সত্যিকার অর্থেই বন্দুকযুদ্ধ ও তাতে ব্যক্তি বিশেষদের নিহত হওয়ার নিরন্তরতার বিষয়টা, যে-কোনও দেশের জন্য যে-কোনও বিবেচনায়, গুরুতর ও জটিলই কেবল নয়, ভয়ঙ্কর অশুভও বটে। এমন একটি জটিল ও অমীমাংসিত বিষয় অনেক দিন যাবৎ একটি দেশে চলতে থাকা কোনও ভালো লক্ষণের পর্যায়ে পড়ে না। সাধারণভাবেই এই অশুভ কা-টি যে-কোনও বিবেকবান মানুষের চিন্তায় সমালোচনার উর্ধ্বে স্থান পেতে পারে না, কেউ তো এটিকে বিচারবহির্ভূত বলে বিবেচনা করে থাকেন।
পত্রিকায় প্রকাশ, গত ১৩৪ দিনে বন্দুকযুদ্ধে ২৫৫ জন নিহত হয়েছেন। আইন প্রয়োগকারী কোন প্রতিষ্ঠানের হাতে কতজন মারা গেলেন তার ফিরিস্তি এখানে জরুরি নয়। এখানে জরুরি বিষয়টি হলো, বন্দুকযুদ্ধের নিরন্তরতা। এই যুদ্ধের নিরন্তরতা মাদকপাচারের নিরন্তরতার ভয়াবহতার অশুভ সংবাদটিও বহন করে। বন্দুকযুদ্ধে মৃত্যু সংবাদ থেকে জানা যায়, মাদকবিরোধী অভিযানের কার্যকারিতা মাকব্যবসায়ীর মৃত্যু নিশ্চিত করতে পারলেও মাদকবাণিজ্যের বিস্তার রোধে কোনও কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছে না। বুঝাই যায়, অর্থাৎ সহজে বোধগম্য হয় যে, বাস্তবে অবস্থাটা যেমন ফলপ্রসূ হওয়ার কথা ছিল তেমন হয়নি। ঘটনা পরম্পরা অনুযায়ী মাদকব্যবসায়ীর লাশের সংখ্যা বাড়িয়ে মাদকবিরোধী অভিযানের সার্থতকতা প্রতিপন্ন হচ্ছে । মাদকব্যবসায়ীর মৃত্যুর পরিসংখ্যান বাড়ছে বটে কিন্তু মাদেকর ব্যবসা নির্মূল হচ্ছে না। নির্মূল হচ্ছে না তার প্রমাণ মাদকবিরোধী অভিযান প্রতিনিয়ত চলছে এবং সে-অভিযানে মাদকব্যবসায়ীর মৃত্যু হচ্ছে। এই বৃত্ত থেকে বেরিয়ে আসতে হবে বাংলাদেশকে। মাদক ব্যবসাকে প্রতিহত করতে না পারলে দেশের বৃহত্তর স্বার্থে মাদকবিরোধী অভিযানকে অব্যাহত রাখতেই হবে। সার্বিক বিবেচনায় এইরকম কর্মকা- বাংলাদেশের মতো একটি উন্নতিশীল দেশের গতিশীল অর্থনীতির জন্যে কোনও যুক্তিতেই মঙ্গলজনক নয়, এই সত্যটিকে ভুলে গেলেও চলবে না। চূড়ান্ত বিবেচনায় মাদকবিরোধী অভিযানের আরও কার্যকর বিকল্প চাই, যে-বিকল্প মাদকব্যবসায়ী নয় মাদকব্যবসাকেই হত্যা করবে এবং কার্যত রক্ষা করবে জাতীয় অর্থনীতিতে অসামান্য অবদান রাখতে পারে এমন কর্মক্ষম যুবসমাজকে, যে-যুবসমাজকে ধ্বংসের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত আছে মাদকবাণিজ্য।