1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
  3. [email protected] : wp-needuser : wp-needuser
বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৭:২৪ অপরাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

৬ নদী খননে ২০৭ কোটি টাকার বরাদ্দ : নক্সা মেনে কাজ না করিয়েই বিল ছাড়ের আবেদন ঠিকাদারদের

  • আপডেট সময় সোমবার, ১ অক্টোবর, ২০১৮


শামস শামীম::

‘হাওর এলাকায় আগাম বন্যাপ্রতিরোধ ও নিষ্কাশন উন্নয়ন প্রকল্পে’ জেলার ৬টি নদী খননের কাজে ধীরগতি লক্ষ্য করা গেছে। প্রাক্কলণ অনুযায়ী কাজ না করে কাজ হয়েছে মর্মে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে চিঠি দিয়েছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানগুলো। সেই চিঠিতে পুরো বিল ছাড়ের আবেদন করেছে তারা। কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ড ঠিকাদারদের পোস্ট ওয়ার্ক (কাজ পরবর্তী) প্রতিবেদন প্রত্যাখান করে প্রিওয়ার্ক (প্রাক্কলন) অনুযায়ী নির্দিষ্ট ডিজাইনে কাজ শেষ করার লিখিত চিঠি দিয়েছে। ৬ টি নদী খননের মধ্যে একটি প্যাকেজের কাজের মেয়াদ ইতোমধ্যে শেষ হয়ে গেছে। একটি আগামী মাসে, একটি ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসে এবং একটির কাজ আগামী বছরের মে মাসে শেষ হওয়ার কথা। এদিকে নির্দিষ্ট ডিজাইনে খনন কাজ শেষ না করেই কাজ হয়েছে মর্মে পোস্ট ওয়ার্ক রিপোর্ট দেবার পর পানি উন্নয়ন বোর্ড সরেজমিন নদীগুলো যান্ত্রিক পদ্ধতিতে নীরিক্ষা করে দেখেছে প্রিওয়ার্ক অনুযায়ী এখনো কোনটিরই কাজ শেষ হয়নি। তারা সংশ্লিষ্টদের নক্সা মেনে কাজ শেষ করার লিখিত জানিয়েছে।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮-২০১৯ সালের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির আওতায় ‘হাওর এলাকায় আগামী বন্যা প্রতিরোধ ও নিষ্কাশন প্রকল্প’ ৬টি নদী খননের উদ্যোগ নেয় সরকার। সুনামগঞ্জ পওর (পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণ) বিভাগ-১ এর অধীনে, সীমান্ত নদী রক্তি ৬ কি.মি. আপার বৌলাই ১৬.কি.মি, যাদুকাটা নদী ৬.০০ কি.মি থেকে ১২.১২৫ কি.মি খননকাজ চলছে। পওর বিভাগ-২ এর অধীনে পুরাতন সুরমা, নলজুর ও চামতিসহ দুই বিভাগের অধীনে মোট ৬ নদী খননে প্রায় ২০৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে সরকার।
সরকার হাওরের কৃষির স্বার্থে ভরাট হয়ে যাওয়া নদী গুলো খননে দুটি বিভাগে ২০৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে বলে জানা গেছে। রক্তি নদীর ০ কি, থেকে ৬ কি. পর্যন্ত খননের ১০ কোটি ৭০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ২০১৭ সালের ২৬ জুন থেকে কাজ শুরু করে গত ৩০ আগস্ট পর্যন্ত কাজ হয়েছে ৫৯ ভাগ। এই প্রকল্পের কাজ গত ৩০ জুন শেষ হওয়ার কথা ছিল। আপার বৌলাই ০ কি.মি থেকে ১৬ কি.মি পর্যন্ত ৩৪ কোটি ৪১ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। আগামী মাসের ১৮ অক্টোবর কাজ শেষ হওয়ার কথা। এ পর্যন্ত কাজ হয়েছে ৭৭ ভাগ। যাদুকাটা নদী ৬ কি.মি থেকে ১২.১২৫ কি.মি. পর্যন্ত খননে ১২ কোটি ৪৫ লাখ টাকার বরাদ্দের মধ্যে ৪২ ভাগ করা শেষ হয়েছে। রক্তি, যাদুকাটা, পুরান সুরমা, চামতি এবং নলজুর নদীর ৪৪৮০টি ক্রসসেকশন খননে আরো ৭২ লক্ষ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। এর মধ্যে কাজ হয়েছে মাত্র ৫৭ ভাগ। কাজ অনুপাতে ইতোমধ্যে অর্থ ছাড় বেশি দেওয়া হলেও খননে বিলম্ব হচ্ছে বলে পাউবো সূত্রে জানা গেছে।
সম্প্রতি পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী পওর-১ মো. আবু বকর সিদ্দিক ভূঁইয়া সরেজিমন একটি বিশেষ উন্নত যন্ত্রের মাধ্যমে নির্দিষ্ট একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানকে নিয়ে ডিজিটাল মেশিন স্থাপন করে দেখেন কোন নদীতেই প্রিওয়ার্ক অনুযায়ী কাজ হয়নি। কাজ না করেই পোস্টওয়ার্ক রিপোর্ট দিয়ে পুরো বরাদ্দ পেতে আবেদন করে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানগুলো। কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ড সরেজমিন তদন্ত শেষে ঠিকাদারদের পোস্ট ওয়ার্ক প্রত্যাখান করে প্রিওয়ার্ক অনুযায়ী কাজ শেষ করার নির্দেশনা দিয়েছে। পাশাপাশি খননের সরেজমিন প্রতিবেদন উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবরে প্রেরণ করেছে। গত ৭ আগস্ট পোস্ট ওয়ার্ক পরিমাপ করে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে চিঠি দিয়ে নির্দিষ্ট ডিজাইন অনুযায়ী কাজ শেষ করার আহ্বান জানানো হয়েছে। চিঠিতে খননের ডিজাইন অনুযায়ী কাজ হয়নি বলে উল্লেখ করে যথাযত নিয়মে যথাসময়ে কাজ শেষ করার আহ্বান জানানো হয়।
পাউবো জানিয়েছে পওর বিভাগ-১ এর অধীনে রক্তি নদী খননের কাজ বাস্তবায়ন করছে মানিকগঞ্জ ড্রেজার পরিচালন বিভাগ। আপার বৌলাই খনন করছে এডিএস এনজেডকে জেভি, যাদুকাটা খনন করছে ওরিয়েন্ট ট্রেডিং এন্ড বিল্ডার্স লি.মি.। এছাড়া এই বিভাগের রক্তি, যাদুকাটা, আপার বৌলাই, পুরাতন সুরমা, চামতি, নলজুর নদীর ৪ হাজার ৪৮০টি ক্রস সেকশনে কাজ করছে সার্ভে এন্ড ডাটা কনসালটেন্ট নামের একটি প্রতিষ্টান।
পওর (পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণ) বিভাগ-২ এর অধীনে পুরাতন সুরমার ৯৯৮২.৪৬ লক্ষ টাকায় ৪০ কি.মি. খননের কাজ বাস্তবায়ন করছে একুয়া মেরিন ড্রেজিং লি.মি.। জগন্নাথপুরের নলজুর নদীর ১১০৮.৫১ লক্ষ টাকায় ১০ কি.মি. এবং চামতি নদীর ৪৬৭৪.৯২ লক্ষ টাকায় ১৭.২২৫ কি.মি খননের কাজ করছে ওরিয়েন্ট ট্রেডিং এন্ড বিল্ডার্স লি.মি। পাউবোর সরেজমিন প্রতিবেদন মতে এখনো কোন প্রতিষ্ঠান তাদের কাজ শেষ করতে পারেনি। পওর বিভাগ-২ এর অধীনে সর্বমোট ১৪৬ কোটি টাকারও বেশি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
হাওর বাঁচাও সুনামগঞ্জ বাঁচাও আন্দোলনের সভাপতি এডভোকেট বজলুল মজিদ চৌধুরী খসরু বলেন, আমরা সরকারকে নানা ফোরামে হাওরের ফসল ও প্রকৃতি রক্ষায় নদী খননের দাবি জানিয়ে আসছি। সরকার অবশেষে খনন কাজ শুরু করেছে। হাওর বাঁচাও সুনামগঞ্জ বাঁচাও আন্দোলনের নেতারা কয়েকটি খনন এলাকা ঘুরে দেখেছেন। কাজ হচ্ছে ধীর গতিতে। নির্দিষ্ট ডিজাইন অনুযায়ী কাজ শেষ করতে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আমরা মতবিনিময় করেছি।
খনন প্রতিষ্ঠান এডিএল এনজেড জেভি’র প্রকৌশলী খায়রুল মোমেন বলেন, আমাদের আপার বৌলাইর কাজ প্রায় ৮০ ভাগ শেষ হয়ে গেছে। আমরা প্রিওয়ার্ক দেওয়ার পরে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন আরো কিছু কাজ করার জন্য। আমরা এখন সেটা করছি। প্রাক্কলন অনুযায়ীই কাজ সম্পন্ন হচ্ছে বলে জানান তিনি।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী (পওর বিভাগ-১) মো. আবু বকর সিদ্দিক ভূঁইয়া বলেন, গত মাসে ঠিকাদারদের কাজ হয়েছে মর্মে পোস্ট ওয়ার্ক রিপোর্ট পাবার পরই বিশেষ যন্ত্রের মাধ্যমে পরীক্ষা করেছি নির্দিষ্ট একটি গবেষণা প্রতিষ্টানকে নিয়ে। ডিজিটাল এই রিপোর্ট এদিক সেদিক করার ক্ষমতা কারো নেই। আমাদের পরীক্ষায় এখনো নির্দিষ্ট ডিজাই (প্রিওয়ার্ক) অনুযায়ী কাজ হয়নি। আমরা এ রিপোর্ট প্রত্যাখান করে যথাসময়ে নির্দিষ্ট ডিজাইনে কাজ করার লিখিত চিঠি দিয়েছি। এই চিঠির অনুলিপি উর্ধতন কর্তৃপক্ষ বরাবরেও প্রেরণ করেছি।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com