হাওরে যাকে বলে গণমৎস্যনিধন চলছে। অন্তত গতকালের দৈনিক সুনামকণ্ঠের প্রতিবেদন থেকে এমনি একটা ধারণা পাওয়া যায় যখন সংবাদে বলা হয়, ‘… কৌশলী মৎস্যজীবিরা মাছের বংশ নিধনকারী কারেন্ট জাল পেতে মাছ ধরছে।’ মাছের বংশনিধনকারী মাছ ধরার পদ্ধতি আরও আছে। যেমন মাশারি দিয়ে নির্মিত জাল দিয়ে মাছ ধরা, পাট্ট্যার বাঁধবেড় দিয়ে মাছ ধরা ও বিভিন্ন স্থানে বিল, ডুবা ইত্যাদি মৎস্যাধার সিঞ্চন করে পুরোপুরি শুকিয়ে মাছ ধরা। কারেন্ট জালসহ এই কটি পদ্ধতিতে মাছ ধরার সবকটি পদ্ধতিই সর্বপ্রকার মৎস্যনিধনের পদ্ধতি হিসেবে বিখ্যাত ও ভংঙ্কর। সনাতন মাছ মারার পদ্ধতিগুলো চরিত্রগতভাবেই এমন যে, সে-সব পদ্ধতিতে যে-কোনও জলাশয়ের মাছ সম্পূর্ণভাবে, অর্থাৎ একটিও মাছ অবশিষ্ট না রেখে মারা যায় না। কিন্তু কারেন্ট জাল, মশারির জাল, পাট্ট্যা বাঁধবেড় দিয়ে মাছ মারা ও জল শুকিয়ে মাছ মারার পদ্ধতি এমন যে, যে-কোনও জলাশয়ের, বলতে গেলে, একটিও মাছ অবশিষ্ট থাকে না। সম্পাদকীয় নিবন্ধে বিষয়টি বিস্তৃতভাবে বর্ণনা করার কোনও অবকাশ নেই। কেবল জানিয়ে রাখি যে, জলাশয়ে মাছ অবশিষ্ট না থাকার কারণে মাছ প্রজাতি বিলুপ্তায়নের শিকার হয়, অর্থাৎ মাছের বংশবিস্তার সম্ভব হয় না অর্থাৎ বংশবিস্তার করার মতো কোনও মাছই জলাশয়ে অবশিষ্ট থাকে না। এর প্রত্যক্ষ প্রতিক্রিয়া হিসেবে প্রাকৃতিক জলাধারগুলোতে পর্যাপ্ত মৎস্য উৎপাতিত হয় না এবং বাজারে মাছের যোগানের সংকোচনের উদ্ভব ঘটে। এইভাবে চলতে থাকলে কোনও এক সময় প্রাকৃতিক জলাশয়গুলো মৎস্যশূন্য মিঠা পানির জলাশয়ে পরিণত হওয়ার দুর্ভাগ্য অর্জন করবে, তাতে কোনও সন্দেহ নেই।
পত্রিকার প্রতিবেদন বলছে, এই মাছের বংশ ধ্বংস করার প্রতিকার করতে জেলা মৎস্য বিভাগ ‘একশনে’ নেমেছে। তারা কারেন্ট জাল ধরে জ্বালিয়ে ধ্বংস করে দিচ্ছেন। তাঁদেরকে ধন্যবাদ জানাই। কিন্তু গ্রামে গ্রামান্তরে পাট্ট্যাবাঁধ ও মশারি জাল দিয়ে কিংবা জলাশয় শুকিয়ে মাছ মারা ইত্যাদি তৎপরতাকে প্রতিরোধ করতে মংস্য বিভাগের তৎপরতা বৃদ্ধি না করা গেলে ‘মাছের বংশ ধ্বংসকরণকে প্রতিরোধ করা যাবে না এবং এখনি কার্যকর ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে না পারলে মাছের জন্য পৃথিবী বিখ্যাত মাছের দেশ বাংলাদেশ ভবিষ্যতে একটি মৎস্যশূন্য প্রাকৃতিক জলাধারের দেশে পরিণত হবে। মনে করিয়ে দেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করছি যে, ‘মাছে ভাতে বাঙালি’র ঐতিহ্যিক পরিচয় ইতোমধ্যে বিলুপ্তির দ্বার প্রান্তে উপনীত। মাছের অভাবে সকল বাঙালি এখন আর আগের মতো প্রতিদিন মাছ খেতে পান না।