1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
  3. [email protected] : wp-needuser : wp-needuser
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ০৬:৪৮ পূর্বাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

অশুভ চক্রের বিরুদ্ধে আওয়াজ উঠছে

  • আপডেট সময় শনিবার, ২ ফেব্রুয়ারী, ২০১৯

গতকালের দৈনিক সুনামকণ্ঠের একটি সংবাদশিরোনাম ছিল, ‘স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ১১ খাতে দুর্নীতি খুঁজে পেয়েছে দুদক’ এবং অন্য একটি দৈনিকের একটি সংবাদশিরোনাম ছিল, ‘কর্তারা ঘুষ না খেলে ছোটরাও খেতে পারবে না’। এই দু’টি সংবাদশিরোনামের মধ্যে একটি অন্তর্গত সামঞ্জস্য আছে, সেটা হৃদয়ঙ্গম করতে কোনও বিশেষ গবেষণার প্রয়োজন পড়ে না, কিংবা বিশেষ ধরনের বাড়তি বোধবুদ্ধিরও অধিকারী হতে হয় না। কিন্তু এই ঘুষের বিষয়টি আমাদের সমাজে এতোটাই পরিচিত ও ‘ওপেন সিক্রেট’-এর মতো ‘গোপন সম্মান’-এর বিষয় যে, অনেক লোক কন্যার জন্য বর খুঁজতে গিয়ে আগে সন্ধান নেয় চাকুরে বরের ‘উপরি আয়’ আছে কি-না। চিহ্নিত কোনও ঘুষখোরকে সমাজে কোথাও অপাংক্তেয় করা হয়েছে, এমন কোনও ঘটনার, বোধ করি, কোনও দৃষ্টান্ত খুঁজে পাওয়া যাবে না, এই দেশে। অসামাজিক কাজের জন্য কাউকে একঘরে করার দৃষ্টান্ত সহজেই পাওয়া যেতে পারে কিন্তু ঘুষগ্রহণের দায়ে কাউকে সামাজিকভাবে একঘরে করা হয়েছে তার একটিও উদাহরণও পাওয়া যাবে না। বরং ঘুষখোরের অলক্ষে ‘পাছে লোকে কিছু বলে’র মতো পরনিন্দার কর্মটি ঘুষখোরের উদ্দেশ্যে যথারীতি সম্পন্ন করে লোকেরা এবং প্রকারান্তরে এই করে এই সব ঘুষখোরের প্রতি একধরনের সমীহ তাদের অন্তরে পোষণ করে থাকে। প্রকৃতপ্রস্তাবে ঘুষখোরকে সম্মানপ্রদর্শনই আমাদের সামাজিক চর্চার একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ।
সংবাদে বলা হয়েছে, ‘সুন্দর বাংলাদেশ গড়তে অফিসের বড় কর্তাদের দুর্নীতি মুক্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় (এলজিইডি) মন্ত্রী তাজুল ইসলাম। বলেছেন, ‘অফিসের বড় স্যার যদি ঘুষ থেকে বিরত থাকেন, তাহলে ছোট সাহেবরা খেতে পারবেন না।’ মন্ত্রীকে তাঁর অন্তরে ‘সুন্দর বাংলাদেশ’ গড়ার স্বপ্ন লালনের জন্য অসংখ্য অসংখ্য ধন্যবাদ। তাঁর মুখে ফুলচন্দন পড়–ক। কিন্তু আমরা জানি, বড় ও ছোট কর্তারার চক্র তৈরি করে তবেই ঘুষ খান।
ইতিহাস সাক্ষী, বঙ্গবন্ধু ভুল করেননি। তাঁর কোনও অপরাধ ছিল না। কিন্তু তাঁকে হত্যা করা হয়েছিল তাঁর বুকে ‘সুন্দর বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন’ ছিল বলে। ২০০৪ সালে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার ওপর গ্রেনেড হামলা করা হয়েছিল, দৈবক্রমে তিনি রক্ষা পেয়েছেন। দশ ট্রাক অস্ত্র এসেছিল। কোটি কোটি টাকা প্রতিনিয়ত পাচার হয়ে যাচ্ছে দেশ থেকে। হলি আর্টিজেন হামলা হয়েছে। বছরের শুরুর দিনে শিক্ষার্থীদের হাতে এ দেশে কেউ না কেউ বই দিতে চায় না, শিক্ষাবোর্ডের কাগজের গুদাম পুড়িয়ে দিয়ে পরিকল্পনাটি ভেস্তে দিতে চেয়েছিল। ‘সুন্দর বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন’-এর বিপরীতে অশুভ কর্মকা-ের এমন হাজারটা উদাহরণ দেওয়া যায়। আসলে বলতে চাই, একধরনের অশুভ শক্তি কার্যকর আছে আমাদের সমাজ, দেশ ও রাষ্ট্রের ভেতরে। বিভিন্ন স্তরে ঘাপটি মেরে অশুভ চক্রের সদস্যরা বসে আছে। এ দেশে মেধার জোরে চাকরি কেউ পায় না, চাকরি পায় টাকার জোরে। অশুভ চক্রের সদস্যরা প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে সেটা নিশ্চিত করে। সৃজনশীলরা এখানে বেকার হয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়ায় আর মেধাহীনরা চাকরি পেয়ে ঘুষের রাজত্ব কায়েম করে, ঘুষ খাওয়া ছাড়া সৃজনশীল কোনও কাজ তারা করে না। মন্ত্রণালয়ের যে-আরদালি লক্ষ টাকার বিনিময়ে চাকরি পেয়েছে সে ঘুষ খাবে না তো কী করবে? যে-পুলিশকে চাকরি পেতে আগেই জমিজামা, ঘরের ঘটিবাটি বিক্রি করে, সুদে টাকা ধার করে টাকা জোগার করে ঘুষের টাকা পরিশোধ করতে হয়েছে, চাকরি পেয়ে সে-পুলিশের সৎ হওয়ার কোনওই প্রশ্ন উঠে না।
এখানে নিয়মমাফিক কোনও কাজ হয় না, কাজ করাকে পণ্য বানিয়ে সকলেই বিক্রি করার জন্য বসে আছে। মানুষের মৌলিক অধিকারগুলো, যে-অধিকারগুলো মানুষকে প্রদানের তাগিদে রাষ্ট্র একটি প্রশাসনিক ব্যবস্থা করেছে, রাষ্ট্রের নির্দিষ্ট কীছু নাগরিককে নিয়োগ করেছে সে-গুলো যথাযথ ব্যক্তিকে দেওয়ার জন্য এবং এই নিয়োগের বিপরীতে বেতন প্রদানের ব্যবস্থা করেছে। মানুষের এই মৌলিক অধিকারকে খর্ব করার অধিকার কারও নেই। কিন্তু আমাদের দেশে মানুষের প্রাপ্য সেই মৌলিক অধিকার প্রতিনিয়ত উপেক্ষিত, বিঘিœত ও লঙ্ঘিত হচ্ছে। এক শ্রেণির মানুষ অন্যায়ভাবে সাধারণ মানুষের মৌলিক অধিকারকে বাজারের সবজির মতো পণ্য বানিয়ে বিক্রি করছে। এটি একটি অশুভ চক্র, সামাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে এই চক্রের সদস্যরা ঘাপটি মেরে আছে, রক্তের কণায় ছড়িয়ে পড়া কর্কটবীজের (ক্যানসার) মতো। সংঘবদ্ধ এই চক্রকে প্রতিরোধ করা চাট্টিখানি কথা নয়। কিন্তু তারপরও করতে হবে। অন্যথায় একজন মন্ত্রীর সদিচ্ছা কিংবা অন্তরের স্বপ্ন কেবল সদিচ্ছা বা স্বপ্নই থেকে যাবে, কার্যত কোনও সামাজিক বাস্তবতা হয়ে দেখা দেবে না। একজন মন্ত্রী যখন বলেন, ‘কর্তারা ঘুষ না খেলে ছোটরাও খেতে পারবে না’ তখন আমরা অন্তত আশ্বস্ত হই এবং ভাবি, অশুভ চক্রের বিরুদ্ধে আওয়াজ উঠছে।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com