নদীমাতৃক বাংলাদেশে নদীভাঙন একটি অতিশয় পুরনো এবং বিশেষ পরিচিত বিষয়। এই গাঙ্গেয় উপত্যকার মানুষ নদীভাঙনের শিকার হয়ে আসছে অনাদিকাল থেকে। প্রকৃতির সঙ্গে টিকে থাকার লড়াইয়ে নেমে প্রকৃতির নিয়মকে মানুষ আবিষ্কার করে এবং নিয়মের জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে প্রকৃতিকে নিয়ন্ত্রণ করে। প্রকৃতিকে নিজের বশে আনয়ন করে। অনেক প্রাকৃতিক ঘটনাকেই মানুষ প্রকৃতির নিয়মের জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে ইতোমধ্যে নিয়ন্ত্রণে এনেছে। গুড়-লবণ-পানির স্যালাইনের আবিষ্কার তার একটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ। নদীভাঙনের বিষয়টি বাংলাদেশের মানুষ চীনের মানুষদের মতোই জানে। চীনের মানুষেরা চীনের দুঃখ হুয়াংহো নদীকে নদীর গতি সংক্রান্ত প্রাকৃতিক নিয়মকে প্রথমে জেনেছে। তারপর বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়েছে নদীকে। বাংলাদেশের মানুষ নিয়মটা যে জানে সেটা এখনও করতে পারছে না। কারণ এখানে নদীশাসনের প্রচেষ্টাটাই অনুপস্থিত। কিন্তু পারবে না এমন তো নয়। আসল কথা কাজ তো শুরুর করতে হবে। নদীশাসনের কার্যক্রম এ দেশেও প্রচলিত ছিল। ব্রিটিশ আমলে নদীখননের কার্যক্রম সক্রিয় ছিল ঠিকই। কিন্তু ঔপনিবেশিক পাকিস্তান আমলে সে কার্যক্রম সম্পূর্ণ উপেক্ষিত হয়। ইদানিং শেখ হাসিনার সরকার নতুন করে সেটা আবার শুরু করেছেন মাত্র। বলা যায় নদীশাসনের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এটাকে বাড়াতে হবে, পরিহার করলে চলবে না।
গতকালের দৈনিক সুনামকণ্ঠের একটি সংবাদে প্রকাশ, একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় নদীভাঙনের শিকার হতে চলেছে অর্থাৎ কবলে পড়েছে। বিদ্যলয়টির নাম মঈনপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়। বারান্দা পর্যন্ত ভাঙন বিস্তৃত হওয়ায় বিদ্যালয়ের মালামাল সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। অদূর ভবিষ্যতে এই বিদ্যালয়টি সুরমা নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে তাতে কোনও সন্দেহ নেই। কেউ ঠেকাতে পারবে না। এই অনিবার্য দুর্গতি থেকে বিদ্যালয়টিকে রক্ষা করা যাবে না, এটাই আপাতত সত্য। এই মুহূর্তে যদি আলাদিনের প্রদীপ হাতে নিয়ে কেউ দাঁড়ায় এবং চীনে হুয়াংহো নদীকে বাগে আনার কৌশলগুলো অলৌকিকভাবে বাস্তবায়িত করে ফেলে তাতেই কেবল এই ভাঙন থেকে বিদ্যালয়টিকে রক্ষা করা সম্ভব। সহজ কথায় বলতে গেলে, নদীভাঙন ঠেকাতে হলে যথাযথ পদ্ধতিতে নদীশাসন কার্যক্রমকে সফল করে তোলতে হবে। অনেক অনুসন্ধান, ক্ষেত্রসমীক্ষা, পরিকল্পনা, অর্থায়ন, প্রাযুক্তিক প্রকল্প প্রণয়ন করতে হবেÑ পুড়াতে হবে অনেক কাঠখড়। বিশেষ করে ভারতের সঙ্গে করতে হবে নদীশাসনের কাজের কূটনৈতিক সমন্বয়। দেশের অর্থনীতিকে হতে হবে সেই তুলনায় আরও সমৃদ্ধ ও শক্তপোক্ত।
শেখ হাসিনার হাত ধরে আমরা এগিয়ে চলেছি। সকল সমস্যার সমাধানের সঙ্গে অবশ্যই নদীশাসন সমস্যারও নিরসন হবে অচিরেই।