1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
  3. [email protected] : wp-needuser : wp-needuser
বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:৪৭ পূর্বাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

বিএনপিতে হঠাৎ তীব্র কোন্দল : নেতৃত্ব ও মনোনয়ন নিয়ে গুরু-শীষ্যের দ্বন্দ্ব!

  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ১৩ নভেম্বর, ২০১৮


বিশেষ প্রতিনিধি::

সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির প্রবীণ নেতা সাবেক সাংসদ ও হুইপ এডভোকেট ফজলুল হক আছপিয়া ও তার দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত কর্মী জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম নূরুলের মধ্যে নেতৃত্ব ও আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন চাওয়া নিয়ে চরম কোন্দল দেখা দিয়েছে। এতদিন দু’জনের মধ্যে কোন্দল চাপা থাকলেও সম্প্রতি প্রকাশ্যে রূপ নিয়েছে। সোমবার দুপুরে নূরুল ইসলাম নূরুলের অনুসারী পৌর, সদর ও বিশ্বম্ভরপুরসহ বিভিন্ন ইউনিটের অন্তত ৯৬ জন নেতাকর্মী পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন। গুরু-শীষ্যের এই দ্বন্ধে কর্মীরা পড়েছেন বিপাকে। বিশেষ দলের প্রতি নিবেদিতপ্রাণ কর্মীরা তুষের অনল হঠাৎ দাউদাউ করে জ্বলে ওঠায় আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে এ কারণে প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করছেন।
বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও সাবেক হুইপ ফজলুল হক আছপিয়াকে পাশ কাটিয়ে পৌর, সদর ও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা কমিটি অনুমোদন দেন জেলা বিএনপির সভাপতি কলিম উদ্দিন মিলন ও আছপিয়ার রাজনৈতিক শীষ্য বর্তমান জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম নূরুল-এমন অভিযোগ ছিল। এই কমিটি অনুমোদনের পর ক্ষুব্দ হন ফজলুল হক আছপিয়া। তার এই ক্ষুব্দতার কারণে কেন্দ্র ওই তিন কমিটি গঠনের এক সপ্তাহের মাথায় নেতৃত্ব পরিবর্তন করে নতুন করে কমিটি অনুমোদন দিয়েছে। পরিবর্তিত ওই কমিটিতেও কেন্দ্রীয় নির্দেশে স্বাক্ষর করেন জেলা বিএনপির সভাপতি কলিম উদ্দিন মিলন ও সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম নূরুল। গতকাল সোমবার যারা পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন পদত্যাগী নেতারাও স্বাক্ষরিত ওই কমিটির দায়িত্বশীল ছিলেন।
বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে ফজলুল হক আছপিয়া বিভিন্ন সময়ে সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতিসহ গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি বিএনপি থেকে দুইবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। ২০০১ সালে চারদলীয় জোট সরকারের সময়ে তিনি জাতীয় সংসদে হুইপের দায়িত্ব পালন করেছেন এবং জেলার দ্বায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী ছিলেন। বর্তমানে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। বিএনপির জেলার প্রভাবশালী সজ্জন এই রাজনীতিবিদের হাত ধরেই রাজনীতিতে আসেন নূরুল ইসলাম নূরুল। রাজনীতিতে তার উত্থানও তারই হাত ধরে। ফজলুল হক আছপিয়ার মাধ্যমে তিনি জেলা ছাত্র দলের সাধারণ সম্পাদক, সভাপতিসহ সম্প্রতি জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মনোনীত হয়েছেন এমনটা মনে করেন দলীয় নেতাকর্মী ও আছপিয়াবিরোধী নেতাকর্মীরা। নূরুল ইসলাম নূরুল জেলা বিএনপির সবচেয়ে দাপুটে নেতা এখন। ছাত্রদলের রাজনীতি এখনো তার নিয়ন্ত্রণে। জেলা বিএনপিতে যে নেতৃত্ব রয়েছে তার বলয়ের নেতাকর্মীরাই বেশি।
দুই প্রজন্মের এই দুই গুরু শীষ্যের দীর্ঘদিনের সখ্যতা থাকলেও সম্প্রতি নেতৃত্ব ও আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সুনামগঞ্জ-৪ আসনে মনোনয়ন নিয়ে প্রকাশ্যে দ্বন্ধ দেখা দিয়েছে। এই আসনে দু’জনই মনোনয়ন প্রত্যাশী। নূরুল ইসলাম নূরুলের সমর্থকরা তার মনোনয়ন চেয়ে জেলা শহরসহ নির্বাচনী এলাকায় বিলবোর্ড ব্যনারে ছেয়ে ফেলছে।
জানা গেছে গত ২৫ অক্টোবর আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিজের কর্মী বাহিনীকে চাঙ্গা করতে সুনামগঞ্জ-৪ আসনের তিনটি সাংগঠনিক ইউনিটে কমিটি অনুমোদন দেন জেলা বিএনপির সভাপতি কলিম উদ্দিন মিলন ও সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম নূরুল। এই কমিটিতে ফজলুল হক আছপিয়ার অনুসারীরা বঞ্চিত হন। কমিটির তিনটিতেই দাপট ছিল নূরুল ইসলাম নূরুল অনুসারীদের। এতে ক্ষুব্দ হন প্রবীণ রাজনীতিবিদ ফজলুল হক আছপিয়া। তিনি ক্ষুব্দ হয়ে কেন্দ্রীয় বিএনপির কাছে নালিশ করলে কেন্দ্রীয় বিএনপি গত ৫ নভেম্বর তিনটি কমিটির নের্তৃত্ব পরিবর্তন করে আছপিয়া অনুসারীদের কমিটিতে যুক্ত করে। পরিবর্তিত কমিটিতেও স্বাক্ষর করেন নূরুল ইসলাম নূরুল। এভাবেই দুই নেতা প্রকাশ্যে বিরোধে আসেন। তাছাড়া জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পাবার পর নূরুল ইসলাম নূরুল ও তার অনুসারীরা জাতীয় সংসদে সুনামগঞ্জের মর্যাদাশীল আসনে দলীয় মনোনয়নের দাবি তুলেছেন। সুনামগঞ্জ-৪ আসনে সম্প্রতি নূরুল ইসলাম নূরুলের বড় বড় বিলবোর্ডলক্ষ্য করা গেছে। এই আসনে প্রভাবশালী প্রার্থীহিসেবে ফজলুল হক আছপিয়া ও তার অনুসারী মেনে নিতে পারছেন না। এটাও কোন্দলের অন্যতম কারণ বলে জানিয়েছেন উদারনৈতিক নেতাকর্মীরা। এদিকে এসব ঘটনায় আছপিয়ার অনুসারী হিসেবে পরিচিত উদারমনা নেতাকর্মীরা কিছুদিন আগে তার কাছ থেকে সরে গেলেও এখন আবার ফজলুল হক আছপিয়ার সঙ্গে ভিড়েছেন। সুনামগঞ্জ-৪ আসনে ফজলুল হক আছপিয়া মনোনয়ন পেলে তারা নিরলস প্রচারণা চালাবেন এমন কথা জানিয়েছেন।
সোমবার নূরুল অনুসারী তিন সাংগঠনিক ইউনিটের কমিটি পরিবর্তনের অভিযোগে ফজলুল হক আছপিয়াকে দায়ি করে ৯৬ জন নেতাকর্মী পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন। তারাও ফজলুল হক আছপিয়ার পরীক্ষিত নেতাকর্মী ও তার ক্ষমতাসীন সময়ে নানা সুবিধা নিয়েছেন। তার হাত ধরে তাদেরও রাজনীতিতে অভিষেক হয়েছে। সোমবার দুপুরে জেলার একটি কমিউনিটি সেন্টারে সাংবাদিক সম্মেলন করে পদত্যাগের ঘোষণা দেওয়ায় বিএনপির রাজনীতির মাঠ হঠাৎ উত্তপ্ত হয়ে ওঠেছে। তারা মনে করছেন গুরু-শীষ্যের মধ্যে নীরবে জ্বলা তুষের অনল এখন দাউদাউ করে জ্বলে ওঠছে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে পৌর বিএনপির সদস্য ও সাধারণ সম্পাদক অনুসারী এডভোকেট আমিরুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘদিন পর সুনামগঞ্জ-৪ আসনের তিনটি সাংগঠনিক ইউনিটে কমিটি হয়েছিল। কিন্তু দশদিনের মাথায় কমিটির নেতৃত্ব পরিবর্তনে আমরা হতাশ। ৯৬ নেতাকর্মী এ কারণে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানান তিনি।
জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম নূরুলের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি ফোন ধরেননি।
বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও সাবেক হুইপ ফজলুল হক আছপিয়া বলেন, কিছুদিন আগে গুরুত্বপূর্ণ তিনটি সাংগঠনিক ইউনিটে একতরফা কমিটি দেওয়া হয়েছিল। কেন্দ্রীয় নির্দেশে পরে কমিটি অনুমোদকরীরা প্রকৃত নেতৃত্বকে মূল্যায়ণ করে নতুন করে অনুমোদন দেয়। এতে তিনটি ইউনিটের নেতাকর্মীরা খুশি হয়েছে। এখন এই অনুমোদনকারীর কিছু লোকই আবার পদত্যাগের কথা বলছে কেন আমরা বুঝতে পারছিনা।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com