1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
  3. [email protected] : wp-needuser : wp-needuser
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:১৬ অপরাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

কমরেড শ্রীকান্ত দাশ ছিলেন সমাজতন্ত্রের একনিষ্ট কর্মী : মাধব রায়

  • আপডেট সময় সোমবার, ১৯ নভেম্বর, ২০১৮

হেমন্তে বিস্তীর্ণ ধানের ক্ষেত আর বর্ষায় আদিগন্ত জলরাশি বেষ্টিত অবহেলিত লোকালয় থেকে বিশ্বের অত্যাধুনিক ফলপ্রসূ ও কার্যকরী মতবাদ এর এ রকম নিষ্ঠাবান সমর্থক অকল্পনীয় বলেই ধরে নিতে হবে। কমরেড শ্রীকান্ত দাশ ছিলেন এরকমই একজন সমাজতন্ত্রের আজীবন সমর্থক কর্মী। নিজের ব্যক্তিগত চাওয়া-পাওয়ার উর্দ্ধে ছিল তাঁর এই মানসিকতা। শাল্লা উপজেলার আঙ্গারুয়া গ্রামে জন্ম নেয়া এই পরিশ্রমী ছিপছিপে গড়নের মানুষটি কিভাবে এতোটা দৃঢ়তার সাথে সাম্যবাদী ধ্যান ধারণা আঁকড়ে ছিলেন, তা অবিশ্বাস্য।
সারাবিশ্বে যখন সমাজতন্ত্রের একে একে পতন হচ্ছে, পেরেস্তইকা-গ্লাসনস্তমুখী সমাজতন্ত্র একটার পর একটা ক্ষয়প্রাপ্ত হচ্ছে। রাশিয়ায়,জার্মানিতে এমনকি বাংলাদেশেও সমাজতান্ত্রিক আন্দোলন দুর্বল থেকে দুর্বলতর হচ্ছে, সমাজতন্ত্র সর্বশ্রেষ্ঠ মতবাদ কিনা নাকি সমাজতন্ত্রের দিন শেষ, মানুষ এ নিয়ে চায়ের কাপে ঝড় তুলছে, নেতানেতৃরা একদল থেকে অন্যদলে যাচ্ছেন, নতুন ফ্রন্ট করেছেন, ফোরাম করেছেন, কেউবা হালুয়া রুটির আশায় বড় দুই দলে ভিড়ছেন, ঠিক তখনও শ্রীকান্ত দা ছিলেন অনড়, অটল। হঠাৎ আসা বন্যার পানি নদীর তীরে ছাপিয়ে উঠে এলে যেভাবে তীরে পুতে রাখা কোন শক্ত খুঁটি পানির স্রোতে নড়ে চড়ে কিন্তু ভেসে যায় না বা উগড়ে স্রোতের টানে ভেসে যেতে পারে না, শ্রীকান্ত দা তেমনি। কিভাবে কোন মন্ত্র বলে সমাজতন্ত্রটাকে মনের মাঝে গেঁথে নিয়েছিলেন যে এই মতবাদই শোষিত মানুষের মুক্তির সনদ সেই গাঁথা থেকে একচুল বিচ্যুতি হননি।
তিনি নিজে গান গাইতেন, গান লিখতেন এবং সুর করে মানুষকে জাগিয়ে তোলার কাজে লাগাতেন। শাল্লা উদীচীর সভাপতি ছিলেন তিনি দীর্ঘদিন। উদীচীর জাতীয় সম্মেলনে শাল্লা থেকে দলীয় কোনো অংশগ্রহণ না থাকলেও শ্রীকান্ত দার একক অংশগ্রহণ বাদ যেতো না। একা-একজন ফেস্টুন বহন করে ঢাকার বুকে জানান দিতেন শাল্লা উদীচীর উপস্থিতি।
সিলেট উদীচীতে তাঁর আসা যাওয়া ছিল বেশ সাবলীল। একবার পহেলা বৈশাখে সিলেট জেলা উদীচী শ্রীকান্তদাকে নিয়ে অনুষ্ঠান উদ্বোধন করছিল। তখন দেখেছি শ্রীকান্তদার চোখে জলের আবেগধারা। ভাবখানা এমন সিলেট জেলা সংসদ এর মতো একটা সংসদ আমার মতো নগণ্য শ্রীকান্তকে এতোটা মূল্য দিচ্ছে। আমি কি সেই মূল্যের উপযুক্ত ! কিন্তু সিলেট জেলা উদীচী এই মহামূল্য জীবনকে ঠিকই চিনেছিল। তাঁর আনন্দশ্রু সিলেট উদীচীর বর্ষবরণ উৎসবকে আরো গুরুত্ববহ করেছিল। আমরা সিলেট জেলা উদীচী ভারতের শিলচরে দিশারী শিল্পীগোষ্ঠীর আমন্ত্রণে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করতে যাওয়ার সময় হেমাঙ্গ বিশ্বাস এর বাঁচবো বাঁচবোরে আমরা গানটার কথা এবং সুর তাঁর কাছ থেকেই তুলে নিয়েছিলাম। উদীচীকে নিয়ে তাঁর স্বপ্ন ছিল অনেক। ভাটি অঞ্চলের উর্বর সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলের মানুষদের তিনি সাংস্কৃতিক আন্দোলনের মাধ্যমেই জাগিয়ে তোলার স্বপ্ন দেখতেন। তাঁর আকাঙক্ষা ছিল কেন্দ্রীয় উদীচীর তৎকালীন সভাপতি হাসান ইমামকে শাল্লায় নিয়ে গিয়ে উদীচীর সম্মেলন উদ্বোধন করাবেন। হয়ে ওঠেনি ।
সমাজতন্ত্রের কর্মী হিসেবে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য ছিলেন তিনি। পার্টির কাজে তিনি সবসময় ছিলেন নিবেদিত প্রাণ। শহরে আসা-যাওয়া থাকলেও গ্রামেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতেন এবং গ্রামের কৃষকদের সাথেই তাঁর আত্মিক সম্পর্ক ছিল। পার্টির পত্রিকা একতা তিনি হেঁটে হেঁটে বিলাতেন। পার্টির নেতৃত্বের প্রতি তাঁর অগাধ শ্রদ্ধা এবং অকুন্ঠ আনুগত্য ছিল। তাঁর পিতার মৃত্যুর খবর পেয়ে পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটি মনিঅর্ডার করে কিছু টাকা পাঠিয়েছিল। এই সামান্য টাকা অসামান্য অবদান রেখেছিল পিতার শ্রাদ্ধে এবং তিনি এই কথাটা প্রায়ই কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করতেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় বড় ডিগ্রি তিনি নেননি কিন্তু কতোটা বিজ্ঞান মনস্ক আর পরোপকারী হলে নিজেকে মানুষের কল্যাণে বিলিয়ে দেয়া যায়, তা বুঝা যায় শ্রীকান্তদার নিজ দেহ ওসমানী মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষকে দান করে দেওয়ার মাধ্যমে। বাংলাদেশের একটা বাজে সিস্টেম হলো নিজ মরদেহ দান করতে গেলে আইনগত কিছু পক্রিয়া স¤পন্ন করতে হয় নিজে এবং বেশ খরচাপাতিও করতে হয় এই পক্রিয়ায়। শ্রীকান্তদার আর্থিক অসচ্ছলতার মধ্যেও তিনি এই প্রক্রিয়া স¤পন্ন করে নিজ মরদেহ দান করে গেছেন।
ব্যক্তিগতভাবে আমার সাথে বয়সের অনেক তারতম্য থাকার পরেও সম্পর্ক ছিল ভাই এর মতো। তাঁর ছেলের বয়সী হলেও আমি এবং আমার আরো অনেক জুনিয়র কর্মীরাও তাঁকে দাদা বলেই সম্বোধন করতাম । কারন শ্রীকান্তদা ছিলেন মনের দিক থেকে চির তরুণ। কখনো কোন রকমের হতাশা তাঁর মনের কাছেও ঘেষতো না। তিনি ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ।
সমাজতন্ত্রের পতাকা একদিন বাংলাদেশে এবং সারা বিশ্বে ওরবেই এই ছিল শ্রীকান্তদার শেষ কথা। ১৯ নভেম্বর ২০০৯ মৃত্যুর আগ পর্যন্তও তিনি এই কথা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতেন। এই সৎ এবং নিরহংকারী কর্মতৎপর মানুষটির মৃত্যু হয়েছে কিন্তু তাঁর সমাজতন্ত্রের স্বপ্নের কখনো মৃত্যু হবে না। প্রতিটি সমাজতন্ত্রী গণতন্ত্রী মানুষের মাঝে তিনি বেঁচে থাকবেন।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com