জামালগঞ্জ উপজেলার ফেনারবাঁক ইউনিয়নের মাতারগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে দায়িত্ব পালনে অবহেলা ও বিভিন্ন ধরনের অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। তিনি বিদ্যালয়ে না গিয়ে উপজেলা সদরে অবস্থান করে তাঁর নিজস্ব ব্যবসায় ও রাজনীতির কাজ চালান এবং বিদ্যালয়ের কাজ না করেই বছরের পর বছর সরকারি বেতনভাতা উত্তোলন করেন। গ্রামবাসী এই অভিযোগ করেছেন জেলা প্রশাসক বরাবরে। পত্রিকায় এই মর্মে খবর ছাপা হয়েছে।
অভিযুক্ত শিক্ষক যথারীতি তার বিরুদ্ধে গ্রামবাসী কর্তৃক আনিত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তা তিনি করতেই পারেন, যেহেতু হাজিরা খাতায় উপস্থিতির স্বাক্ষর দেওয়ার স্থানে তাঁর দস্তখত ঠিকই আছে। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছে তার উপস্থিতির প্রমাণ কাগজপত্রে যেমন থাকার তেমনই আছে, যা কার্যত কাগজেপত্রে প্রমাণ করে তিনি বিদ্যালয়ে হাজির ছিলেন। এই অসম্ভব সম্ভব করে তোলার একটি সহজ উপায় হলো, প্রতিমাসে একদিন বিদ্যালয়ে গিয়ে ওই শিক্ষক হাজিরা খাতায় পুরো মাসের হাজিরা স্বাক্ষর করে আসার ব্যবস্থার উপস্থিতি। এই ব্যবস্থার অধীনে বাস্তবে এই শিক্ষক চাকরি না করেও সরকারি খাতাপত্রে চাকরি করে আসছেন। এইভাবে এই দেশ এমন এক দেশ হয়ে পড়েছে, যেখানে প্রকৃতপ্রস্তাবে কেবল খাতাপত্রে চাকরি করে বাস্তবে চাকরি না করেও ঠিকই বেতন পাওয়া যায়। এই দেশে চাকরিতে থাকলেই বেতন মেলে চাকরি করতে বা চাকরির নির্দিষ্ট কাজ করতে হয় না। যেটাকে বলে মুফতে মাস কাবারি টাকা পকেটস্থ করা। চাকরির টাকা, ব্যবসায়ের লাভ আর রাজনীতিক পৃষ্ঠপোষকতার সুবিধা থেকে আয়, এমন সুবিধা কয় জনে পায়?
কিন্তু কথা হলো প্রশাসনের কর্তব্য কী? আসলে কী উপায়ে প্রশাসন বর্তমান থাকতে এই শিক্ষক এইসব অপকর্ম করেন আমাদের বোধগম্য নয়। কারণ আমরা জানি, চাকুরি ক্ষেত্রে বর্তমান মনিটরিং ব্যবস্থায় একজন শিক্ষকের পক্ষে দিনের পর দিন কর্তৃপক্ষের অগোচরে বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকা সম্ভব নয়। অথচ একজন শিক্ষকের উপর এমন অনুপস্থিতির অভিযোগ উঠেছে। মোবাইল ট্র্যাকিং চালু থাকলে এইরূপ অনুপস্থিত থাকা কোনও শিক্ষকের পক্ষে একেবারেই অসম্ভব, অর্থাৎ তাৎক্ষণিক বিদ্যালয়ে অনুপস্থিতির বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার গোচরে আসার কথা।
আমরা মনে করি কোনও এক গ্রামবাসী একজন শিক্ষকের উপর এমন অভিযোগ যখন তোলে তখন সেটা অবশ্যই খতিয়ে দেখার আবশ্যকতা আছে এবং এটাও খতিয়ে দেখার দরকার আছে যে, আসলে মোবাইল ট্র্যাকিং ব্যবস্থাটা সত্যিকার অর্থে চালু আছে কি-না। এইরূপ অপকর্মের কোনও প্রতিকার না হলে অন্যান্য শিক্ষকরাও এইরূপ অপকর্ম করতে উৎসাহিত হতে পারেন। শিক্ষকরা আমাদের ছেলেমেয়েদের না-পড়িয়েই পড়ানোর নির্ধারিত বেতন নিয়ে যাবেন, অপরদিকে আমাদের ছেলেমেয়েরা কোনও শিক্ষাই পাবে না, প্রকারান্তরে মূর্খ থেকে যাবে। বিদ্যালয়গুলোর তা হলে কী দরকার? এগুলো গুঁড়িয়ে দিলেই তো হয়। ছেলেমেয়েদের মূর্খ হওয়ার বিনিময়ে টাকা খরচ করা তো কোনও বুদ্ধিমানের কাজ না। যে-বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ছাত্রদেরকে শিক্ষা না দিয়ে শিক্ষাদানের বেতন আত্মসাৎ করছেন সে-বিদ্যালয় তোলে দেওয়াই তো উত্তম। এগুলোকে রেখে দেওয়ার কী যুক্তি থাকতে পারে? বিদ্যালয় শিক্ষা না দেওয়ার জন্য তো গড়ে তোলা হয়নি। বিদ্যালয়গুলোকে এভাবে প্রকৃতপ্রস্তাবে অকার্যকর করে যাঁরা নিজের ফায়দা লুটছে তারা দেশের, দশের, রাষ্ট্রের, সমাজের শত্রু। এর একটি বাস্তবসম্মত বিহিত ব্যবস্থা করা দরকর। টাকা খরচ করে মূর্খতা ক্রয় করার এই দ্বিমুখী ক্ষতির শিকার হতে চাওয়া কোনও বিবেচনায়ই বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। শিক্ষাক্ষেত্রে এই অচলাবস্থা সৃষ্টির স্রষ্টাদের অচিরেই কঠোর শাস্তির সম্মুখিন করা হোক।