গতকাল দেশে বিশ্ব পর্যটন দিবস উদযাপিত হয়ে গেল। দৈনিক সুনামকণ্ঠ লাকমা ছড়া নিয়ে একটি সংবাদ প্রতিবেদন প্রকাশের মাধ্যমে দায়মুক্তির নিশ্বাস ছেড়ে স্বস্তি লাভ করেছে। একটি দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পর্যটনশিল্পের বিকাশ নিয়ে হৈচৈ ভিন্ন অন্য কোনও অর্থবহ কাজ এ দেশে এ যাবৎকাল পর্যন্ত সম্পন্ন হয়েছে বলে মনে হয় না, যা সহজে দৃশ্যমান হতে পারে। কক্সবাজারের মতো সমুদ্র সৈকত পৃথিবীর আর কোথাও নেই। সেটা পর্যটনের স্বর্গভূমি না হয়ে চোরাচালানের স্বপ্নপুরীতে পর্যবশিত হয়েছে। মাদক স¤্রাটরা সেখানে রাজত্ব করে।
পৃথিবীতে এমন দেশ আছে, যে-দেশ পর্যটনশিল্পের পরিকল্পিত বিকাশ ঘটিয়ে উন্নত দেশের পর্যায়ে আসন করে নিয়েছে। বাংলাদেশ কেবল কক্সবাজার কেন্দ্রিক পর্যটনশিল্পের যথাযথ বিকাশ ঘটাতে পারলেই দেশকে উন্নত দেশের পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারে, এমনটি অনেকেই মনে করেন এবং সেটা বোধ করি খুব একটা ফালতু কথা নয়। তারপরে তো টাঙ্গুয়াকেন্দ্রিক, সমগ্র ভাটি অঞ্চলকে সম্পৃক্ত করে, একটি বিশাল বিস্তৃতির পর্যটনকেন্দ্র গড়ে ওঠার স্বর্ণসম্ভাবনা পড়েই রইল, কেবল চাই যথাযথ প্রযতœ ও বিজ্ঞানসম্মত পরিকল্পনার বাস্তবায়ন।
বাংলাদেশ এমন এক নিসর্গের দেশ, এর পুরোটই নৈসর্গিক সৌন্দর্যের এক অপার লীলাভূমি। কক্সবাজারের সমুদ্র, ভাটির হাওর ও হাওরের জলজপ্রকৃতি, গাছগাছলি, পাখি, মাছ সব কীছু মিলে পুরো বাংলাদেশটাই একটা পর্যটনক্ষেত্র। এর নৈসর্গিক সৌন্দর্যকে কেবল পর্যটনসুলভ অবকাঠামোর পরিকল্পিত বিন্যাসে বিন্যস্ত করতে হবে। সেটা একটু কঠিন হবে বটে, কিন্তু পৃথিবীতে বোধ করি কেবল বাংলাদেশেই এমন একটি অপূর্ব সম্ভাবনার ক্ষেত্র প্রকৃতিগতভাবে বিস্তৃত আছে, বিশ্বের অন্য কোথাও তা নেই। অন্য কোথাও টাঙ্গুয়ার মতো হাওর, মেঘনা-যমুনা-গঙ্গার সঙ্গমসহ অনন্য অববাহিকা নেই। অন্য কোনও দেশের বিলে কোড়া ডাকে না, নদীর মোহনায় ইলিশ ডিম পাড়ে না, ছয় কুড়ি বিলের নয় কুড়ি কান্দায় হিজল-করচের বন হয় না।
পৃথিবীতে সুন্দর বাংলাদেশ একটাই, বিশ্ববিরল এক বদ্বীপ। অস্ত্র ও মাদক ব্যবসায়ীরা যেটাকে আপাতত ইয়াবারাজ্য বানিয়ে রেখেছে, বন্দুকযুদ্ধ চলছে প্রতিনিয়ত। এই দেশটাকেই তো ইচ্ছে করলে একটি উত্তম পর্যটনকেন্দ্র বানানো যায়, গোটা দেশটাকেই তো অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে দেখবে বিশ্ববাসী, যখন কবি জীবনানন্দের চিত্রকল্পের বাংলাদেশ, বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা হয়ে উঠবে এই দেশ। রাজনীতিকে নয়, প্রকৃতপ্রস্তাবে অর্থনীতিটাকে বদলে দিতে হবে জনকল্যাণের দিকে, রাজনীতি বদলে যাবে এমনিতেই।