দেশের শিক্ষাক্ষেত্রে দুর্নীতি বেড়েছে। অদূর অতীতে শিক্ষাক্ষেত্রে দুর্নীতি বলতে বুঝাতো পরীক্ষার্থী কর্তৃক পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন এবং সেটা ছিল পরীক্ষায় নকল করা কিংবা টুকলিফাইং। পরীক্ষায় এবংবিধ অসদুপায় অবলম্বনের সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটি, যে-কোনও বিবেচনায় ছিল, পরীক্ষার্থীর একক প্রচেষ্টায় সংঘটিত একটি কার্যক্রম। পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বনের একক প্রচেষ্টা আর একক থাকে না, সেটাতে অভিভাবক থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্টরা যুক্ত হয়ে পড়ে কালক্রমে বাড়তে বাড়তে প্রশ্নপত্র ফাস পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে এবং অনিবার্যভাবে ওতপ্রোত হয়ে পড়েছে আন্তর্জাল (ইন্টারনেট) ব্যবস্থাসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী।
পত্রিকায় প্রকাশ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দুর্নীতি সংক্রান্ত কয়েক হাজার অভিযোগ জমা পড়েছে দুর্নীতিদমন কমিশনে এবং তৎপ্রেক্ষিতে দুদক দুর্নীতিবাজ শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তালিকা প্রস্তুত করে বিহিত ব্যবস্থা গ্রহণার্থে শিক্ষামন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করেছন। অভিযোগ উঠেছে : এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণে অতিরিক্ত টাকা আদায়, পরীক্ষায় অকৃতকার্য পরীক্ষার্থীকে টাকার বিনিময়ে পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ করে দেওয়া, শিক্ষার্থীকে নামকরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি করে দেওয়ার ব্যবসা, কোচিং বাণিজ্য, ভাড়াটে পরীক্ষার্থী দিয়ে পরীক্ষা দেওয়ানো, গাইড (অর্থপুস্তক) ব্যবসা ও প্রশ্নপত্র ফাস করার মতো ভয়ঙ্কর সব দুর্নীতির।
বুঝাই যায়, মুক্তবাজার অর্থনীতির কল্যাণে শিক্ষাকেও একটা দামি পণ্যে পরিণত করা হয়েছে। বড় মাছকে কেটে টুকরো টুকরো করে বিক্রয় করার মতো করে এখন অখ- শিক্ষাব্যবস্থাকে খ- খন্ড করে প্রতিটি খ-কে আলাদা আলাদা দামে বিক্রয় করা হচ্ছে। এদিক থেকে বিবেচনায়, বর্তমান বাংলাদেশে পুরো শিক্ষাব্যবস্থাটি একটি বৃহৎ মৎস্যবাজারের মতো ব্যবসাক্ষেত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। শিক্ষাকে নিয়ে ব্যবসা করার এই সুযোগ কতিপয় দুর্নীতিবাজকে দেওয়া যায় না। দেশের জন্য চাই একটি বিশ্বমানের সমকক্ষ আধুনিক কারিগরি শিক্ষাব্যবস্থা। যে-শিক্ষাব্যবস্থায় যে-স্তরেই শিক্ষা সমাপ্ত হবে শিক্ষার্থী সে-স্তরেই কোনও না কোনও একটি পেশায় নিয়োজিত হওয়ার নিশ্চয়তা লাভ করবে। অর্থাৎ কীছু একটা উৎপাদনকাজে নিয়োজিত হয়ে নির্বিঘেœ জীবন নির্বাহ করতে পারবে। শিক্ষাক্ষেত্রে বিদ্যমান দুর্নীতি যে-কোনও আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার পরিপন্থী।
ইতোমধ্যে দুদকের পক্ষ থেকে শিক্ষাক্ষেত্রে দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করা হয়েছে। দুদককে সেজন্য সাধুবাদ জানাই। শিক্ষাক্ষেত্রে দুর্নীতিবিরোধী দুদকের এই অবস্থান দেশের শিক্ষাক্ষেত্রে একটি ইতিবাচক পরিপ্রেক্ষিতের সূচনা করবে।
ৃ