঁধে মোটেই দুরমুজ দেওয়া হয়নি। অসমাপ্ত রয়েছে বাঁধের কাজ। একই সারিতে অবস্থিত ৫২, ৫৩, ৫৪, ৫৫, ৫৬, ৫৭, ৫৮, ৫৯, ৬০নং বাঁধের কাজের মান খুবই খারাপ। কোন বাঁধে দেওয়া হচ্ছে বালি মাটি ও কাদা মাটি। নির্দিষ্ট করে দেওয়া নীতিমালা অনুযায়ী বাঁধের দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, উচ্চতা, ঢাল কোন কিছুই মেনে চলছেন না পিআইসিরা।
৫২নং পিআইসি সভাপতি মো. কামরুজ্জামান-এর বাঁধে গিয়ে উক্ত কমিটির কাউকে পাওয়া যায়নি। খুব কাছে থেকে এস্কেভেটর দিয়ে মাটি উত্তোলন করছে তার কর্মীরা। এসময় বাঁধস্থল থেকে তার সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, খুব কাছে থেকে যে মাটি উত্তোলন করেছেন তা পুনরায় ভরাট করে দেবেন। কিন্তু মুখে অনিয়ম স্বীকার করলেও তখন পর্যন্ত একইভাবে অনিয়ম করেই মাটি উত্তোলন করে যাচ্ছেন। ৫৩নং, ৫৪নং পিআইসিও অনুরূপ কথা বলেছেন। কিন্তু অনিয়ম করেই যাচ্ছেন। এভাবে ৬০নং পিআইসি পর্যন্ত একই অবস্থা দেখা গেছে। এসময় উক্ত বাঁধের পাশে স্থানীয় গাগনি হাওরের ভাটী ইয়ারাবাজ গ্রামের কৃষক ইমদাদুল হক, নুরুল আমিন জানান, উক্ত পিআইসিরা রাজনৈতিক স্থানীয় নেতাদের আশীর্বাদপুষ্ট। তারা প্রভাবশালী বিধায় কাউকে তোয়াক্কা করেন না।
এসব অনিয়ম-দুর্নীতির ব্যাপারে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের শাল্লা উপজেলার এসও শমসের আলী মন্টুর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, এসব বাঁধের কাজ গত পরশু পরিদর্শন করে গেছেন। এবং পিআইসিদের বলেছেন বালিমটি ও কাদামাটি সরিয়ে ভালো মাটি দিয়ে বাঁধানো দেওয়ার জন্য। গত বছরেও পিআইসিরা এভাবে খুব কাছে থেকে মাটি উত্তোলন করেছিল, পরে সেগুলো ভরাট করে দেওয়া হয়েছিল। এবছরও ভরাট করে দেওয়া হবে। ওরা মাত্র ১৫ দিন হল বাঁধের কাজে আছেন। কাজ এখনও শেষ হয়নি। তারা সবাই একই অনিয়ম করছে। এগুলো সংশোধন করে দেওয়া হবে। আগামীকাল (আজ বৃহস্পতিবার) আমাদের অফিসিয়াল টিম যাবে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অপরদিকে কালিয়াকোটা দিরাই উপজেলার রফিনগর ইউনিয়ন এলাকার ২৫(ক), ২৬ (ক), ৪৫, ৪৫ (ক) সহ এই সারিতে প্রতিটি বাঁধের অবস্থা খুবই খারাপ। কেউই নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা করছেন না। এব্যাপারে দিরাই উপজেলার দায়িত্বে থাকা এসও রিপন আলীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, তিনি তার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড সুনামগঞ্জ একচেঞ্জ-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী খুশী মোহন সরকারকে সাথে নিয়ে গতকাল (মঙ্গলবার) এসব বাঁধ পরিদর্শন করেছেন। নির্বাহী প্রকৌশলী এসব বাঁধের কাজ অত্যন্ত খারাপ বলে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন এবং অনিয়মের সংশোধন না হলে পিআইসিদের বিল না দিতে বলেছেন বলে এসও রিপন মিয়া জানিয়েছেন।
দিরাই-শাল্লার কালিয়াকোটা হাওর বাঁধে অনিয়ম-দুর্নীতির ব্যাপারে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের সুনামগঞ্জ একচেঞ্জ-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী খুশী মোহন সরকারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আমি গতকাল এসব বাঁধ দেখে এসেছি। আমাদের মন্ত্রণালয়ের টিম এবং বোর্ডের টিম সবাই বিভিন্ন পয়েন্টে গিয়ে বাঁধ দেখছেন। পিআইসিদেরকে বাঁধের গোড়া থেকে মাটি কাটতে নিষেধ করা হয়েছে। কিন্তু তবুও তারা খুব কাছে থেকে মাটি কাটছে। আপনিও সংশ্লিষ্ট ইউএনও এবং এসওকে বলেন, তারা যেন এসব বিষয় জাস্টিফাই করেন।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com