এই ক’দিন আগে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়ে গেলো। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, নির্বাচনে ক্ষমতাসীন মহলের কীছু কীছু অপরিণামদর্শী নেতাকর্মীদের বেপরোয়া কর্মকা- করে ফেলার অভিযোগ উত্থাপিত হলেও সার্বিক বিবেচনায় এই বিপুল বিজয়কে অস্বীকার করার কোনও জো নেই এবং এর বিপরীতে তাঁরা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন যে, এই জয় তার নিজের মাপ মতোই বড় দায়িত্ব চাপিয়ে দিয়েছে বিজয়ীদের কাঁধে। অর্থাৎ জয়ের চেয়েও বড় মাপের কর্তব্যপরায়ণ হতে হবে একাদশ জাতীয় সংসদকেই কেবল নয়, এমনকি ক্ষমতাসীন রাজনীতিক দল আওয়ামী লীগকে। এই তাৎপর্যময় নির্বাচনের একদিন পরেই শুরু হলো ইংরেজি নববর্ষ (আমাদের দেশে ইংরেজি বর্ষপঞ্জী অনুসারেই রাষ্ট্রীয় কর্মক্রিয়া পরিচালিত হয়)। নতুন বছরে মানুষ দেশের নতুন কা-ারিদের কাছে দেশ পরিচালনা ও দেশের উন্নয়নের ক্ষেত্রে প্রগতিশীল পরিবর্তন আশা করছেন। বিশেষ করে কৃষি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা প্রভৃতি ক্ষেত্রে গুণগত পরিবর্তন সূচিত হবে, দেশ উত্তরোত্তর এগিয়ে যাবে বলে প্রত্যাশা করছেন। তাঁরা ভাবছেন, দেশে সর্বত্র সাম্য-ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে এবং সেই সঙ্গে সাধারণ মানুষ লাভ করবে মানুষের মতো প্রাপ্য সম্মান। নতুন সরকার মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় থাকবে অবিচল। কারণ দেশের সাধারণ মানুষের জন্য এই মর্যাদা প্রতিষ্ঠাই ছিল ৭১-য়ে মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গীকার। এই অঙ্গীকার নতুন সরকার ভুলে যেতে পারেন না।
কিন্তু যখন পত্রিকান্তরে সংবাদ প্রকাশিত হয় যে, চার সন্তানের জননীকে ধানের শীষে ভোট দেওয়ার কারণে গণধর্ষণ করা হয়েছে। এমন ঘটনাকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে উপেক্ষা করা যেতেই পারে। কিন্তু কথা হলো, এমন জঘন্য একটি ঘটনাই বা ঘটবে কেন? এই দুর্বৃত্তরা আওয়ামী লীগের পতাকাতলে আশ্রয় পাবে কেন? আওয়ামী লীগের পক্ষে কি সাধারণ মানুষ নেই? তাঁরা তো ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে জয়ী করে দিয়েছেন। ভোটের পরে ক্ষমতাসীনরা যদি এইরূপ দানবিক রূপ নিয়ে সাধারণ মানুষের বিপক্ষে হাজির হন, তা হলে তো নির্বাচনে বিপুল বিজয়ের কাছে সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা মাঠে মারা যাবে, তাতে কোনও সন্দেহ নেই। এমন চলতে থাকলে শেখ হাসিনার বিপুল বিজয়ের তাৎপর্যটাই বিলীন হয়ে যাবে। তাই মনে হয় এখনই এই দানবিতাতার বিস্তারের লাগাম টেনে না ধরলে, শেখ হাসিনার বিজয় পরাজয় রূপে আবির্ভূত হতে বেশি সময় লাগবে না। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা বাস্তবায়নের স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যাবে। সোনার বাংলায় কোনও কসুরের কারণেই কোনও পুরুষ নারীকে ধর্ষণ করতে পারবে না। মুক্তিযুদ্ধে এটাও একটা অঙ্গীকার। এমনভাবে যদি ধর্ষণ সংঘটিত হয় তবে দেশটা তো এমনিতেই একাত্তরে পাকিস্তানি হানাদার কর্র্তক ধর্ষণের স্বর্গরাজ্য হয়ে পড়ে। এটা কী করে হয়?
অথচ বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই নির্বাচন দেশের সার্বিক উন্নয়নের নিশ্চয়তা বিধান করবে। দেশকে অন্য এক উন্নতির মাত্রা দেবে, যেখানে ধর্ষণ গণধর্ষণ হবে না। দুর্বৃত্তরা প্রশ্রয় পাবে না। দেশের মানুষ আশা করে এইরূপ ছোটখাটো কিন্তু প্রকৃতপ্রস্তাবে যুক্তি ও বিচারের নিরিখে অমানবিক, জঘন্য এবং বর্বরতাকে হার মানায় ঘটনার পুনরাবৃত্তি যেনো আর না হয়। এইরকম ঘটনার (তা যতোই ছোট হোক না কেন, সেটার প্রতিক্রিয়া অনেক বড়) পুনরাবৃত্তির প্রতিরোধ করতে না পরলে দেশ প্রকারান্তরে দুর্বৃত্তদের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হবে, নির্বাচনের বিশাল বিজয় অর্থহীনতায় পর্যবশিত হবে।