সোনাপুর বেদে পল্লীতে বিয়ের আসরে সংঘবদ্ধভাবে হামলা হয়েছে। কেবল হামলা নয়, হামলার সঙ্গে সঙ্গে ঘরবাড়ি ভাঙচুর ও লুটপাট হয়েছে, এমনকি কনের গায়ের গয়না লুট করে নিয়ে গিয়েছে দুর্বৃত্তরা। আহত হয়েছে কমপক্ষে ৩০ জনের মতো মানুষ। পত্রিকায় লেখা হয়েছে, ‘নববধূর স্বর্ণালঙ্কার লুটপাটসহ প্রায় দশ লক্ষাধিক টাকার ক্ষয়ক্ষতি করা হয়েছে।’
ঘটনাটি শ্রবণের পর কেন জানি মনে হয়, এ দেশের অনেক মানুষের মনে যৎসামন্য সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির যে-টুকু অবশিষ্ট ছিল সেটুকুও বোধ করি আর নেই, সামাজিক সম্প্রীতি সমাজ থেকে সম্পূর্ণ উধাও হয়ে গেছে। না হলে পার্শ্ববর্তী গ্রাম থেকে বিয়ের অনুষ্ঠান দেখতে এসে যুবকরা কেন বখাটে হয়ে পড়বে এবং অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী মেয়েদের উত্ত্যক্তকরণে উৎসাহী হয়ে উঠবে, প্রতিরোধের মুখে সংঘবদ্ধ হয়ে হামলা চালাবে আর সে হামলাকে আর্থিক স্বার্থ হাসিলের প্রাণিত হয়ে লুটপাটে মনোনিবেশ করবে? এই হামলাকে যে-কেউ বর্ণনা করতে পারেন নীচতা, অমানবিকতা ও নিষ্ঠুরতা বলে। বলতে পারেন এই অত্যাচারের কোনও তুলনা নেই অথবা যৎপরোনাস্তি নিন্দা করতে পারেন। কিন্তু এই হামলার মধ্যে যে সাম্প্রদায়িক হিংসার প্রকাশ ঘটেছে সেটা ভুলে গেলে চলবে না। সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে উৎপন্ন হিংসার উন্মত্ততাকে উৎখাত করতে না পারলে সোনাপুরে বিয়ের আসরে যে-বর্বর হামলা ঘটেছে তেমনি হামলা গ্রামান্তরে চলতেই থাকবে, এমন ভাবনাগ্রস্ত যে-কেউ হতেই পারেন। আর এমন ভাবনাগ্রস্ত হয়ে বিচলিত হলে তা বোধ করি খুব একটা অমূলক কীছু হবে না।
গ্রামসমাজে বিদ্যমান এই পরিপ্রেক্ষিতে আমরা কেবল আশা করতে পারি যে, শান্তিতে বসবাস করতে হলে, নিরাপদে জীবন নির্বাহ করতে হলে, সামাজিকভাবে এই সব বখাটে দুর্বৃত্তদেরকে প্রতিরোধের কার্যকর উপায় অবলম্বন ভিন্ন অন্য কোনও বিকল্প নেই, কিন্তু এই সামাজিক প্রতিকার প্রচেষ্টার সঙ্গে অবশ্যই যুক্ত হতে হবে প্রশাসনিক প্রযতœ, যাকে বলে, আইনি সহায়তা।