আমাদের দেশে একটি বিখ্যাত প্রবাদ আছে, ‘সরকার কা মাল দরিয়া মে ঢাল’। অর্থাৎ সরকারি মালামালের প্রতি কোনও মায়াদয়া দেখানোর কোনও দরকার নেই। সরকারি মালামাল সংরক্ষণেরও কোনও প্রয়োজন নেই। সরকারের যারা কর্মচারি কিংবা আমলা তাঁদের প্রশাসনিক সংস্কৃতির লোকায়তিক বিশ্লেষণ অবগত হওয়া যায় এই প্রবাদ থেকে। এবং লোকসমাজে এই ধারণাও প্রচলিত আছে যে, ‘যা-কীছু রটে তা-কীছু বটে’ অর্থাৎ রটনার সবটা না হলেও কীছুটা হলেও সত্য। এই তো গেলো সরকারি সম্পদের প্রতি উপেক্ষা অবহেলার কথা। আমরা পত্রিকায় পড়েছি লক্ষ-কোটি টাকার সম্পদ জলের দরে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে, আদমজি জোট মিল তার জলজ্যান্ত প্রমাণ। সরকারি মাল কেবল নয় সরকারি কাজও উপেক্ষা-অবহেলার শিকার হয়। দিনের পর দিন, সপ্তাহের পর সপ্তাহ, মাসের পর মাস, বছরের পর বছর কাজ আটকে থাকে করার অপেক্ষা কিংবা করা কাজ ছাড় করার অপেক্ষায়, অর্থাৎ করা কাজকে করা হয়নি করে রেখে দিয়ে। কাজটা যার তাকে বলা হয় কাজটি হয়নি, অর্থাৎ টাকা না দিলে হবে না। উপরি কামাই না হলে কোনও কাজই হয় না। এই কর্মপ্রক্রিয়া লোকের কাছে ‘লাল ফিতার দৌরাত্ম্য’ বলে বিশেষভাবে পরিচিত। সরকারি কার্যালয়গুলোতে করিবকর্মাদের আশ্চর্য সৃষ্টি এই দীর্ঘসূত্রিতার খবর কেউ রাখে না, প্রতিবিধিৎসাপ্রববণ কোনও নজরদারি নেই। মান্ধাতার আমল থেকে এই প্রক্রিয়া বহাল তবিয়তেই আছে। সরকারি কার্যালয়গুলোতে কাজের প্রতি এই উপেক্ষাকেই বুদ্ধিজীবীরা বলেছেন দীর্ঘসূত্রিতা। সরকারের প্রতিটি প্রশাসনিক কার্যালয়ে কাজের বেলাতে এই উপেক্ষা ও অবহেলার চর্চা চালু আছে আমাদের দেশে, এই সত্যটি স্বাভাবিক বুদ্ধিসম্পন্ন কেউ-ই অস্বীকার করেন না। বর্তমান সরকার উত্তাধিকারসূত্রেই এই দীর্ঘসূত্রিতার আমলাতান্ত্রিক এই প্রপঞ্চটি লাভ করেছে। এই অশুভ প্রবণতার বিরুদ্ধে তৎপর হওয়া এখনই জরুরি। তা না হলে সরকার ঘোষিত উন্নয়নের অগ্রযাত্রা ব্যাহত হবে, অনিবার্যভাবে। ভুলে গেলে চলবে না, এই দীর্ঘসূত্রিতা সমাজ উন্নয়নের শত্রু, সভ্যতার উন্নয়নের শত্রু, সকলপ্রকার অগ্রগতির শত্রু। এই শত্রুকে অবশ্যই রুখতে হবে, যে-কোনও মূল্যে। একজন পরিকল্পনা মন্ত্রী এমএ মান্নান ঠিকই হৃদঙ্গম করেছেন, দেশের উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হলে কাজের গতি বাড়াতে হবে। কাজের ক্ষেত্রে দীর্ঘসূত্রিতার চর্চা আমাদের দেশের পশ্চাদপদতার একটি অন্যতম কারণ। তাই দেশের একজন মন্ত্রী বলেন, ‘আমার টেবিলে ফাইল আটকে থাকবে না।’ মন্ত্রী হিসেবে তিনি করিবকর্মা হতে চান না, দীর্ঘসূত্রিতাকে তিনি পরিহার করার ঘোষণা দিয়েছেন। ফাইল আটকে না রেখে তিনি ‘অন্য কর্মকর্তাদের কাছে’ দেরি না করার ‘বার্তা’ পৌঁছে দিতে চান। আসল কথা দেশের উন্নয়নের নিশ্চয়তা বিধান ও উন্নতির লক্ষ্যমাত্র অর্জনের জন্য কাজের গতি বাড়ানোর কোনও বিকল্প নেই, হতে পরে না।
আমাদের প্রিয় এই মন্ত্রীকে আমরা অভিনন্দন জানাই, তাঁর এই সুকর্মে নিজেকে নিয়োজিত করার জন্য। তিনি সাফল্য অর্জন করুন, এই কামনা করি। তাঁর মন্ত্রণালয়টির কাজের গতি বাড়–ক। দেশের উন্নয়নের গতি ত্বরান্বিত হোক। তাঁকে অনুসরণ করে লাল ফিতার দৌরাত্ম্য থেকে রেহাই পাক দেশ ও জাতি।