গতকালের দৈনিক সুনামকণ্ঠে সুনামগঞ্জের জেলার সড়ক অবকাঠামোর বর্তমান অবস্থাকে প্রধান্য দিয়ে প্রতিবেদন করা হয়েছে। প্রধান প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল, “জেলার সাত অভ্যন্তরীণ সড়কের অবস্থা বেহাল”। পাশেই সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজের রাস্তাটি নিয়ে আরও একটি সংবাদ ছাপা হয়েছে। সেটির শিরোনাম ছিল, “কলেজ রোড : বেহাল সড়ক সংস্কার হবে কবে?” আর প্রথম কলামের শীর্ষদেশে ছাপা সংবাদের শিরোনামটি ছিল একটি উদ্ধৃতি, ‘বিটুমিন বাদ দিয়ে কংক্রিটের সড়ক নির্মাণ করুন’। উদ্ধৃতিটি পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের। প্রত্যেকটি সংবাদ সড়ক সংক্রান্ত। অর্থাৎ সব কটিতে মিলে সমস্বরে দেশের সড়ক অবকাঠামোর ভাঙাচুরা করুণ দশার প্রতিধ্বনি তোলছে।
প্রধান প্রতিবেদনটি পাঠ করে জেলার সড়ক অবকাঠামোর করুণ অবস্থা সম্পর্কে প্রাথমিকভাবে সম্যক জ্ঞান লাভ করতে পারেন যে-কোনও সচেতন পাঠক, তাতে কোনও সন্দেহ নেই। প্রকৃতপ্রস্তাবে এটা একটি সর্বসম্মত সত্য যে, জেলার বিভিন্ন দিকে যোগাযোগের জন্য নির্মিত কোনও সড়কের অবস্থাই বাস্তবক্ষেত্রে খুব একটা ভাল অবস্থায় নেই। বছর দিন বা বছর দুয়েক আগে যে-সড়কগুলো বিপুল টাকা ব্যয়ে নির্মাণ, মেরামত কিংবা সংস্কার করা হয়েছে সে-সড়কগুলো বর্তমানে ভেঙেচুরে যানবাহন, এমনকি লোক চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। সংবাদ বিবরণে বলা হয়েছে, “জেলার জনগুরুত্বপূর্ণ ৭টি অভ্যন্তরীণ সড়কের অবস্থা বেহাল। খানাখন্দে ভরা রাস্তা দিয়ে জেলা ও বিভাগীয় শহরে যাতায়াত করতে গিয়ে সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস উঠছে। দীর্ঘদিন ধরে রাস্তাগুলো সংস্কার না হওয়ায় চরম ক্ষুব্ধ সাধারণ মানুষ।” অর্থাৎ শেষ পর্যন্ত সাধারণ মানুষের ভোগান্তির কোনও শেষ নেই। বছরাধিক বা ক্ষেত্র বিশেষে বছর দুয়েক সময় যেতে না যেতেই নির্মিত, মেরামতকৃত ও সংস্কারকৃত রাস্তাগুলো অনিবার্যভাবে ব্যবহারোপযোগিতা হারায়। সারাদেশে সড়ক অবকাঠামো নির্মাণের ক্ষেত্রে এই বাস্তবতার কোনও অন্যথা হয় না। এক্ষেত্রে সর্বজন বিদিত একটি প্রকাশ্য গোপন সত্য এই যেÑ যে-সত্যকে কেউ প্রকারান্তরে অস্বীকার করেন না, কিন্তু আবার তার বিরুদ্ধে কোনও কার্যকর প্রতিরোধও তোলেন নাÑ সড়ক অবকাঠামো নির্মাণের ক্ষেত্রে ব্যাপক দুর্নীতি অব্যাহত আছে এবং প্রকারান্তরে এক শ্রেণির মানুষ আঙ্গুল ফুলে কলাগাছে পরিণত হওয়ার সুবর্ণ সুযোগ লাভ করছে। এই অবস্থা চলতে দেওয়া যায় না। রাষ্ট্রপক্ষকে এর বিহিত ব্যবস্থা নিয়ে প্রমাণ করতে হবে যে, রাষ্ট্র দুর্নীতিবাজদের নয়, সাধারণ মানুষের।
আর বিশেষ কীছু বলার অবকাশ আছে বলে মনে করি না। যা-ই বলি না কেন, সেটা কোনও না কোনওভাবে চর্বিতচর্বণের অধিক কীছু, অর্থাৎ নতুন কীছু বলা হবে বলে মনে হয় না। কেবল কামনা করি সড়কগুলোতে নির্মাণ, মেরামত ও সংস্কারের কাজ অচিরেই শুরু করা হবে এবং কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দুর্নীতিকে প্রতিরোধ করা হবে।