1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
  3. [email protected] : wp-needuser : wp-needuser
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৪:৫১ পূর্বাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

এই গ্লানি কোথায় রাখি? : ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল

  • আপডেট সময় শনিবার, ৫ জানুয়ারী, ২০১৯

আমি প্রতি দুই সপ্তাহ পর পর পত্রপত্রিকায় লিখি, এই সপ্তাহের জন্যও লিখতে বসেছিলাম। সবেমাত্র একটা ইলেকশন শেষ হয়েছে, মোটামুটি সবাই জানতো আওয়ামী লীগের মহাজোট জিতে আসবে, কিন্তু ফলাফল দেখে আমরা সবাই কম-বেশি চমকে উঠেছি। সত্যি সত্যি দেশের সব মানুষ আওয়ামী লীগের পক্ষে চলে গিয়েছে নাকি এর মাঝে অতিউৎসাহী মানুষের অবদান আছে বোঝার চেষ্টা করছিলাম।
একটা জিনিস ¯পষ্ট, এই দেশে এখন মানুষ মন খুলে কথা বলতে ভয় পায়, পত্রপত্রিকাও যথেষ্ট সতর্ক। সবকিছু মিলিয়ে আমি আমার নিজের মতো করে কিছু একটা লিখে প্রায় শেষ করে এনেছি, তখন হঠাৎ করে সংবাদপত্রে একটা সংবাদে চোখ আটকে গেল।
নোয়াখালীর সুবর্ণচর এলাকায় চার সন্তানের জননীকে ধানের শীষে ভোট দেয়ার জন্যে গণধর্ষণ করা হয়েছে (আজকাল প্রায়ই গণধর্ষণ শব্দটি চোখে পড়ে কিন্তু এখনও আমি এটাতে অভ্যস্ত হতে পারিনি, বাংলা ভাষায় এর চাইতে ভয়ঙ্কর কোনো শব্দ আছে কি না আমার জানা নেই)। ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত বিজয়ী হওয়ার পর আমরা অনেকবার এই ধরনের ঘটনা ঘটতে দেখেছি, আমি ধরেই নিয়েছিলাম সেটি এখন অতীত। এখন এটি আর কখনও ঘটবে না। কিন্তু নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হওয়ার পর এটি ঘটেছে, এরকম শুধুমাত্র একটি ঘটনার খবরই এসেছে কিন্তু একটি ঘটনাই কেন ঘটবে?
খুবই স্বাভাবিকভাবে সেই এলাকার আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ দাবি করছেন এর সঙ্গে আওয়ামী লীগের কোনো যোগাযোগ নেই। ধর্ষিতা জননী কিন্তু তা বলছেন না, তিনি রুহুল আমীন নামে সুনির্দিষ্ট একজন মানুষের নাম উল্লেখ করে পুরো ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন। তার নিরক্ষর স্বামী, স্কুলপড়–য়া মেয়েসহ সবাইকে বেঁধে রেখে তাকে ধর্ষণ করার জন্যে ১০-১২ জন মানুষ বাইরে নিয়ে গেছে। আমি কী অবলীলায় বাক্যটি লিখে ফেললাম কিন্তু কেউ কি কল্পনা করতে পারবে এই বাক্যটিতে যে কথাগুলো বলা হয়েছে সেটি কী ভয়ঙ্কর?
রুহুল আমীন নামের যে মানুষটির নির্দেশে এ ঘটনাটি ঘটেছে বলে ধর্ষিতা জননী অভিযোগ করেছেন, তাকে বাঁচিয়ে নয়জন মানুষের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়ছে। পুলিশ বলছে এই ঘটনাটির সঙ্গে রাজনীতি বা নির্বাচনের কোনো স¤পর্ক নেই, এটি বিচ্ছিন্ন একটি ঘটনা। আমরা কেন ধর্ষিতা জননীর কথা বিশ্বাস না করে পুলিশের কথা বিশ্বাস করবো?
নোয়াখালীর সুবর্ণচরের প্রত্যন্ত একটি গ্রামের একজন নিরক্ষর স্কুটার চালকের স্ত্রী নিশ্চয়ই গুরুত্বহীন একজন মানুষ। যার নির্দেশে প্রায় এক ডজন মানুষ এই গুরুত্বহীন একজন জননীকে ধর্ষণ করে সে নিশ্চয়ই অনেক ক্ষমতাশালী। নির্বাচনে বিজয়ের পর সে নিশ্চয়ই নিজেকে আরও গুরুত্বপূর্ণ মানুষ হিসেবে বিবেচনা করছে। কাজেই তুচ্ছ একজন মহিলাকে ধানের শীষে ভোট দেয়ার জন্যে এ রকম একটি শিক্ষা দেয়া নিশ্চয়ই খুবই মামুলি ব্যাপার, এটা নিয়ে পত্রপত্রিকায় লেখালেখি হওয়াটাই হয়তো বিস্ময়কর।
কিন্তু সদ্যবিজয়ী হওয়া আওয়ামী লীগের জন্যে এটি একটি গ্লানি। গ্লানিটি তুচ্ছ নয়। এই গ্লানি আকাশছোঁয়া, সদ্যনির্বাচিত রাজনৈতিক দলটি সরকার গঠন করে সবার আগে এই গ্লানি থেকে তাদের মুক্তি পেতে হবে। ধর্ষিতা এই জননী, তার নিরক্ষর স্বামী, স্কুলপড়–য়া অসহায় কয়েকটি ছেলেমেয়ে যতক্ষণ আমাদের ক্ষমা না করবে ততক্ষণ আমরা কিছুতেই গ্লানিমুক্ত হতে পারবো না।
আমি ব্যক্তিগতভাবে খুবই বিচলিত এবং বিষণœ। আমি কিছু লিখতে পারছি না। পাঠক আমাকে ক্ষমা করবেন।
[লেখক: অধ্যাপক, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়]

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com