দেশের ভেতরে এখানে সেখানে অবৈধ, সমাজবিরোধী ও সমাজের জন্য যে-কোনও বিবেচনায় ক্ষতিকর কাজকারবার চলছেইÑ রাজধানীসহ সকল জেলা উপজেলা ও গ্রামান্তরে সবখানেইÑ অপ্রতিহত গতিতে। পত্রিকা খোললেই তার প্রমাণ মেলে। বাড়িঘর, জায়গাজমি, ফুটপাত, নদী সব কীছু দখল কিংবা জবরদখল করছে মানুষ। আইনের কোনও ধার ধারছে না মানুষ। সার্বিক বিবেচনায় সমাজটা প্রকৃতপ্রস্তাবে নিকৃষ্ট একটা অবস্থায় অবস্থান করছে। এক অর্থে বলা যায়, মানবিকতার মৃত্যু ঘটেছে।
প্রমাণ দিচ্ছি। পত্রিকায় প্রকাশ ৩৫ বছরের বিবাহিত পুরুষের কামনার শিকার এগারো বছরের কিশোরী অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েছে, অথচ এই শারীরিক পরিবর্তন সম্পর্কে তার বাস্তবিক কোনও বোধবুদ্ধিই নেই, নেই সমাজের ভ্রুক্ষেপ। সোনাপুর গ্রামে বেদেপল্লীর বিয়ের আসরে অনুষ্ঠান দেখতে এসে অন্য গ্রামের বখাটেরা টানাহেঁছড়া শুরু করে দিয়েছে নারীদেরকে এবং প্রতিরোধের সম্মুখীন হলে সংঘাত সৃষ্টি করে ৩০ জনকে আহত করেছে, এমনকি লুটপাট করতে ছাড়েনি। বড়গোপটিলা (বারিক্যার টিলা) কেটে সমতল করে দিচ্ছে লোকে, অথচ টিলাটি ব্যক্তিমালিকানার সম্পদ নয়, টাঙ্গুয়ার অস্তিত্ব সঙ্কটাপন্ন, জীববৈচিত্র্য নিধনসহ প্লাস্টিক দূষণের ক্ষতি থেকেও রক্ষা করা যাচ্ছে না। প্রতিনিয়ত চারপাশে এইসব বর্বর কর্মকা- বেড়েই চলেছে। গতকালের দৈনিক সুনামকণ্ঠ পাঠে জানা যায়, বিশ্বম্ভরপুরে সরকারি রাস্তা কেটে দেয়া হয়েছে, অবৈধভাবে সুরমা নদী থেকে মাটি তোলা হচ্ছে ড্রেজার দিয়ে, মাত্রাতিরিক্ত ক্ষতিকর ক্যাফেইন থাকায় এনার্জি ড্রিঙ্ক বিক্রি নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, সর্বত্র একটা হযবরল অবস্থা চলছে, এবং সেটাকেই সমাজ স্বাভাবিক বলে মেনে নিয়েছে। সম্প্রদায়, দল, উপদল চড়াও হচ্ছে বিপরীত মতবাদী সম্প্রদায়, দল, উপদলের উপর। মানুষ চড়াও হচ্ছে মানুষের উপর। সংঘাত দিনে দিনে বাড়ছে। ব্যক্তিতে ব্যক্তিতে সংঘাতের মাত্রাটা ছাড়িয়ে গেছে সকল ভব্যতার সীমা। ধর্ষিতা মেয়েটি কোনও বিচার পাচ্ছে না, সমাজ নির্বিকার, অথবা ক্ষেত্রবিশেষে ধর্ষকের পক্ষাবলম্বন করছে। অথচ ভুলে গেলে চলবে না যে, এ সমাজটি ২০১৮ সালের উন্নত পৃথিবীর মানবসভ্যতার একটি অংশ। বাণিজ্য এতোই শক্তিধর যে, এখানকার গ্রামের দরিদ্র কিশোরটির হাতেও একটি মোবাইল পৌঁছে গেছে। বিপরীতে আইন অপরাধ সংঘটিত হওয়ার আগে কোনও প্রতিরোধ নিয়ে মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারছে না, বরং পত্রিকায় পড়তে হচ্ছে, “দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে ড্রেজার মেশিন দিয়ে সুরমা নদী থেকে মাটি উত্তোলন করছিলেন সদর উপজেলার বল্লভপুর গ্রামের আব্দুল খালেকের ছেলে সাইদুল ইসলাম।” গত মঙ্গলবারের আগে দীর্ঘদিন আইন তাকে স্পর্শ করতে পারেনি। অর্থাৎ কেউ সমাজে প্রচলিত কোনও নিয়ম, রাষ্ট্রীয় আইন কিংবা কোনও ধর্মীয় বিধান পর্যন্ত মানছে না। বেআইনি কাজ করতে অনেকেই বেপরোয়া। অথচ দেশে আইন কিংবা ধর্ম নেই এমনও তো নয়। দেখা যাচ্ছে যে, দিনে পর দিন বেআইনি কাজ বা অন্যায় সংঘটিত হয়ে চলেছে, অথচ সমাজের পক্ষে ক্ষতিকর এইসব কর্মকা- সামাজিক বা প্রশাসনিক কোনও দিক থেকেই প্রতিবন্ধকতার সম্মুখিন হচ্ছে না। এইরূপ প্রশাসনিক বা সামাজিক নির্লিপ্ততার সুযোগে সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে অন্যায়, অত্যাচার, বেআইনি কাজ-কারবার চলতেই থাকবে। সামাজিক, রাজনীতিক ও বিশেষ করে প্রশাসনিক নির্লিপ্ততা কাটিয়ে কার্যকর তৎপরতা চালাতে না পারলে এই সামাজিক নিকৃষ্টতা থেকে মুক্তি লাভ করা সম্ভব হবে না।