শহীদনূর আহমেদ ::
সড়ক পরিবহণ আইনের কয়েকটি ধারা বাতিলসহ ৮ দফা দাবিতে শ্রমিকদের ৪৮ ঘন্টার কর্মবিরতিতে সারাদেশের ন্যায় সুনামগঞ্জের যাত্রীরাও চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। বাস, মিনিবাস, মাইক্রোবাস, সিএনজি, লেগুনাসহ সব ধরণের গণপরিবহণ আঞ্চলিক মহাসড়ক ও আভ্যন্তরীণ সড়কে চলাচল বন্ধ রয়েছে। বিভিন্ন স্থানে পরিবহণ শ্রমিকরা সশস্ত্র টহল দিয়ে প্রাইভেট পরিবহনের যাত্রী ও চালকদের বাধা দিয়েছেন। এসময় প্রাইভেট পরিহনের যাত্রীরা বাধা দিলে তাদের সঙ্গেও খারাপ আচরণ করে পরিবহন শ্রমিকরা।
এদিকে শ্রমিকদের কর্মবিরতির কারণে নির্দিষ্ট গন্তব্যে যাওয়া যাত্রীরা চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। যানবাহন বন্ধ থাকায় অফিস আদালত এবং স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা সঠিক সময়ে পৌঁছতে পারেননি গন্তব্যস্থলে। ঘন্টার পর ঘন্টা বাসটার্মিনালে অপেক্ষা করতে দেখা গেছে যাত্রীদেরকে। ফলে অসহায় যাত্রীদের অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
সরেজমিন রোববার সকালে জেলা শহর বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায় সকল সড়কে যান চলাচল বন্ধ রেখে গাড়ি পার্কিং করে রাখা হয়েছে। স্টেশন গুলোতে দেখা গেছে পরিবহণগুলো সারি সারি করে রাখা। নিরুপায় হয়ে বাস স্ট্যান্ডে যানবাহনের জন্যে অপেক্ষা করলেও গন্তব্যস্থলে পৌঁছতে অনিশ্চয়তায় ছিলেন যাত্রীরা। তারা পরিবহন না পেয়েই ফিরে যান।
শহরের নতুন বাসস্ট্যান্ডে গাড়ির জন্যে সকাল থেকে অপেক্ষা করছেন আব্দুল আজিজ নামে এক যাত্রী। তিনি মধ্যনগর থেকে সিলেট যাওয়ার উদ্দেশ্যে বাসর্টামিনালে এসেছিলেন। দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার পর ক্ষোভ প্রকাশ করে আব্দুল আজিজ বলেন, দাবি আদায়ের নামে সাধারণ যাত্রীদের জিম্মি করা হচ্ছে। এটা অমানবিক। পরিবহন শ্রমিকরা আইন কানুনের তোয়াক্কা না করে এটা করছে। তারা দিনদিন বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন।
শাহিদা বেগম নামে এক যাত্রী কোলের শিশুকে নিয়ে কয়েক ঘন্টা ধরে অপেক্ষা করছেন স্ট্যান্ডে। তিনি জগন্নাথপুর যাবেন মৃত দাদিকে শেষ বারের মতো দেখার জন্যে। কিন্তু কোন যানবাহন না পেয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। শাহিদা বলেন, রাতে আমার দাদি মারা গেছেন। দাদিকে শেষ বারের মতো দেখতে জগন্নাথপুর যেতে চেয়েছিলাম। কোন গাড়ি না থাকায় বিপাকে পড়েছি।
মা আর ছোট দুই ভাইবোন নিয়ে সকাল থেকে পুরাতন বাস্ট্যান্ড এলাকায় অপেক্ষা করতে দেখা যায় মনসুর আলীকে। জরুরি কাজে সিলেট যাবেন তারা। তাহিরপুর থেকে আসা এই যাত্রীরা যাতায়াতের কোন উপায় না পেয়ে বাড়িতে ফিরতে দেখা যায়। মনসুর আলী বলেন, জরুরি কাজে পরিবার নিয়ে সিলেট যাবো। ধর্মঘটের কারণে সকাল থেকে কোন যানবাহন পাচ্ছি না। যানবাহন পাওয়ার আশা না দেখে বাড়ি ফিরে যাচ্ছি।
যাত্রী সুরুজ আলী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, পরিবহণ শ্রমিক মালিকরা দেশের প্রচলিত আইনের তোয়াক্কা না করে জনগণকে জিম্মি করে আন্দোলন করছেন। তাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
সুনামগঞ্জ পরিবহণ শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক নূরুল হক জানিয়েছেন, কেন্দীয় নির্দেশে সারাদেশের ন্যায় সুনামগঞ্জেও ৮ দফা বাস্তবায়নে ৪৮ ঘন্টা পরিবহণ ধর্মঘট পালিত হচ্ছে। শ্রমিকরা স্বতস্ফুর্ত হয়ে ধর্মঘট পালন করছেন। আশা করছি কর্তৃপক্ষ পরিবহন শ্রমিকদের দাবি মেনে নিবেন।