ভূমি অফিসের কর্মীদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির হিসাব দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ। আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে এই হিসাব দিতে হবে ভূমি মন্ত্রণালয় ও দেশের সকল ভূমি অফিসের কর্মকর্তাদের। গত শনিবার দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের বঙ্গবন্ধু হলে সাংবাদিকদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় মন্ত্রী বলেন, ‘সংসদ নির্বাচনের সময় আমার হিসাব জমা দিয়েছি। মন্ত্রণালয় থেকে শুরু করে দেশের সব উপজেলা, ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব জমা দেওয়ার জন্য এখনই মৌখিক নির্দেশ দিচ্ছি। মন্ত্রণালয়ে গিয়েই অফিস অর্ডার বা নোটিশ ইস্যু করবো। যাতে আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সবাই বর্তমান সম্পদের হিসাব দেন।’
স্বাধীনোত্তর বাংলাদেশে প্রশাসনের কিংবা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সম্পদস্ফীতির অস্বাভাবিক প্রবণতার বিবরণ সাধারণ মানুষ খুব বেশি একটা কীছু জানেন না বলাটা বোধ করি বলা ঠিক হবে না। তাঁরা জানেন এবং সে-জানাটাকে বাড়তি আয় বলে অভিহিত করেন। বাড়তি আয় মানে বেতনের বাইরের আয়। এইভাবে সকলের জানার ভেতর দিয়েই সে-সম্পদস্ফীতির অঘটন ঘটেই চলেছে এবং এখন পর্যন্ত তা কেবল অব্যাহত নয় বরং সকল ভব্যতার মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। কোনও অফিসের একজন দারোয়ান, পেয়াদা, আর্দালি, চাপরাশি গুছের চাকুরে কয়েক বছরের মধ্যে ছাপোষা থেকে কোটিপতি হওয়ার উদাহরণ বাংলাদেশে প্রচুর না হলেও পরিসংখ্যান নিলে হয় তো দেখা যাবে সংখ্যায় তাঁরা একেবারে কম নন। গণমাধ্যমে প্রায়ই এমন চমকে দেওয়া সংবাদ আমরা প্রত্যক্ষ করেছি। এ ক্ষেত্রে অফিসের বড় কর্তার দৃষ্টান্ত টানার কোনও প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না। তাঁদের কথা সকলেরই জানা। কিন্তু অবাক করা বিষয় হলো, সাধারণ লোকদেরকে তাঁদের এই অস্বাভাবিক আয়-উন্নতির বিষয়ে খুব বেশি একটা বিরূপভাব পোষণ করতেও দেখা যায় না। কিন্তু এমন অস্বাভাবিক আয়-উপার্জন সমাজে আয়বৈষম্য বৃদ্ধি করে তাতে কোনও সন্দেহ নেই এবং এই প্রবণতাটা অবশ্যই জনকল্যাণধর্মী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রবল প্রতিবন্ধক। সাধারণ লোকের পক্ষে আসলে সেটা প্রতিরোধ করারও কোনও উপায়ও নেই। অথচ সেটা সমাজকল্যাণের প্রয়োজনে বন্ধ হওয়াও উচিত।
একটি মন্ত্রণালয়ের অধীনের সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীর আয়-উন্নতির হিসাব সাধারণ মানুষের জানার অবশ্যই অধিকার আছে এবং সেটা সম্ভব হলে দেশের ভেতরে দুর্নীতির পাগলা ঘোড়ার মুখে লাগাম পরানোর পথ সুগম হবে বলে আশা করা যায়। এ কারণে আমার ভূমিমন্ত্রীর এই কর্মপ্রয়াসের পক্ষে আছি এবং এই মহৎ প্রচেষ্টার ঐকান্তিক সমর্থক। দেশের প্রতিটি প্রশাসনিক প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির হিসাব দেওয়ার নির্দেশ কার্যকর হলে দেশের সর্বস্তরের মানুষের আয় উপার্জনের বিষয়ে বিশেষ করে অর্থব্যবস্থায় একটি স্বচ্ছতার পরিপ্রেক্ষিত তৈরি হবে। দেশের মানুষ চান, আমরা চাই বাংলাদেশর প্রতিটি মন্ত্রণালয়ে এ রকম কার্যক্রম নিয়মে পর্যবশিত হোক। প্রশাসনিক ক্ষেত্রে একটি স্বচ্ছতার সংস্কৃতি গড়ে উঠুক।