1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
  3. [email protected] : wp-needuser : wp-needuser
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০৭:৪২ অপরাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

ইজারাপ্রথার বদলে প্রযুক্তিনির্ভর হাওরব্যবস্থার প্রবর্তন চাই

  • আপডেট সময় শুক্রবার, ১ ফেব্রুয়ারী, ২০১৯

‘মোহনপুরে বিল সেচে মৎস্য আহরণ।’ এই বাক্যটি একটি সংবাদপ্রতিবেদনের শিরোনাম। গতকালের দৈনিক সুনামকণ্ঠের প্রথম পাতায় প্রতিবেদনটি করা হয়েছে। এধরনের প্রতিবেদন গণমাধ্যমে কতো দিন ধরে কতোবার করা হয়েছে, তার কোনও ইয়াত্তা নেই। বোধ করি, কারও কাছে এর কোনও পরিসংখ্যানও নেই। পরিসংখ্যান করতে গেলে পিছিয়ে যেতে হবে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ারও আগেকার সময়ে, কম করে হলেও পঞ্চাশ বছর তা হবেই। তখনই দেখা যেতো গ্রামগ্রামান্তরের কোনও কোনও স্থানে ছোট ডোবা, বিলমতো ছোট জলাধার সিঞ্চন করে মাছ ধরতে। তারই ধারাবাহিকতায় এখন ইজারাদাররা ইজারার নীতিমালা লঙ্ঘন করে বলতে গেলে বড়সড় বিল শুকিয়েই মাছ ধরছে, তার আরও অর্থ চাই। বিল ইজারার ব্যবসায় এমনিতেই লক্ষ লক্ষ টাকা লাভ হয়। তাও সামান্য ক’টি টাকার জন্য বিল সিঞ্চন করে মাছ মেরে প্রকারান্তরে মাছের প্রজাতি বিলুপ্তায়নের প্রক্রিয়াকে জোরদার করছে ইজারাদাররা বা যারাই এই কাজ করছে তারা। এরকম বিল সিঞ্চন করে মাছ মারা স্পষ্টতই একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। কিন্তু আইন কার্যকর হচ্ছে না। কোনও না কোনও কারণে আইন প্রয়োগে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অপারগতা কিংবা শৈথিল্য আছে তাতে কোনও সন্দেহ নেই।
জলাধার শুকিয়ে মাছ ধরা, প্রকৃতির উপর এই অবিমৃষ্যকর অত্যাচার বলতে গেলে অনেক পুরনো এবং এই পদ্ধতিটি মাছের বংশনিধনে খুব কার্যকর একটি প্রক্রিয়া। এর ফলে বিভিন্ন প্রকারের মাছের প্রজাতি ক্রমে বিলুপ্ত হচ্ছে। পরিবেশবিজ্ঞানীরা দিন দিন শঙ্কিত হচ্ছেন এবং হুঁশিয়ারি উচ্চারণ অব্যাহত রেখেছেন। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কিংবা প্রশাসন কর্ণপাত করছেন না, জনসমাজে সচেতনতা তৈরি হচ্ছে না, প্রকারান্তরে প্রাকৃতিক ভারসাম্যহীনতার শিকারে পরিণত হচ্ছে প্রাকৃতিক প্রতিবেশ। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে মানবপ্রজাতির মৎস্য-অমিষ আহরণের উৎস।
আমাদের মনে হয়, যৎসামান্য রাজস্ব লাভের জন্য এই বিশাল মাত্রার ক্ষতিকর জলমহাল ইজারার প্রক্রিয়াটি বন্ধ করে দেওয়াই অধিক যুক্তিযুক্ত। প্রযুক্তির অপার সম্ভাবনার যুগে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়কে হাওরের জলাধারগুলোকে নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে। হাওরাঞ্চলের বিল-জলাধারগুলোকে পর্যটনশিল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত করে এমন কোনও প্রযুক্তির উদ্ভাবন করা উচিত যে-প্রযুক্তি কিংবা প্রকল্প জলমহাল ইজারা দিয়ে যে-পরিমাণ রাজস্ব পাওয়া যায় তার চেয়ে শতগুণ বেশি পরিমাণে রাজস্ব পাওয়াকে নিশ্চিত করতে পারে। যথোপযুক্তভাবে প্রযুক্তি ও পরিবেশের বিজ্ঞানভিত্তিক সমন্বয় সাধন করে প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে পারলে মান্ধাতার আমলের ইজারাপ্রথা বাতিল করে তার স্থলে আধুনিক, যাকে বলে, প্রযুক্তিনির্ভর একটি ব্যবস্থা প্রবর্তন করতে পারা একবারে অসম্ভব নয়।
সংবাদ প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে, ‘জলমহাল নীতিমালাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার মোহনপুর ইউনিয়নের নলদিঘা বন্দের কোণা গ্রুপ জলমহাল সেচে মাছ ধরছে ইজারাদারের লোকজন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার গত মঙ্গলবার ইজারাদারকে লিখিত নোটিশ দিলেও সে তা মানছে না।’ বলতে কোনও দ্বিধা নেই, বিচিত্র এই বাংলাদেশ। এদেশে ৫০০০ (পাঁচ হাজার) টাকার ঋণখেলাপি কৃষকের কোমরে দড়ি পরিয়ে টানতে টানেতে পুলিশ তাকে কারাগারে পুরে দেয়। কিন্তু পাঁচ হাজার কোটি টাকার ঋণখেলাপি দিব্যি পুলিশের নাকের ডগায় বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়ায়, পুলিশের নজরে পড়ে না। এ দেশে প্রশাসনের চেয়ে এইসব ধনী ঋণখেলাপি কিংবা প্রভাবশালী ইজারাদার এমনই শক্তিধর যে, তারা প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখায়। তার প্রতিবিধান চাই, সরাসরি প্রতিকার চাই। আসলে এখন সময় এসেছে গণজাগরণের। এইসব অন্যায় অত্যাচারের বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধভাবে জনগণকে উঠে দাঁড়াতে হবে। প্রকৃতির ক্ষতি হয় এমনসব কর্মকা- অচিরেই বন্ধ করতে হবে। মানুষকে রক্ষার জন্য প্রকৃতিকে রক্ষার আওয়াজ তোলতে হবে, দিকে দিকে। যেমন হাওররক্ষাবাঁধ নির্মাণে দুর্নীতি প্রতিরোধের জন্যে আওয়াজ তোলেছে ‘হাওর বাঁচাও সুনামগঞ্জ বাঁচাও অন্দোলন’। এই আন্দোলনের সঙ্গে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একাত্ম হয়েছেন, প্রশাসন একাত্ম হতে বাধ্য হয়েছে। হাওরপাড়ের মানুষের উচিত হাওরের মৎস্যসম্পদ রক্ষার্থে, হাওরের প্রকৃতিকে রক্ষা করতে সম্মিলিতভাবে দুর্বৃত্ত ইজারাদারদের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলা এবং প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট করার শাস্তি দাবি করা।
না বলে পারছি না, একটি বিষয় বোধাতীত রয়ে গেলো। যে-নির্বাহী অফিসার নোটিশ প্রদান করেছেন ইজারাদারকে, বিলে জলসিঞ্চন বন্ধ করার জন্যে, তিনি কেন নোটিশের বদলে গ্রেফতারি পরোয়ানা পাঠাতে পারেন না, এমন বিধান কি তাঁর এখতিয়ারে নেই? যদি না থাকে তবে তিনি ঊর্ধ্বতন এখতিয়ারওয়ালাকে বিষয়টি অবহিত করছেন না কেন? না কি অবহিতকরণের নিয়ম নেই?

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com