1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
  3. [email protected] : wp-needuser : wp-needuser
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:১৩ অপরাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

ড. কামাল বা রেজা কিবরিয়াদের নিরাপত্তা কীভাবে সম্ভব? : দীপক চৌধুরী

  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ২০ ডিসেম্বর, ২০১৮

দেশের ইতিহাসে একাদশ সংসদ নির্বাচন নানা কারণেই যে তাৎপর্য্যপূর্ণ এটা বলার অপেক্ষা রাখে না। আমরা দেখছি, শেষ বয়সে বিএনপির কাঁধে ভর করে ক্ষমতা যাওয়ার খোয়াব দেখছেন গণফোরাম নেতা ড. কামাল হোসেন। বিএনপির সখা জামায়াতকে ছাড়া কি এত সহজ? বিএনপি যেমন ছাড়েনি, ঐক্যফ্রন্ট তো ছাড়ার প্রশ্নই আসে না। জামায়াত ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করবে তা কী আমাদের কল্পনার মধ্যে ছিল? না, ছিল না। সাবেক অর্থমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতা শাহ এএমএস কিবরিয়ার ছেলে রেজা কিবরিয়া ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করবেন কেউ কী ভেবেছিল? তাও না। আমরা অনেক কিছুই ভাবি না এরপরও ঘটে যায় ঘটনা। সবাই জানেন, অর্থমন্ত্রী কিবরিয়ার হত্যা মামলার আসামি হারিস চৌধুরীর প্রতীক ছিল ধানের শীষ। অর্থমন্ত্রীর ছেলে রেজা কিবরিয়ারও প্রতীক ধানের শীষ। তাহলে তফাৎটা কোথায়! ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে রেজা কিবরিয়ার নির্বাচন করাকে মানুষ যেমন প্রত্যাশা করে না তেমনি রেজা কিবরিয়ার পরিণিতি ও তার বাবার মতো হোক এটি তার শত্রুরাও চায় না। হয়তো বা এ কারণেই নিরাপত্তার অভাব জানিয়ে রেজা কিবরিয়া নির্বাচনী এলাকা থেকে বিদায় নিয়েছিলেন। তবে তিনি একদিনের মাথায় আবার ফিরে এসেছেন তার নির্বাচনী এলাকা ( নবীগঞ্জ-বাহুবল) হবিগঞ্জে। মাঠে সরব হয়ে বক্তব্যে তিনি খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি করে বলেছেন, ‘তাকে মুক্ত করতে হলে ধানের শীষ প্রতীকে ভোট দিতে হবে।’ প্রকৃতপক্ষে তাঁর কোন কথাগুলো সত্য তিনি ছাড়া বলা মুশকিল। কারণ, তিনি একসময় যার মৃত্যুদ- চাইতেন এখন মুক্তি চাইছেন। ২০০৫ সালের ২৭ জানুয়ারি গ্রেনেড ছুড়ে সাবেক অর্থমন্ত্রী এএমএস কিবরিয়াকে হত্যা করা হয়। তাঁর পিতা কিবরিয়া হত্যা মামলায় খালেদা জিয়া ও তারেক জিয়াকে আসামী করে চার্জশীট দেওয়ার জন্যে আওয়ামী লীগ সরকারের চুল ছিঁড়তে বাকী রেখেছেন। খালেদা জিয়া বা তারেক জিয়াকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মারতে তাঁর সুপ্ত বাসনায় শেখ হাসিনা সরকার রাজি হননি। কারণ, রেজা কবিরিয়া চাইলেই তো সবকিছু হবে না। তদন্তে পেতে হবে। মনে পড়ে ১৯৯৭ সালের আগস্টের কথা। রাজধানীর মতিঝিলে শিল্পভবনে তৎকালীন শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বসতেন। আমি প্রায়ই যেতাম সেখানে। একদিন তোফায়েল আহমেদ টেলিফোনে অর্থমন্ত্রী কিবরিয়ার সঙ্গে বেশ কিছুক্ষণ কথা বলে ফোন রাখতে রাখতে বললেন, ‘কিবরিয়া ভাইয়ের মতো এতো জ্ঞানী-গুণী ও ভালো মানুষ খুব কমই হয়।’ প্রসঙ্গ টেনে একটি গল্পও বললেন তাঁকে নিয়ে তিনি। এখন এটি উল্লেখ বা না-ই করলাম। আজ ‘কলাম’ লিখতে বসে মনে প্রশ্ন জাগে এমন গুণী মানুষের ছেলে এতো বিতর্কিত হতে পারে? আমি শুনেছি, অনেকেই মন্তব্য করে এটি ‘উন্মাদের’ মতো সিদ্ধান্ত!
কথার পৃষ্ঠে পাল্টাপাল্টি কথা বলা যায়, পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করা যায় কিন্তু পাল্টাপাল্টি রাজনীতি হয় নাকি? ঐক্যফ্রন্ট নেতা ড. কামাল হোসেন অগ্রযাত্রার পাল্টা রাজনীতি শুরু করেছেন। আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসী জামায়াতের পক্ষে রাজনীতি করতে গিয়ে কাদাগর্তে নেমেছেন। প্রতিপক্ষকে কাদা মাখাতে গিয়ে এটি নিজেই দেহে মাখামাখি করছেন। উপায়ান্তর না দেখে তিনি হঠাৎ রাজনীতি থেকে ডুব দিলেও আশ্চর্য হবার কিছু নেই। নিরাপত্তার অভাববোধ করে যদি ঘরবন্দি হয়ে পড়েন তাহলেও বিস্মিত হবার কিছু থাকবে না। মানুষ নিশ্চয় ভুলে যায়নি যে, সাঈদীকে চাঁদে দেখা গেছে এই গুজব ছড়িয়ে পুলিশ হত্যা করেছিল যুদ্ধাপরাধী জামায়াতরা। পুলিশের দোষ কী? কী অপরাধ ছিল তাদের? তারা কী এদেশের মানুষ নয়?
এদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে প্রথম প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল তারা। সুতরাং বিএনপি-জামায়াত সুপরিচিত ও ‘গুণী’ মানুষকে হত্যা করে পরিবেশ ঘোলাটে করলে অবাক হওয়ার কিছু নেই। বিএনপি-জামায়াত তাদের স্বার্থে সবকিছুই করতে পারে? দাঁড়িপাল্লা ছেড়ে আজ ধানের শীষ কেন? নিশ্চয়ই জামায়াতের স্বার্থে।
আমরা তো সবাই জানি, স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির উত্থান ও বিকাশ এক ভয়ঙ্কর পর্যায়ে পৌঁছেছিল। সম্ভবত এই রেষ ধরে যুদ্ধাপরাধী ও মানবতা বিরোধী অপরাধী দেলওয়ার হোসাইন সাঈদীর পুত্র শামীম সাঈদীও এবার নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকে। এটা ভুলে গেলে চলবে না এদেশে তাদের ‘পিতারা’ স্বাধীনতার পতাকা গাড়ি-বাড়িতে উড়িয়েছে।
বাঙালি নির্বাচনমুখী জাতি। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় তারা নেতৃত্ব নির্বাচন করতে পছন্দ করে। তাই সারা দেশেই এখন নির্বাচনী আমেজ। দেশজুড়ে নির্বাচনী উৎসবের আমেজের মধ্যে সহিংসতা কারা ছড়াচ্ছে তা বিচার করা দরকার। আওয়ামী লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, যুবলীগের ছেলেদেরে কারা হত্যা করেছে? শুধু আওয়ামী লীগের লোকেরাই যে এই নৃশংসতা ছড়াচ্ছে না এটা নির্বাচন কমিশনও জানে। এ কারণেই নির্বাচন কমিশন বিব্রত। নানারকম যুক্তিসঙ্গত কারণেই তারা কঠিন ও কঠোর হতে পারছে না। তারা সব দলকে নির্বাচনে রাখতে চায়, সবার অংশগ্রহণ চায়।
জিয়াউর রহমান পৃথিবী ছেড়ে চলে গেলেও সেই পৃষ্ঠপোষকতা এখনও বহাল রয়েছে। কারণ, তার আদর্শ থেকে বিএনপি সরে যাওয়ার কথা নয়। ইতিহাস থেকে আমরা দেখেছি, যেখানে দেশটির স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে প্রাণ দিতে হয়েছে, যে দেশে কারাভ্যন্তরে চার জাতীয় নেতাকে হত্যা করা হয়েছে, তিন নভেম্বর আর ১৫ আগস্ট সৃষ্টি করা হয়েছে; সুযোগ পেলে সেই দেশে কী না হতে পারে? আমাদের কী কোনোভাবেই ভুলে যাওয়া সম্ভব জঙ্গি জামায়াত-বিএনপির চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য। দলের ইশতেহার প্রকাশ অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের পরাজয় হলে কী হয় এর একটি উদাহরণও দিয়েছেন দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০০১ সালের ষড়যন্ত্রমূলক নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে পরাজিত করা হয়। ২০০১ পরবর্তী পাঁচ বছর ছিল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও এ দেশের সাধারণ মানুষের এক বিভীষিকাময় সময়। হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট, রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসে জনজীবন ছিল অতিষ্ঠ। সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়া, সংসদ সদস্য আহসানউল্লাহ মাস্টার, খুলনার অ্যাডভোকেট মঞ্জুরুল ইমাম, নাটোরের মমতাজ উদ্দিনসহ ২১ হাজার আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীকে হত্যা করে হাওয়া ভবন তৈরি করে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট ও পাচার করা হয়। শেখ হাসিনার অভিযোগ, রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলা ভাই, জেএমবি, হরকাতুল জিহাদসহ নানা ধরনের জঙ্গিগোষ্ঠী সৃষ্টি করা হয় তাদের আমলে। রমনা বটমূলে নববর্ষে অনুষ্ঠান, নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগের সমাবেশ ও পল্টনে সিপিবির সমাবেশ বোমা হামলা হয়েছে। সিলেটে ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরী, সাবেক মেয়র বদরুদ্দিন আহমেদ কামরান ও প্রবীণ রাজনীতিক সুরঞ্জিত সেনগুপ্তকে বোমা হামলা করে হত্যাচেষ্টা করা হয়। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় আওয়ামী লীগের র‌্যালিতে নৃশংস গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিরীহ মানুষ নিহত হয় এবং ৫০০ জনের বেশি মানুষ আহত হয় তখন। ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট ৫০০ স্থানে একযোগে বোমা হামলা, একই বছর গাজীপুরে বোমা মেরে ১০ জনকে হত্যা, শরীয়তপুরে দুই বিচারকসহ সারা দেশে অসংখ্য সন্ত্রাসী হামলা চালিয়েছে এসব জঙ্গিগোষ্ঠী। সুতরাং এখন ভোটারদের চিন্তা করতে হবে তারা কী চান? তারা কী আবার অন্ধকার পথে ফিরে যেতে চান; নাকি অগ্রগতি ও উন্নয়নের পথে? কোনটি বেছে নেবে মানুষ এর জবাব মিলবে ত্রিশ ডিসেম্বরেই।
লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক, কলামিস্ট ও ঔপন্যাসিক

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com