শহীদ নূর আহমেদ ::
বছর খানেক সময় ধরে বন্ধ আছে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার লক্ষণশ্রী ইউনিয়নের গোবিন্দপুর নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি। গ্রামীণ কোন্দল আর তহবিল সংকটের কারণে ২৭ বছরের পুরনো এই প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করছেন এলাকার সাধারণ মানুষ। ৭ থেকে ৮টি গ্রামের শিক্ষার্থীর বিদ্যা অর্জনের একমাত্র প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ হওয়ার ফলে ক্ষতির মুখে পড়েছেন এলাকার পিএসসি উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীসহ ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণী পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা। কয়েক কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে শিক্ষা গ্রহণ করতে হয় তাদের। সরকারি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের তৎপরতা বৃদ্ধি ও দায়িত্বশীলদের সক্রিয়তায় বিদ্যালয়টি আবারো শুরু করার তাগিদ শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও সচেতন মহলের।
জানা যায়, ১৯৮৯ সালে গ্রামের কিছুসংখ্যক ব্যক্তির উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয় বিদ্যালয়টি। প্রতিষ্ঠার পর থেকে গোবিন্দপুর গ্রামের ২৯ জন ব্যক্তির ওয়াকফকৃত সম্পত্তি ও জলমহালের আয় থেকে বিদ্যালয়ের শিক্ষক সম্মানি, অবকাঠামোগত ব্যয়, শিক্ষা উপকরণ ব্যয় নির্বাহ করা হত। এতে গোবিন্দপুর, কলাইয়া, কাঠইর, মদনপুর, দেওয়াননগর, তাজপুরের দরিদ্র ও নিম্নবিত্ত পরিবারের ছেলে মেয়েরা বিনা বেতনে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশুনা করার সুযোগ পায়। দীর্য ২৭ বছরের পথ পরিক্রমায় এই বিদ্যাপীঠটি শিক্ষার আলো ছড়িয়ে যাচ্ছিল বিরামহীন ভাবে। কিন্তু আইনি জটিলতার কারণে ওয়াকঅফকৃত সম্পত্তি ও জলমহালের আয় বন্ধ হওয়ায় বিদ্যালয়ের তহবিল ঘাটতি দেখা দেওয়া গ্রামীণ কোন্দলের ফলে গত বছরের শেষ দিকে বিদ্যালয়টি বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমানে খুব নাজুক অবস্থা বিদ্যালয়ের টিনসেটের ভবনটি। ঝড় তুফানে ভেঙ্গে গেছে টিনের বেড়া। অবাধে যাতায়াত করছে কুকুর, গরু, ছাগলসহ নানা প্রাণী। বৃষ্টিবাদলের দিনে টিনের ছিদ্র দিয়ে বৃষ্টি পরে শ্রেণীকক্ষে। বৃষ্টির পানিতে নষ্ট হচ্ছে অযতেœ রাখা বেঞ্চ, টেবিলসহ প্রয়োজনীয় আসভাবপত্র। দরজা জানালা খোলা থাকায় চুরি হয়ে যাচ্ছে বিদ্যালয়ের মূল্যবান জিনিসপত্র। রাতে বিদ্যালয়টি মাদকসেবীদের নিরাপদ স্থানে পরিণত হয়েছে। এমন অবস্থায় বিদ্যালয় ভবনটি ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করে কয়েক গ্রামের শিক্ষার মানন্নোয়নে পুনঃরায় প্রতিষ্ঠানটি চালু করতে সংশিষ্ট মহলকে তাগাদা জানিয়েছেন শিক্ষার্থী অভিভাবক ও এলাবাসী।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানান, গোবিন্দপুর নি¤œ মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি দীর্ঘ ২৭ বছর শিক্ষার আলো ছড়িয়ে আসছিল। গ্রামীণ কোন্দল ও দায়িত্বশীলদের অবহেলার কারণে বিদ্যালয়টি ১ বছর যাবৎ বন্ধ আছে। গ্রামে একটি প্রতিষ্ঠান থাকা সত্ত্বেও দুর-দদুরান্তে গিয়ে ছেলে মেয়েরা পড়াশুনা করেন। তারা জানান, গ্রামে অনেক বিত্তবান আছেন যারা চাইলে জলমহালের আয় ছাড়াও নিজস্ব অনুদান দিয়ে প্রতিষ্ঠানটিকে আবার চালু করতে পারেন।
সাংবাদিক ফুয়াদ মনি বলেন, গ্রামের কোন্দাল আর তহবিল সংকটের কারণে বিদ্যালয়টির শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। তবে সম্প্রতি জলমহাল সংক্রান্ত একটি মামলায় স্কুলের পক্ষে এসেছে। বিদ্যালয়টি চালুর জন্যে গ্রামের বিশিষ্টজনদের মধ্যে একাধিক বৈঠক হয়েছে। সবাই বিদ্যালয়টি চালুর ক্ষেত্রে আন্তরিক । আশা করছি আগামী বছর প্রতিষ্ঠানটি শুরু হবে।
বিদ্যালয় বন্ধের ব্যাপারে জেলা শিক্ষা অর্ফিসার জাহাঙ্গীর আলম জানান, গোবিন্দপুর নি¤œ মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি বন্ধ হওয়ার বিষটি খুবই দুঃখজন। স্থানীয়দের উদ্যোগে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি চলে আসছিল। বিদ্যালয়ের দায়িত্বশীল ও শিক্ষা প্রশাসনের মধ্যে সমন্নিত প্রচেষ্ঠা না থাকায় বিদ্যালয়টি এমপিউভূক্ত হয়নি।
তিনি বলেন, আমি নতুন এসেছি। বিদ্যালয়ের দায়িত্বশীলরা কেউই আমার সাথে যোগাযোগ করেননি। স্থানীয় দায়িত্বশীলরা যদি বিদ্যালয়টি আবার চালু করার উদ্যোগ নেন তাহলে আমার পক্ষ থেকে সহযোগিতার করা হবে।