1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
  3. [email protected] : wp-needuser : wp-needuser
মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১১:৩২ অপরাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

ভাষার মাস ফেব্রুয়ারি : সুখেন্দু সেন

  • আপডেট সময় রবিবার, ৩ ফেব্রুয়ারী, ২০১৯

দিনপঞ্জির কিছু তারিখ, মাস, সন আমাদের ইতিহাস-ঐতিহ্য আবেগ-অনুভূতির সাথে এমনভাবে জড়িয়ে আছে, এ থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া সম্ভব নয়। আর নিতান্তই যদি সে বিচ্ছিন্নতা ঘটে তবে জাতি হিসাবে আমাদের অস্তিত্বই বিপন্ন হয়। এ তারিখগুলো কেবল সৌরবর্ষের কাল নির্ণায়কই নয়, বাঙালির ইতিহাসের ঘূর্ণিবাঁকে এক একটি আলোক সংকেত। জাতির ক্রান্তিকাল অতিক্রমণ, উত্তরণ ও অর্জনের বিজয় চিহ্ন। বারবার ফিরে আসে তাবৎ ব্যঞ্জনায়- ২১, ১৬, ২৬। ফেব্রুয়ারি, ডিসেম্বর, মার্চ। বায়ান্ন, একাত্তর। সেতো একই চেতনার যোগসূত্রে দ্রোহ, ক্ষোভ, প্রতিবাদ, প্রতিরোধ, অশ্রু-রক্তের স্পর্শ গৌরবে আপন ঔজ্জ্বল্যে দীপিত।
বস্তুত একুশ বললেই আর কোন প্রশ্ন বা দ্বিতীয় জিজ্ঞাসার অপেক্ষা না করেই অন্তরের অন্তঃস্থল জানান দিয়ে যায়Ñ সন ১৯৫২, মাস ফেব্রুয়ারি, দিবস একুশে। মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষায় বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দেয়ার সেই মাহেন্দ্রক্ষণে জন্ম নেয়া এক রক্তাক্ত প্রতিজ্ঞা। নিজেকে চেনার। সহ¯্র বছরের সহ¯্র যোজন পরিব্রাজন শেষে শত খোলস উন্মোচিত করে, অচলায়তনের দেয়াল ভেঙে বাঙালির ঘরে ফেরা। একুশ আমাদের জাতিসত্বা সন্ধানের রক্তিম প্রতীক। এই প্রতীকী মহান সত্যই বাঙালির জাতি রাষ্ট্র গঠনের অগ্রবীজ।
ভাষার মাস ফেব্রুয়ারি। অলিখিত প্রথায় পুরো ফেব্রুয়ারি মাসই ভাষা আন্দোলনের শহীদদের প্রতি উৎসর্গীকৃত। প্রতিদিনই কোন না কোন আয়োজনে স্মরণ করা হয় অমর শহীদদের। আলোচনা, সেমিনার, সভা-সমিতি, বক্তৃতা-বিবৃতিতে নানাভাবে মূল্যায়িত হয় একুশের চেতনা। সংবাদপত্রে থাকে বিশেষ কলাম। ভাষা সম্পৃক্ত থরথর আবেগ হতে থাকে তীব্রতর। কবিতা-সঙ্গীতে জাগে প্রাণের জোয়ার। ২৮ দিনে কয়েক হাজার বই প্রকাশিত হয়ে আমাদের সাহিত্য ভা-ার হয়তো ফুলে ফেঁপে ওঠে। বইমেলায় উপচে পড়া ভিড়। মাসজুড়ে সাংস্কৃতিক পরিবেশের ঝিরঝিরে হাওয়ায় অনুরণিত হতে থাকে “আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙ্গানো একুশে ফেব্রুয়ারি’র আকুল করা সুর। শহীদ স্মৃতি বা একুশের চেতনা কিংবা ভাষা সচেতনতা যতটুকু না হৃদয়ে ধারণ করা হয় তার চেয়ে বেশি প্রকাশিত হয় সাজসজ্জা পোষাক-পরিচ্ছদের বাহারী সমারোহে। একুশের ভোরে নগ্ন পদে প্রভাতফেরী ক্রমে অপসৃয়মান হলেও শহীদ মিনারে নামে লক্ষ মানুষের ঢল। আর শহীদ বেদীতে পুষ্পার্ঘ্যে শ্রদ্ধা নিবেদন তো হয়ে আছে বাঙালির নিজস্ব সংস্কৃতির অঙ্গ, যা এখন বিশ্বসংস্কৃতিরও অনুষঙ্গ হয়ে উঠছে।
তবু প্রশ্ন থেকে যায়, যে চেতনা ও প্রত্যয়ে বায়ান্ন’র একুশে ফেব্রুয়ারি, সাড়ে ছয় দশক পেরিয়ে গেলেও আর একাত্তরে স্বাধীনতার প্রায় পঞ্চাশ বছরের কাছাকাছি এসেও কি রক্ত প্লাবনের পলিল মৃত্তিকায় সে চেতনার শেকড় বিস্তৃতি হয়েছে? মাতৃভাষা কি মুক্তি পেয়েছে? বাংলা কি সকলের ভাষা হয়ে উঠতে পেরেছে? সর্বস্তরে মাতৃভাষার প্রচলন কি সম্ভব হয়েছে? শিক্ষা কি সকলের জন্য সমানভাবে দ্বার উন্মুক্ত রেখেছে। শুদ্ধভাবে বাংলা লিখতে ও বলতে পারি ক’জন। শিক্ষার মান নিয়ে কোন বিতর্কে না গিয়েও বলতে পারি প্রকৃত অর্থে আমরা আজো শিক্ষিত হয়ে উঠতে পারিনি। আর সংস্কৃতি; সেতো আরো ব্যপ্ত, আরো জরুরি। নৃত্য, গীত, কবিতা শিল্পকলাই সাংস্কৃতিক উন্নয়নের মাপকাঠি নয়। আমরা কোন জীবনাচারে অভ্যস্ত সেটিই বিবেচ্য। সংস্কৃতির স্তর দেখে মনুষ্যত্বের স্তর জানা যায়। মানব জাতি সংস্কৃতি দিয়েই তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব পেয়েছে। অন্য প্রাণীর তা নেই।
আত্মজিজ্ঞাসায় জেনে নেয়া আবশ্যক, শিক্ষা, শিক্ষাঙ্গন, সামাজিক, মানবিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক – সংস্কৃতির কোন স্তরে আমাদের অবস্থান। গ্লানি স্বীকার করেই মেনে নিতে হয়, উন্নত সংস্কৃতি চর্চায় উন্নত জাতি হিসাবে আমাদের অবস্থান অমলিন নয়। বিশ্বের বুকে যে জাতির রয়েছে ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষায় আত্মদানের অনন্য ইতিহাস, স্বাধীনতার জন্য যাদের অপরিমেয় আত্মদানের অতুলনীয় গৌরব সে জাতির জীবন স্তরের অধঃপতন কেবল গ্লানি নয়Ñ পাপ। একুশ আজো ডাক দিয়ে যায়। বারবার তাই ফিরে আসা চেতনার মর্মমূল প্রত্যয়ী সে একুশের কাছে। একুশতো সকল সম্ভাবনারও প্রতীক। এবারের ফেব্রুয়ারিতে থাকুক সে প্রত্যয় আর সম্ভাবনার তাগিদ।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com