একটি সংবাদ প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘সুনামগঞ্জ-২৮ বিজিবি অধিনায়ক লে. ক. মো. মাকসুদুল আলম বলেন, ভারতের খাসিয়া অধ্যুষিত এলাকায় খাসিয়াদের সুপারি বাগানে চুরি করতে গিয়ে তাদের গুলিতে একজন বাংলাদেশি মারা গেছেন।’ খুবই লজ্জার কথা। কবি শামসুর রাহমান জীবিত থাকলে হয় তো কবিতা লিখতেন, ‘এ লজ্জা রাখবো কোথায়?’ এই একই দিনের আর একটি পত্রিকায় বিদায়ী অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতের ভাষ্য ছাপা হয়েছে। তিনি বলেছেন, ‘বাংলাদেশ নিজের যোগ্যতায় বর্তমান অবস্থায় এসেছে। আগে আমাদের ভিক্ষুক ও তলাবিহীন ঝুড়ির দেশ বলা হতো। আমরা সে জায়গা থেকে মধ্যম আয়ের দেশে পৌঁছেছি। …আমরা গত ১০ বছরে বাংলাদেশের উত্তরণ ঘটিয়েছি। বিশ্বের কোনো দেশ বাংলাদেশকে আর ভিক্ষুকের দেশ বলতে সাহস পায় না।’ এই সংবাদ প্রতিবেদনটির শিরোনাম ছিল, ‘বিশ্বের কাছে বাংলাদেশ আস্থার জায়গায় পৌঁছেছে- মুহিত’। কিন্তু বাংলাদেশের দু’জন নাগরিক যখন সীমান্ত অতিক্রম করে প্রতিবেশী দেশের সুপারি বাগান থেকে সুপারি চুরি করতে গিয়ে বাগানমালিকের বন্দুকের গুলিতে একজন নিহত হয় এবং সীমান্তের ওপারে লাশ হয়ে পড়ে থাকে এবং অন্যজন আহতাবস্থায় পালিয়ে আসে তখন সাবেক অর্থমন্ত্রীর সগর্বে ঘোষিত ‘বিশ্বের কাছে বাংলাদেশ আস্থার জায়গায় পৌঁছেছে’-বাক্যটিতে বর্ণিত ‘আস্থার জায়গা’টি আর আস্থায় থাকে না, ভ্যান্ত্রাবাজের মতো টালমাটাল অবস্থার একটি সকরুণ চিত্রকল্পে পরিণত হয়। ‘বাংলাদেশ নিজের যোগ্যতায় বর্তমান অবস্থায় এসেছে।’ কিংবা ‘বিশ্বের কোনো দেশ বাংলাদেশকে আর ভিক্ষুকের দেশ বলতে সাহস পায় না।’ এমন ঘোষণা যেমন বর্তমান বাংলাদেশের জন্য সত্য তেমনি সত্য বাংলাদেশের মানুষ সীমান্ত ডিঙিয়ে প্রতিবেশী দেশের সুপারি বাগানে সুপারি চুরি করতে গিয়ে বাগান মালিকের বন্দুকের গুলিতে নিহত হয়। সত্যিকার অর্থেই বাংলাদেশ এখন আর তলাবিহীন ঝুড়ি নয়। বঙ্গবন্ধু তনয়া বাংলাদেশকে পশ্চাৎপদতার গহ্বর থেকে টেনে তুলে উন্নয়নের মহাসড়কে উঠিয়ে দিয়েছেন। এই মহাসড়কে পা রাখতে পারেনি সেই লোকটি যে-লোকটি পার্শ্ববর্তী দেশের সুপারি বাগানে সুপারি চুরি করতে যায়, এমনি এমনি নয়, তার পেট চালানোর আয় উপার্জন করতে। মনে রাখতে হবে, কম ঠেলায় বিলাই গাছে উঠে না।
এরকম স্পর্শকাতর প্রসঙ্গ নিয়ে এর বেশি কীছু বলা আপাতত সঙ্গত হবে না, সম্পাদকীয়ও দীর্ঘ হয়ে যাবে। কেবল বলি : উন্নয়ন চাই, মানুষের মাথাপিছু আয়ের নিরন্তর বৃদ্ধি চাই, কিন্তু তার সঙ্গে চাই সীমান্তের সুপারি চোরের সঙ্গে একজন ধনীর (যাকে বলে একজন পুঁজিপতি, বড় আমলা কিংবা দুর্নীতিবাজ রাজনীতিবিদ, সমাজে যাঁরা টাকার কুমির বলে পরিচিত) আয় বৈষম্যের আকাশ-পাতাল ব্যবধানের অবসান। তা না হলে, সেই পুরনো জিকির বাধ্য হয়েই তোলবে লোকেরা, ‘কেউ খাবে তো কেউ খাবে না, তা হবে না তা হবে না’।