২৬ অক্টোবর ২০১৮। শুক্রবারের সন্ধ্যাটি সত্যিকার অর্থেই সুনামগঞ্জের কীছু কীছু মানুষের কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকবে, যে-সৌভাগ্যবান ক’জন সেদিন শহীদ মুক্তিযোদ্ধা জগৎজ্যোতি পাবলিক লাইব্রেরিতে উপস্থিত ছিলেন। সন্ধ্যাটি ঐজ্জ্বল্যের বিশিষ্টতার দাবি রাখে এই জন্য যে, যাঁরা আমাদের জতীয় জীবনকে প্রকৃতার্থেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন এবং করেনও, সেদিন সন্ধ্যায় তাঁদের মধ্যে একজন আমাদের কাছে এসেছিলেন এবং আমাদের সঙ্গে মুখোমুখি কথা বলেছেন এবং আলাপচারিতার আয়োজনটিতে উপস্থিত আমাদের অন্তরঙ্গ মুহূর্তগুলো শেষ পর্যন্ত কীভাবে জানি শ্রোতার পক্ষে বক্তব্য শ্রবণের মন্ত্রমুগ্ধ নিগ্নতায় পর্যবশিত হয়ে পড়ে, সকলের অজান্তে। শ্রোতার এমন অপার্থিব মুগ্ধতা কোনও মতবিনিময়সভার লক্ষণ হতে পারে না। কিন্তু প্রকারান্তরে তাই হয়েছে। তাই বলি, সুনামগঞ্জে একটি ব্যতিক্রমী মতবিনিময়সভা হয়ে গেল। বক্তা ছিলেন ঘাতক দালল নির্মূল কমিটির উপদেষ্টা শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক।
ব্যতিক্রম এই কারণে যে, জাতীয় জীবনের ভালমন্দ, গতিপ্রকৃতি, উন্নতি-অবনতি, ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনা নির্ণিত হয় যেখানে সেখানের মানুষেরা সাধারণ মানুষের জীবনের নিয়ন্ত্রক, এককথায় রাষ্ট্র-সমাজ-দেশের নিয়ন্তা। এই নিয়ন্ত্রণে কার কী ভূমিকা সাধারণ মানুষ তা জানতে পারেন না কোনও দিনই। কারণ জাতীয় ইতিহাসের নাট্যমঞ্চে তাঁদের নেপথ্য ভূমিকার উন্মোচন ঘটে না কখনও। বিশেষ করে বিচার বিভাগের বিচারপতিদের বিভিন্ন আইন প্রবর্তন থেকে উদ্ভূত সুবিধাকে নিয়ন্ত্রণের রাজনীতিক তৎপরতা সাপেক্ষে রাজনীতিক ও বৈচারিক নৈতিকতার সমন্বয়-বিরোধের প্রকৃত প্রপঞ্চটিকে কোনওদিনই সাধারণ মানুষের অবগতির জন্য উন্মুক্ত হতে সাধারণত দেখা যায় না। সাধারণ মানুষ বিচারপতি নির্বাচন কিংবা নিয়োগ নিয়ে বিভিন্ন রাজনীতিক দল-উপদলের মধ্যে প্রকটিত রাজনীতিক টানাপোড়নকে প্রত্যক্ষ করে থাকেন। টানাপোড়নের রাজনীতিক নর্তনকুর্দন ভিন্ন নিয়োগ পরবর্তী কার্যক্রমের বিষয়ে সাধারণত কোনওদিনই সাধারণ মানুষ অবগত হতে পারেন না। কিন্তু আইনের বাধ্যবাধকতা মেনে তাঁরা হয় লাভ কিংবা ক্ষতি যে-কোনও একটার সম্মুখীন হন।
মতবিনিময় সভার পর্যালোচ্য প্রসঙ্গ ছিল, ‘একাদশ জাতীয় নির্বাচন : মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অভিযাত্রা’। সভায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিস্তারে বিদ্যমান বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা নিয়ে গভীর আলোচনা হয়েছে। সেটাই ছিল প্রত্যাশিত ও স্বাভাবিক। কিন্তু প্রধান অতিথির ভাষ্যে অন্যান্য যাবতীয় বিষয়ের সঙ্গে প্রসঙ্গক্রমে বিচারবিভাগে জায়মান মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতিবন্ধকতার স্বরূপটি প্রস্ফুটিত হয়েছে। মতবিনিময় সভা মনে করেন, জাতীয় জীবনে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নতকরণের লক্ষ্যে সে-প্রতিবন্ধকতা নির্মূল করা একটি জাতীয় কর্তব্য। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতিবন্ধক, মহান স্বাধীনতা ও সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক যে-কোনও মানসতার আমরা বিরোধিতা করি। রাষ্ট্র-দেশ-সমাজের নিয়ন্ত্রক-নীতিনির্ধাকগণের উচিত মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতিবন্ধকতাকে নির্মূল করা।