সুনামকণ্ঠ ডেস্ক ::
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আবার সরব রাজনৈতিক অঙ্গন। ছড়াছড়ি দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন জোট-মহাজোট-বৃহত্তর জোটের। এরইমধ্যে বেশ কয়েকটি জোটের আত্মপ্রকাশ হয়েছে। পুরনো জোট ছাপিয়ে হচ্ছে নতুন করে। সবার ‘টার্গেট’ নির্বাচনে জয়লাভ করা। এরমধ্যে কেউ কেউ নিজেরা ক্ষমতায় যেতে চায়। আবার কেউ কেউ জোটের রশি ধরে ক্ষমতার ভাগ পেতে চায়। তবে যতো জোট-মহাজোট-বৃহত্তর জোটই হচ্ছে, সবার একই বক্তব্য, স্বাধীনতার বিরোধিতাকারী ও দেশব্যাপী নাশকতায় জড়িত জামায়াতকে কেউ জোটে রাখবে না। এমনকি মৃত্যুদ-ে দ-িত যুদ্ধাপরাধীদের নেতৃত্বে থাকা দলটি বর্তমানে যে জোটে আছে, সেই ২০ দলীয় জোটের প্রধান দল বিএনপিও এ ব্যাপারে ¯পষ্ট করে কিছু বলছে না।
এ বিষয়ে জামায়াতের নেতৃত্ব কী বলছে? তাদের দাবি, কেউ কেউ প্রকাশ্যে দলটির বিরোধিতা করলেও অনেকেই অন্তরালে যোগাযোগ রাখছে। সেজন্য তারা এ নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছে না। কে জোটে রাখলো, কে রাখলো না, এটা আপাতত তাদের ভাবনার বিষয় নয়। তারা চুপচাপ সাংগঠনিক কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। নির্বাচনের পরিবেশ ভালো হলে অংশ নেবে নির্বাচনেও। সেটা হতে পারে কোনো জোটের সঙ্গে, আবার তাদের নিবন্ধন না থাকায় হতে পারে স্বতন্ত্র প্রার্থিতার খোলসেও।
ক্ষমতাসীন ১৪ দল ও বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দল দেশের সবচেয়ে বড় দুই জোট হলেও বর্তমান রাজনীতির মাঠে সবচেয়ে বেশি আলোচিত জোট হলো যুক্তফ্রন্ট ও জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া। দীর্ঘদিন আলোচনা আর বৈঠকের পর গত ১৫ সেপ্টেম্বর এই দুই জোট এক হয়ে ‘বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য’ গড়ে তাদের ৫ দফা দাবি ও ৯ দফা লক্ষ্য ঘোষণা করেছে। গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন ও বিকল্প ধারার সভাপতি ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বে এ ‘বৃহত্তর ঐক্যে’ যোগ দিয়েছেন স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলনকারী জেএসডি নেতা আ স ম আব্দুর রব, ডাকসুর সাবেক ভিপি ও নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না। আছেন বিএনপিপন্থি বুদ্ধিজীবী বলে পরিচিত গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীও।
ড. কামাল হোসেন ও ডা. বি চৌধুরীর জোটভুক্ত নেতারা সব সময়ই বলে আসছেন, বিএনপি তথা ২০ দলীয় জোটের সব দল নবগঠিত ‘বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যে’ আসতে চাইলে তাদের কোনো সমস্যা নেই। সমস্যা একটাই, সেটা হলো জামায়াত। ড. কামালের ¯পষ্ট বক্তব্য, জামায়াতকে জোটে নেওয়া হবে না। বিকল্প ধারার যুগ্ম-মহাসচিব মাহী বি. চৌধুরীও গণমাধ্যমে সবসময়ই বলে আসছেন, জামায়াতকে নিয়ে কোনো জোট হবে না। যদিও কয়েকদিন আগে যুদ্ধাপরাধের দায়ে আমৃত্যু কারাদ-প্রাপ্ত জামায়াত নেতা মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ছেলে শামীম সাঈদীর সঙ্গে মাহীর একটি ছবি ভাইরাল হয়েছে জানিয়ে এ বিষয়ে সংবাদ প্রকাশ হয় একটি অনলাইন নিউজপোর্টালে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ‘বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যে’ অন্যতম নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না গণমাধ্যমকে বলেন, জামায়াত এখন কোনো দল নয়। তাদের নিবন্ধন নেই। সুতরাং আমরা বিএনপির সঙ্গে জোট করলে তাতে জামায়াত কোনো ফ্যাক্টর নয়।
কামাল-বি. চৌধুরীর ‘বৃহত্তর ঐক্যে’ ২০ দলীয় জোটের অংশগ্রহণ ও জামায়াত ফ্যাক্টর বিষয়ে জানতে চাইলে কৌশলী উত্তর দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও জোটের সমন্বয়ক নজরুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, যুক্তফ্রন্ট কিংবা জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার কারও সঙ্গে জোট গঠন নিয়ে বিএনপির আনুষ্ঠানিক কোনো বৈঠক হয়নি। সুতরাং যখন আনুষ্ঠানিক বৈঠক হবে, তখন বোঝা যাবে তারা কী বলতে চান। আর জামায়াত নিয়ে তারা আমাদের কাছে এখন পর্যন্ত কোনো বক্তব্য দেয়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য মাওলানা আব্দুল হালিম বলেন, কে কার সঙ্গে জোট করলো সেটা দেখার বিষয় নয়। উদ্দেশ্য সবারই এক। সেটা হলো এই সরকারকে পরাজিত করা। এই মূল দাবির সঙ্গে আমরাও একমত। তাতে কেউ আমাদের জোটে রাখতেও পারে নাও রাখতে পারে। এটা নিয়ে আমরা চিন্তিত নই।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ভোটের মাঠে নামলেই বোঝা যাবে আসলে কার কতোটা জনসমর্থন আছে। বক্তৃতার চেয়ে জনসমর্থনটাই গুরুত্বপূর্ণ।