বিশেষ প্রতিনিধি ::
উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করেই সুনামগঞ্জ শহরে চলাচল করছে ব্যাটারি চালিত ইজি বাইক। গত এক সপ্তাহ ধরে আবারও শহরের অলিগলিতে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে এই যানটি। পৌর কর্তৃপক্ষ বলছে, আদালতের আদেশ অমান্য করে একটি চক্র চালক ও মালিকদের ইজি বাইক চলাচলে উস্কানি দিচ্ছে এবং রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল করতে চায়।
জানা যায়, গত কয়েক বছর ধরে সুনামগঞ্জ শহরে শুরু হয় ব্যাটারি চালিত ইজি বাইক। প্রথমে সংখ্যা কম থাকলেও পরে তা দুই হাজার ছাড়িয়ে যায়। এক পর্যায়ে শহরের বাইরে থেকে ঢুকা শুরু করে ইজি বাইক। ইজি বাইকের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় শ্রমিক ও মালিকরা সংগঠনও তৈরি করে ফেলেন। ইজি বাইকের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় শহরের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে তৈরি হয় তীব্র জানজট। যানজট তীব্র হলে পুরাতন কোর্ট থেকে ট্রাফিক পয়েন্টে হয়ে কালিবাড়ি মোড় পর্যন্ত ইজি বাইকের চলাচল বন্ধ করে দেয় পুলিশ প্রশাসন। কিন্তু তার পরও কমেনি যানজট। এদিকে দিন দিন বেড়ে যায় ইজি বাইকের দুর্ঘটনার সংখ্যাও। শহরের ষোলঘর পয়েন্টে বিশিষ্ট সমাজ সেবক মিঠুসহ বেশ কয়েকজন বেপরোয়া ইজিবাইকের চাকায় পিষ্ট হয়ে মৃত্যু বরণ করেন। ষোলঘর একই জায়গায় তিন বছরের এক শিশু একইভাবে নিহত হলে বিপদজনক এই বাহনটি বন্ধের দাবি উঠে। বাহনটি বন্ধের দাবিতে এক পর্যায়ে সড়ক অবরোধ, মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচি পালন করে সমাজের নানা শ্রেণি পেশার মানুষ। বেশ কিছু দিন আগে মুজিবুর রহমান পীর নামের একজন সুনামগঞ্জ শহরের ইজি বাইক বন্ধের জন্য উচ্চ আদালতে রিট করেন। পরে উচ্চ আদালত থেকে জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও পৌর কর্তৃপক্ষকে ইজি বাইক বন্ধের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। দিন পনের আগে উচ্চ আদালতের নির্দেশে শহরের ইজি বাইক চলাচল বন্ধের উদ্যোগ কার্যকর হয়। ইজি বাইক চলাচল বন্ধের পর বেশ কিছু সিএনজি গ্যাস চালিত অটো রিকশা সড়কে নেমেছে। নতুন নতুন রিকশা শহরে নামছে বলে জানিয়েছেন গ্যারেজ মালিকরা।
সম্প্রতি হঠাৎ করেই শহরের ইজি বাইক চলাচল শুরু করে। ষোলঘর, নবীনগর, মোহাম্মদপুর, কাজিরপয়েন্ট, নতুনপাড়াসহ বিভিন্ন সড়কে উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ব্যাটারি চালিত এই যানটি চলাচল করছে। রোববার রাতেও শহরের ষোলঘর এলাকায় বেপরোয়া ইজি বাইকের ধাক্কায় একজন আহত হয়। শহরের হাসননগর এলাকার কবি আশরাফ শাহিন বলেন, ইজি বাইক একটি বেপরোয়া যান, উচ্চ আদালত এর আগে সব মহাসড়কে এই বাহন বন্ধের নির্দেশ দেন। শহরে ইজি বাইকের চাপায় অনেকের মৃত্যু হয়েছে এবং গত কয়েক বছরে যানজট বেড়ে গেছে। সাময়িক কষ্ট হলেও যানজট, মৃত্যু ঝুঁকি এড়াতে বাহনটি বন্ধ করা উচিত। মিজানুর রহমান নামের এক যাত্রী বলেন, ইজি বাইকের আবিস্কারক চীন কিন্তু তাদের দেশে এই যান অবৈধ, তাদের এই আবিস্কার আমাদের প্রান যেমন কেড়ে নিচ্ছে, তেমনি বিদ্যুতেরও অপচয় হচ্ছে। তবে, এক চালক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, জীবিকার তাগিদেই শহরের ছোট ছোট গলিতে গাড়ি চালাচ্ছি, যদি গাড়ি না চালাই, তাইলে পরিবার নিয়ে না খেয়ে থাকতে হবে। যদি শহরের বাইরের গাড়ি না আসতো তাইলে যানজটও অনেক কমে যাইতো।
পৌর মেয়র নাদের বখ্ত বলেন, উচ্চ আদালতের নির্দেশে শহরে ইজি বাইক চলাচল বন্ধ করা হয়েছে। কিন্তু গত কয়েকদিন ধরে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বেশ কিছু সড়কে যানটি চলাচল করছে। একটি মহল রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্য মালিক-চালকদের উস্কানি দিচ্ছে। মহলটি নিজেও আদালতের আদেশ অমান্য করছে এবং মালিক-শ্রমিকদের বিপদগামী করছে।