সুনামকণ্ঠ ডেস্ক ::
পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান বলেছেন, দারিদ্র্য এখনও বাংলাদেশের প্রধান সমস্যা, এর থেকে উত্তরণের পর জীবন মানের উন্নয়ন নিয়ে কাজ করা হবে।
অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সুষম বণ্টন নিয়ে রোববার সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আয়োজিত এক সেমিনারে একথা বলেন তিনি।
রাজধানীর লেকশোর হোটেলে সিপিডি চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহানের সভাপতিত্বে সেমিনারে অন্যদের মধ্যে শিক্ষা উপমন্ত্রী মুহিবুল হাসান চৌধূরী নওফেল বক্তব্য দেন।
বিগত সরকারে অর্থ প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করে আসা এমএ মান্নান বলেন, “এখনও আমাদের মূল সমস্যা দারিদ্র্য। এই দারিদ্র্য আমাদের নেকড়ের মতো তাড়া করছে। দারিদ্র্য দূর করার পাশাপাশি মানুষের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত হওয়ার পর মান নিয়ে কাজ করব।” ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, সমতা ও জনগণের মৌলিক অধিকার পূরণের লক্ষ্য করে নিয়ে সরকার কাজ করছে বলে জানান তিনি।
পরিকল্পনামনন্ত্রী মান্নান বলেন, “দেশের মানুষের কাছে অর্থ গেলে, সবাই বিদ্যুৎ পেলে তারাই শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসহ মৌলিক অধিকারের মান বাড়াতে পারবে।”
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ ২০১৮ সালের হিসাব অনুযায়ী, দেশে সার্বিক দারিদ্র্যের হার ২১ দশমিক ৮ শতাংশ। আর অতি দারিদ্র্যের হার ১১ দশমিক ৩ শতাংশ। সংস্থাটির ২০১০ সালের খানা আয় ও ব্যয় জরিপ অনুযায়ী, তখন দেশের সার্বিক দারির্দ্যের হার ছিল সাড়ে ৩১ শতাংশ। বর্তমানে দেশে সরকারি সুযোগ-সুবিধা প্রাপ্ত জনগণের সংখ্যা বেড়েছে বলে জানান পরিকল্পনামন্ত্রী।
তিনি বলেন, “বর্তমানে দেশের ৯০ শতাংশের বেশি মানুষ সরকারি সুযোগ সুবিধা ভোগ করছেন। গ্রামে গিয়ে দেখুন কমিউনিটি ক্লিনিকসহ সরকারি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলো স্বাস্থ্য সেবা দিয়ে যাচ্ছে।”
দেশের মানুষের চিকিৎসা খরচ বাড়া নিয়ে তিনি বলেন, “আয় বাড়লে ব্যয় বাড়বে। তাই দেশে আয় বৃদ্ধির কারণে ব্যয় বাড়ছে।”
শিক্ষার মান ধীরে ধীরে বাড়বে বলে মনে করেন মন্ত্রী এমএ মান্নান।
মানস¤পন্ন শিক্ষার কথা বললেই ইংরেজি শিক্ষার কথা বলা হয় মন্তব্য করে এই ধারণার সমালোচনা করেন তিনি।
“চীন, কম্বোডিয়া ও থাইল্যান্ডসহ অনেক দেশেই ইংরেজি শিক্ষা দেওয়া হয় না। তারা ইংরেজিও বলে না। তারা কি উন্নয়ন করছে না?,” প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন মন্ত্রী।
বাংলা ভাষায়ও মানস¤পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করা সম্ভব বলে মন্তব্য করেন তিনি।
সেমিনারে শিক্ষা উপমন্ত্রী নওফেল বলেন, “আমাদের শিক্ষা ক্ষেত্রে গেল গেল একটা রব উঠেছে। কিন্তু এই রবের মধ্যেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে যে বিনিয়োগ করেছে, তা অতীতের কোনও সরকারই করেনি।”
তিনি দাবি করেন, “সুষম উন্নয়নের ক্ষেত্রে সারা বিশ্ব আমাদের প্রশংসা করছে। নারীর ক্ষমতায়ন ও সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী থেকে শুরু করে সকল ক্ষেত্রে সুষম উন্নয়নে আমরা কাজ করছি।”
নিজেদের দুর্বলতা থেকে উত্তরণের পথ খোঁজার পাশাপাশি সফলতাগুলোও সামনে আনা উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি।
সেমিনারে বক্তব্যে পাঠ্যবইয়ে সাম্প্রদায়িকতা ও বর্ণবাদের মতো বিষয় থাকা নিয়ে কথা বলেন গণস্বাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী।
তিনি বলেন, “আমাদের পাঠ্যপুস্তকে এখনো সাম্প্রদায়িক ও বর্ণবাদের মতো বিষয় আছে। আমরা বারবার মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, অসাম্প্রদায়িকতার কথা বলছি। কিন্তু এর কতোটা পাঠ্যবইয়ে উঠে আসছে? নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীকে পড়তে হয় তার গায়ের রং কালো হলে কোন জামা পরতে হবে। এটি বর্ণবাদের শিক্ষাই কি দিচ্ছে না।”
এসব বিষয়ে বিভিন্ন জায়গায় কথা বলার পাশাপাশি কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানিয়েও কোনো সুরাহা হয়নি বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে শিক্ষা উপমন্ত্রী নওফেল বলেন, “আমরা সাম্প্রদায়িকতার সঙ্গে কখনোই আপস করব না। সিলেবাসে এমন কিছু থাকলে অবশ্যই তা সংশোধন করা হবে।”
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে রেহমান সোবহান বলেন, “উন্নয়নের পরিমাপক হচ্ছে মানস¤পন্ন শিক্ষা। টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যেও তাই আছে। প্রধানমন্ত্রী শিক্ষার উন্নয়নে যেসব পদক্ষেপ নিচ্ছেন এগুলো পূরণের জন্য কমিটেড থাকতে হবে।”
আগের তুলনায় এখন দেশের স্বাস্থ্য খাতের অবস্থা খারাপ বলে মনে করেন তিনি।