জেলায় প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা চলছে। প্রথম দিনের পরীক্ষা কোনও ‘অপ্রীতিকর পরিস্থিতি ছাড়াই সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে’ বলে পত্রিকায় লেখা হয়েছিল। কিন্তু গতকালের দৈনিক সুনামকণ্ঠে পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বনের পরাকাষ্ঠার নমুনা ২৯ জন ভুয়া পরীক্ষার্থীকে পরীক্ষা দেওয়া থেকে বিরত রাখার প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। অর্থাৎ মূর্তিমান অজম্ভুতের মতো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি আবির্ভূত হয়েছে। সংবাদপত্রের ভাষ্যানুসারে ধর্মপাশায় ২০ জন ভুয়া পরীক্ষার্থীর প্রবেশপত্র জব্দ ও শাল্লায় ৯ জন ভুয়া পরীক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এইসব ভুয়া পরীক্ষার্থীরা টাকার বিনিময়ে নিজের পরিচয় গোপন করে অন্যের হয়ে পরীক্ষা দিতে এসেছিল। ধর্মপাশা উপজেলার দুটি কেন্দ্রে উপজেলা কর্মকর্তা স্বয়ং এই সব পরীক্ষার্থীর পরীক্ষা সংক্রান্ত তথ্যাদি যাচাই করে ভুয়া পরীক্ষার্থীদের শনাক্ত করেন। এইরূপ একটি কার্যক্রম পরিচালনার জন্য তাঁকে সাধুবাদ জানাই।
আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাটি সার্বিক বিবেচনায় একটি ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। সম্পূর্ণ শিক্ষাব্যবস্থাটি এমনিতেই বিভিন্ন জটিল সমস্যায় আক্রান্ত হয়ে শতব্যাধিগ্রস্ত মানুষের মতো বেহাল-দুর্বল। এটিকে সুস্থ করার প্রাণপণ চেষ্টা করছেন শেখ হাসিনা সরকার। কিন্তু আনন্দ স্কুলের কিছু সংখ্যক শিক্ষক নিজেদের রুটিরুজির স্বার্থে এইরূপ ভুয়া পরীক্ষার্থী তৈরির অপচেষ্টায় ব্যাপৃত আছেন। এমনকি এইসব অসৎ শিক্ষকের সঙ্গে হয়তো বা কোনও কোনও অভিভাবকেরও যোগসাজস থাকতে পারে। টাকা দিয়ে যষ্ঠ শ্রেণি থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাশ ছাত্রদের ভাড়া খাটানোর ব্যবস্থা করা একটি পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীর পক্ষে সম্ভব নয় বলেই অভিজ্ঞ মহলের ধারণা।
এই দুরবস্থা থেকে প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থার উত্তরণ চাই। প্রাথমিক শিক্ষাক্ষেত্রেই যদি এমন অসদুপায় অবলম্বনকে প্রতিরোধ করা না যায়, তাহলে দেশের শিক্ষাব্যবস্থার মেরুদ- আর ভাঙাচুরা বেহাল অবস্থায় দাঁড়িয়ে থাকবে না, সম্পূর্ণই ভেঙে পড়বে, অর্থাৎ যাকে বলে ধ্বংস হয়ে যাবে এবং প্রকারান্তরে শিক্ষা জাতির মেরুদ-ের ধারণাটি অকার্যকর হয়ে পড়বে। সেটা জাতির জন্য কোনও মঙ্গল বয়ে আনবে না। তাই যে যাই বলুন, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে শিক্ষাব্যবস্থাটি সুস্থকরণের লক্ষ্যে আরও তৎপর হতে হবে এবং প্রয়োজনে হতে হবে আরও কঠোর।