শামস শামীম::
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক, সুনামগঞ্জ) প্লট নিয়ে শিল্পকারখানা গড়ার প্রতি স্থানীয় উদ্যোক্তাদের আগ্রহ নেই। জেলার বাইরের উদ্যোক্তারা মোট বরাদ্দকৃত প্লটের অর্ধেক বরাদ্দ নিয়ে রাখলেও তারাও প্রান্তিক জেলা হিসেবে উৎপাদন ও বাজারজাত ব্যয় অতিরিক্ত হওয়ার ভয়ে শিল্পকারখানা গড়ছেন না। সম্প্রতি প্লটের মূল্য তিনগুণ বৃদ্ধি পাওয়ায় অলস পড়ে থাকা প্লটগুলোও বরাদ্দ নিচ্ছেনা কেউ। সংশ্লিষ্টরা স্থানীয় চেম্বার অব কমার্স, জেলা পরিষদ, জেলা প্রশাসন, উপজেলা পরিষদসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে প্লট বরাদ্দ ও বরাদ্দকৃদ প্লটে শিল্পকারখানা গড়ে তোলার সহায়তা চাইলেও তাতেও সাড়া মিলছেনা। ফলে যে লক্ষ্যে বিসিক চালু হয়েছিল তাতে কাঙ্খিত ফল পাওয়া যাচ্ছেনা।
সুনামগঞ্জ বিসিক শিল্পনগরী সূত্রে জানা যায়, ব্যবসায়ী পণ্যের আমদানি-রপ্তানি বৃদ্ধি এবং জেলার ব্যবসার মানোন্নয়নের লক্ষ্যে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন (বিসিক) শিল্পনগরী ১৯৯০-২০০৭ সালে প্রকল্প কার্যক্রম শুরু হয়। ১৬.১৫ একর জায়গা নিয়ে শহরের ওয়েজখালিতে সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কের পাশেই প্রকল্পটি অবস্থিত। প্রকল্পে ১০ ও ৭ শতকের ১২০টি প্লট রয়েছে। এর মধ্যে অফিস ও অন্যান্য কাজে ব্যবহৃত চারটি বাদে ১১৬টি প্লট বরাদ্দযোগ্য। প্রকল্প শুরুর পর এ পর্যন্ত ৮৬টি প্লট বরাদ্দ হয়েছে। এখনো ৩০টি প্লট বরাদ্দের অপেক্ষায় আছে। বরাদ্দকৃত প্লটে ৪৭টি শিল্প ইউনিটের মধ্যে বর্তমানে চালু আছে ২২ টি। নির্মাণাধীন শিল্প ইউনিটের সংখ্যা ১০ টি এবং এবং নির্মাণ অপেক্ষায় আরো ১৪টি রয়েছে। একটি ইউনিটে শিল্পপ্রতিষ্ঠান চালুর পরই স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। বর্তমানে ২২টি প্লটে শিল্প কার্যক্রম চালু থাকলেও কোন ভারী ও কর্মমূখী শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠেনি। ইউনিটগুলোতে কনফেকশনারী, পানি, আটা-ময়দা-সুজি, চিড়া-মুড়ি এবং ক্ষুদ্র গার্মেন্ট, মেশিনারিজ শিল্প চালু আছে। ক্ষুদ্র এ প্রতিষ্ঠানগুলোতেও স্থানীয়ভাবে তেমন কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়নি বলেও অভিযোগ আছে। দেশের বাইরে বা জেলার বাইরে বাজারজাত যায় এমন পণ্যও উৎপাদন হচ্ছেনা এখানে। সূত্র জানিয়েছে বরাদ্দকৃত মোট প্লটের মধ্যে অর্ধেকের বেশি সুনামগঞ্জ জেলার বাইরের নাগরিকরা নিয়েছেন। তারা প্রথমে প্লট নিলেও দুর্গম যোগাযোগ ও দূরত্বের কারণে বাজারজাত ও উৎপাদন ব্যয়হুলের কথা বলে প্লটগুলো ফেলে রাখছেন। দেশের প্রান্তিক জনপদ হিসেবে এখানে কারখানা স্থাপন, উৎপাদন ও বাজারজাতে অধিক ব্যয় হয় বলে জানিয়েছেন বাইরের ব্যবসায়ীরা। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন গ্যাস সংযোগ না থাকায় এবং প্লটের মূল্য তিনগুণ বৃদ্ধি পাওয়ায় স্থানীয় উদ্যোক্তারা প্লট বরাদ্দ নিতে ও শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়তে আগ্রহী নন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, শুরুর দিকে প্রতিটি প্লটের প্রতি শতক ভূমির দাম ছিল মাত্র ৫১ হাজার টাকা। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে তা বেড়ে হয়েছে ১ লাখ ২৭ হাজার। ফলে নতুন করে আর কেউ প্লট নিতে চাচ্ছেন না। গত ৮ আগস্ট বরাদ্দের অপেক্ষায় থাকা ৩০টি প্লট বরাদ্দের লক্ষ্যে সহায়তার জন্য সুনামগঞ্জ বিসিকের উপ-ব্যবস্থাপক সৈয়দ বখতিয়ার উদ্দিন আহমদ সুনামগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স, জাতীয় ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সমিতি, সভাপতি বিসিক শিল্প মালিক সমিতি, জেলা প্রশাসক, সুনামগঞ্জ পৌর মেয়রের কাছে পত্র দিয়েছেন।
সুনামগঞ্জ চেম্বার অব কমার্সের সহসভাপতি সজীব রঞ্জন দাশ বলেন, সুনামগঞ্জ বিসিক শিল্পনগরীতে উৎপাদনমূখী প্রতিষ্ঠান গড়তে গ্যাস সংযোগের প্রয়োজন। কিন্তু এটাই নেই বিসিকে। তাই স্থানীয় উদ্যোক্তাদের আগ্রহ কম। তাছাড়া সম্প্রতি প্লটের মূল্য তিনগুণ বৃদ্ধি পাওয়ায় উদ্যেক্তারা আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। তিনি বলেন, প্রান্তিক জনপদ হিসেবে এখানে উৎপাদন ও বাজারজাত দুইটায় ব্যয়বহুল। যার ফলে অনেকে ভারী প্রতিষ্ঠান গড়তে আগ্রহী নন। সরকারিভাবে বিশেষ ঋণ সহায়তা দেওয়া হলে ব্যবসায়ীরা উদ্যোগী হবেন।
সুনামগঞ্জ বিসিকের প্রমোশন কর্মকর্তা মোঃ ফজলুল করিম বলেন, আমাদের বিসিক শিল্পনগরী এখনো উৎপাদনে আসতে পারেনি। হাল্কা কিছু প্রতিষ্ঠান উৎপাদনে আসলেও বড় প্রতিষ্ঠান বা উদ্যোক্তারা বিনিয়োগ করছেন না। স্থানীয় উদ্যোক্তারাও আগ্রহী নন। বাইরের অনেক উদ্যোক্তা প্লট নিয়ে রাখলেও প্রান্তিক জেলা হিসেবে উৎপাদন ও বাজারজাত অতিরিক্ত হবে এই আশঙ্কায় তারাও উৎপাদনে আসছেন না। শিল্পকারখানা গড়ে তোলা ও বরাদ্দের অপেক্ষায় থাকা প্লটগুলো বরাদ্দে সহযোগিতার জন্য আমরা চেম্বার অব কমার্সসহ স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতা চেয়েছি।