‘মেধাবী শামীম আহমদকে জেলা প্রশাসকের আর্থিক সহায়তা’ একটি সংবাদশিরোনাম। এই সংবাদশিরোনামটি বলে দেয় এ দেশে সাধারণ মানুষদের জন্য উচ্চশিক্ষার দ্বারোন্মোচন করে দেওয়া এখনও সম্ভব হয়নি। একজন ছাত্রকে উচ্চশিক্ষা লাভের সুযোগ করে দিতে জেলা প্রশাসকের বিশেষ প্রযতেœর প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। জেলা প্রশাসককে তাঁর এই শিক্ষাবান্ধব প্রযতেœর জন্য ধন্যবাদ।
স্বাধীনতার সাতচল্লিশ বছর ইতোমধ্যে পেরিয়ে গেছে। এই দীর্ঘ সময়ের মধ্যে দেশে রাজনীতি ছিল, আর্থনীতিক উন্নয়নের কাজ ঠিকই হয়েছে। সংসদ বসেছে, বাজেট পাশ হয়েছে। কিন্তু সর্বজনের জন্যে উচ্চশিক্ষা লাভ নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। শিক্ষা খাতে প্রয়োজনীয় হারে বাজেট বাড়ানো হয়নি। রাজনীতি দেশের শিক্ষার হার শতভাগে উত্তীর্ণ করার পরিবর্তে ক্ষমতা দখলের ও ধনীক শ্রেণির মুনাফা অর্জনের অনুকূলে কার্যত নিয়োজিত থেকেছে। এ দেশের শিক্ষার্থীরা শিক্ষাবর্ষ শুরুর প্রথম দিকের কয়েক মাস পরে পাঠ্যবই হাতে পেতো। বিট্রিশ আমল থেকে এটাই ছিল চিরন্তন রীতি। শিক্ষার্থীরা বলতে গেলে বৎসরের অর্ধেক সময় প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হতো। বঙ্গবন্ধু কন্যার সরকার এই ক’বছর আগে যখন শিক্ষাবর্ষের প্রথম দিনে শিক্ষার্থীদের হাতে বই তোলে দেওয়ার প্রকল্প হাতে নিলেন, সেটা ব্যর্থ করে দেওয়ার ষড়যন্ত্র হয়েছিল। শিক্ষা বোর্ডের কাগজের ভা-ার পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। সরকার যাতে সময়মতো বই ছাপিয়ে প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করতে না পারে। অর্থাৎ এখনও এই দেশে এক শ্রেণির সমাজ নিয়ন্ত্রক মানুষ রয়ে গেছে যারা দেশের শিক্ষাব্যবস্থার এমন পরিবর্তন চায় না যাতে শিক্ষা সকল শ্রেণি-স্তর-পেশার মানুষের জন্য অধিকারে পরিণত হয়ে পড়ে। এমতাবস্থায় স্বাধীনতার সাতচল্লিশ বছর পেরিয়ে গেছে। এরমধ্যে শিক্ষা ক্ষেত্রে একবোরেই কোনও পরিবর্তন আসেনি এমনও নয়। ইতোমধ্যে মাধ্যমিক পর্যন্ত শিক্ষাকে অবৈতনিক, নিখরচায় শিক্ষা-উপকরণ প্রদান ও উপবৃত্তি চালু করা হয়েছে। যথাসম্ভব বাড়ানো হয়েছে শিক্ষা খাতের বাজেট। কিন্তু এতোসব কীছু করার পরও উচ্চশিক্ষার সুযোগ গ্রহণে এখনও ব্যর্থ হচ্ছে শামীমদের মতো গরিব পরিবারের শিক্ষার্থীরা। তাদেরকে নিজেদের উচ্চশিক্ষা নিশ্চিত করতে কোনও না কোনও জেলা প্রশাসক কিংবা ধনাঢ্য ব্যক্তির আর্থিক সহায়তার উপর নির্ভর করতে হচ্ছে না হয় ঝরে পড়া শিক্ষার্থীর মিছিলে শরিক হতে হচ্ছে । দেশের শিক্ষাব্যবস্থার এই দৈন্য অনাদিকাল চলতে পারে না। মনে রাখতে হবে, শিক্ষার মানকে উন্নীত করেই পৃথিবী এগিয়ে চলেছে, দেশে দেশে। বিশ্বব্যবস্থার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হলে শিক্ষাব্যবস্থাকে আমূল পরিবর্তন করতে হবে, করতে হবে বিশ্বমানের তুলনায় উন্নত। প্রত্যেকটি নাগরিককে উচ্চশিক্ষা দেওয়ার সামর্থ্য অর্জন না করলে আমাদেরকে অন্য দেশের তুলনায় পিছিয়েই থাকতে হবে চিরকাল এবং প্রকারান্তকে বিশ্বের অন্য উন্নত জাতি-রাষ্ট্র-দেশের দাসত্বকে বরণ করে নিতে হবে। কোনও কোনও বিশেষজ্ঞ মনে করেন, বিশেষ শ্রেণির শোষণ বজায় রাখতে জাতির সিংহভাগ মানুষকে শিক্ষার আলো থেকে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে বঞ্চিত করার নিহিতার্থ একটাই দেশ-জাতি-রাষ্ট্রকে পিছিয়ে রাখা।