পত্রিকান্তরে প্রকাশ, ‘ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জের বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আব্দুল মোতালিব খান (৭০) টাকার অভাবে বিনা চিকিৎসায় বিছানায় শুয়ে-বসে মৃত্যুর প্রহর গুনছেন। শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে ছয় বছর ধরে শয্যাশায়ী তিনি। উপজেলার সরিষা ইউনিয়নের কাশিপুর গ্রামে তাঁর বাড়ি।’
সকল মানুষেরই বাড়ি থাকে। একজন মুক্তিযোদ্ধারও বাড়ি থাকে। এটাই স্বাভাবিক। বাড়ি থাকাটা একজন মুক্তিযোদ্ধার পরিচিতির তাৎপর্যকে মহিমান্বিত করে না। তাঁর পরিচিতি মহিমান্বিত হয়ে উঠে তিনি যখন লোকসমাজে মুক্তিযোদ্ধা বলে অভিহিত হন। সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের নামের আগে বীরমুক্তিযোদ্ধা লাগানোর রেওয়াজ চালু করেছেন। এই রীতির প্রচলন তাঁদের পরিচিতিকে বিশেষভাবে মর্যাদাপূর্ণ করেছে তাতে কোনও সন্দেহ নেই। তা ছাড়া তাঁদের মৃত্যুর পর অন্ত্যেষ্ঠিক্রিয়ার সময় রাষ্ট্রীয় প্রযতেœ গার্ড অব অনার প্রদানের নিয়ম করা হয়েছে। আমরা আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য এটুকু করতে পেরেছি এবং করা উচিৎ ছিল বলেই করেছি। কিন্তু তা করতে কম কাঠখড় এ দেশকে পুড়াতে হয়নি। সে আর এক ইতিহাস। কিন্তু আসল কথা হলো, মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য আর্থনীতিক নিশ্চয়তাবিধান করা সম্ভব হয়নি। যাঁরা দেশের স্বাধীনতা এনে দিলেন তাঁদের আর্থনীতিক মেরুদ- শক্ত না থাকায় প্রকৃতপ্রস্তাবে তাঁরা স্বাধীনোত্তরকালে সমাজে ঘাপটি মেরে বসে থাকা একাত্তরের যুদ্ধে পরাজিত শত্রুদের সঙ্গে আর্থসামাজিক-সাংস্কৃতিক যুদ্ধ পরিচালনায় বাস্তব জীবনে পিছিয়ে পড়েছেন। মুক্তিযুদ্ধের লড়াইয়ে মুক্তিযোদ্ধারা জিতলেও স্বাধীনোত্তর সামাজিক ক্ষমতায়নের যুদ্ধে পরাজিত হয়েছেন। আমাদের উচিত এমন একটি আর্থনীতিক ব্যবস্থা গড়ে তোলা যাতে মুক্তিযোদ্ধরা কিংবা মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানরা ‘টাকার অভাবে বিনা চিকিৎসায় বিছানায় শুয়ে-বসে মৃত্যুর প্রহর গুনছেন’ পত্রিকায় সংবাদ পড়তে না হয়। এমন অবস্থা দেশে বিদ্যমান থাকলে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের গৌরব কেবল প্রশ্নবিদ্ধ হয় না, প্রকারান্তরে সে-গৌবরের ঔজ্জ্বল্যের গায়ে একটু হলেও কালিমার প্রলেপ পড়ে। অর্থনীতির প্রকৃতি কী, সেটা এ ক্ষেত্রে ধর্তব্যের কোনও বিষয় নয়। আসল কথা দেশের অর্থনীতিকে অবশ্যই হতে হবে মুক্তিযোদ্ধাবান্ধব, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের অর্থনীতি।