বড় বেশি কষ্ট হয়। যখন দেখি লক্ষ-কোটি টাকা খরচ করে কোনও দালান বানিয়ে তা ফেলে রাখা হয়েছে। কোনও কাজে লাগছে না । যে-কাজে লাগার কথা ছিল সে কাজটি করা হচ্ছে না বা বন্ধ রাখা হচ্ছে । এর কারণ নাকি ‘কর্তব্যরতদের দায়িত্বে অবহেলা’। গতকালর দৈনিক সুনামকণ্ঠের একটি সংবাদশিরোনাম ছিল, “ছাতকে চরমহল্লা পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের বেহাল দশা ॥ কর্তব্যরতদের দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ”। সত্যি চমৎকার বটে! এর চেয়ে চমৎকার বোধ করি এই বিশ্বভুবনে আর কীছু হতে পারে না। কিন্তু যদি এই দায়িত্ববানরা নিজেদের বেতন তোলার ক্ষেত্রে দায়িত্ব পালনে এইভাবে ‘অবহেলা’ করতেন তবে বোধ করি মন্দ হতো না। এই পরিপ্রেক্ষিত বিবেচনায় এনে বলা যায় যে, কাজ না করে বেতন উত্তোলনের ক্ষেত্রে তাঁরা অবশ্য বেশি পারদর্শিতা প্রদর্শন করছেন।
দেশের অন্যান্য স্থানে পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের অবস্থা কেমন সেটা নিয়ে এখানে আলোচনার কোনও অবকাশ নেই। আপাতত চরমহল্লার পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রটির আজুক অবস্থা নিয়ে কেবল একটি কথা বলতে চাই, এবং সে-কথাটি হলো : প্রকৃতপ্রস্তাবে দেশে পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র যে-উদ্দেশ্যে প্রতষ্ঠিত করা হয়েছে সেই-উদ্দেশ্যটি যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হোক। পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য হলো, প্রত্যন্ত গ্রামের সাধারণ মানুষের সাধারণ চিকিৎসার নিশ্চিতা বিধান। আর কিছু না। কিন্তু সরজমিনে গিয়ে দেখা দেছে, দূর-দূরান্তের চিকিৎসা প্রার্থীরা পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে এসে চিকিৎসক না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন। বিশ্বের অন্যান্য দেশে চিকিৎসা সেবা এতো সহজ করা হয়েছে যে, সেখানে চিকিৎসক রোগীকে খোঁজে ফিরছেন, আমাদের দেশে পুলিশ যেমন আপরাধীকে খোঁজে বেড়ায়। বাংলাদেশে বিষয়টা একেবারেই উল্টো । এখানে চিকিৎসক চোরের মতো পালিয়ে বেড়াচ্ছেন রোগীর কাছ থেকে। বাংলাদেশের চিকিৎসাব্যবস্থার ব্যবসা করার (অর্থাৎ টাকা উপার্জনের) দিকটির কথা এখানে অপ্রাসঙ্গিক করেই রাখছি । এই অবস্থা সরকারের স্বাস্থ্যসেবা সাধারণের দোর গোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার মহৎ প্রতিশ্রুতির সম্পূর্ণ পরিপন্থী, তাতে কোনও সন্দেহ নেই। সাধারণ মানুষের এই দুর্ভোগ কোনওভাবেই কারও কাম্য হতে পারে না। পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের জন্য বানানো ভবনটি চিকৎসাসেবা প্রদানে ব্যবহৃত না হয়ে সমাজে রোগের দুর্ভোগ বাড়িয়ে তুলছে এবং কেই কেউ কেউ হয় তো চিকিৎসার অভাবে মারও যাচ্ছেন। অন্যদিকে বখাটেদের আখড়া হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে পুরো সমাজটাকেই অসুস্থ করে তুলতে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে।
আসলে কথা একটাই । পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র যে-উদ্দেশ্যে প্রতষ্ঠিত করা হয়েছিল, সেই-উদ্দেশ্যটি যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে না। এটা হতে পারে না। রাষ্ট্রকে এইভাবে ব্যর্থ করে দেওয়ার কারও কোনও অধিকার নেই। অচিরেই এর একটি বিহিত ব্যবস্থা করা উচিৎ। এর অন্যথা হওয়ার কোনও উপায় নেই।