সুনামকণ্ঠ ডেস্ক ::
বর্তমান সরকারকে জনসমর্থনহীন ও অনির্বাচিত মনে করে সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্ট ও ড. কামাল হোসেন নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়া। আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে ইতোমধ্যেই ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার ঘোষণা দিয়েছে দুটি জোট। আজ শনিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) বিকেলে পাঁচ দফা দাবি ও ৯টি লক্ষ্য প্রকাশ্যে ঘোষণা করবেন জোটের নেতারা। জোটের শীর্ষ পর্যায়ের দায়িত্বশীল নেতাদের সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
বৃহ¯পতিবার রাতের বৈঠকে ড.কামাল হোসেন শহীদ মিনার থেকে শনিবার সকালে কর্মসূচি ঘোষণা করার কথা জানালেও পরে সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণার সময়ের ব্যাপারে পরিবর্তন আসে। জোটের নেতা ও নাগরিক ঐক্যের কেন্দ্রীয় নেতা ডা. জাহেদ উর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, যুক্তফ্রন্ট চেয়ারম্যান বি চৌধুরীর শারীরিক অসুস্থতার কারণে সকালের আয়োজন পিছিয়ে বিকেলে নেওয়া হয়েছে। শনিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) বিকাল চারটায় শহীদ মিনার থেকে জাতীয় নেতারা কর্মসূচি স¤পর্কে অবহিত করবেন। তবে ভেন্যু হিসেবে শহীদ মিনারের এখনও অনুমতি পাওয়া যায়নি। অনুমতি না মিললে সেক্ষেত্রে জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে পাঁচ দফা দাবি ও নয়টি লক্ষ্য ঘোষণা করা হবে বলে তিনি জানান।
বৃহ¯পতিবার রাতে ড. কামাল জানিয়েছিলেন- শুক্রবার (১৪ সেপ্টেম্বর) কর্মসূচি প্রণীত হবে। যুক্তফ্রন্টের নয় দফা ও জাতীয় ঐক্যের সাত দফাকে সমন্বয় করে পরবর্তী অভিন্ন কর্মসূচি প্রণীত হবে। শুক্রবার নাগরিক ঐক্যের কার্যালয়ে চার দলের চার প্রতিনিধি কর্মসূচি চূড়ান্ত করে। এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন- জেএসডি’র সাধারণ স¤পাদক আবদুল মালেক রতন, বিকল্পধারার যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার উমর ফারুক, গণফোরামের যুগ্ম সাধারণ স¤পাদক আওম শফিক উল্লাহ এবং নাগরিক ঐক্যের নেতা ডা. জাহেদ উর রহমান।
জোটের সূত্রগুলো বলছে, ইতোমধ্যে যুক্তফ্রন্ট ও জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়ার দফাগুলোকে সমন্বয় করে পাঁচ দফা দাবি চূড়ান্ত করা হয়েছে। একইসঙ্গে জোটের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে নয়টি। মোট ১৪টি দফা প্রস্তাব করবেন জোটের নেতারা। শনিবার বিকালে শহীদ মিনারে পু®পস্তবক অর্পণ করে সাংবাদিকদের সামনে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হবে প্রস্তাবগুলো।
জোটের সূত্র জানায়, পাঁচ দফা দাবির মধ্যে সবগুলোই সরকারের উদ্দেশে করা। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন করা, তফসিলের আগেই সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করে নির্বাচনি রোডম্যাপ নির্ধারণ, নির্বাচনের একমাস আগে সংসদ ভেঙে দেওয়া, বর্তমান সরকার বাতিল করা, নির্বাচনের একমাস আগে ও ১০ দিন পর পর্যন্ত ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতাসহ সেনাবাহিনী মোতায়েন করা, ইভিএম বাতিল, নিরপেক্ষ ও নির্দলীয় নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা। নির্বাচনকালীন সরকারের কোনও ব্যক্তি নির্বাচনে অংশ না নেওয়া। সংবিধানের সাত অনুচ্ছেদে বর্ণিত সংবিধানের প্রাধান্যকে সমুন্নত করে রাষ্ট্র পরিচালনা করতে হবে। স্বাধীন ও ক্ষমতাস¤পন্ন নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। গণমুখী প্রশাসন তৈরি করা, রাষ্ট্রের আর্থিক শৃঙ্খলা আনা, সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন বন্ধ করা ইত্যাদি বিষয়গুলো থাকবে। এছাড়া, সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন সামাজিক আন্দোলনে গ্রেফতার ব্যক্তিদের মুক্তি, মামলা প্রত্যাহার করার আহ্বান থাকতে পারে।
সূত্রের দাবি, নয়টি লক্ষ্যে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণের বিষয়টি গুরুত্ব পেয়েছে। এই দাবিটি যুক্তফ্রন্টের নয় দফার অন্যতম ছিল। সেখানে বলা আছে- সরকার, সংসদ, প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার ভারসাম্য নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া, দেশের ভবিষ্যৎ পররাষ্ট্রনীতি, বিনিয়োগ পরিস্থিতি, দুর্নীতির বিচার করা এবং মিয়ানমারে ফেরত পাঠাতে শরণার্থীদের বিষয়ে কূটনৈতিক তৎপরতা বৃদ্ধির বিষয়টি থাকতে পারে। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বিষয়টি নিয়ে গত বছরেই ড. কামাল হোসেন, বি. চৌধুরী, আসম রব, মাহমুদুর রহমান মান্নাসহ আরও কয়েকজন নেতা বলেছিলেন, নানা ধরনের কর্মসূচি গ্রহণ করবেন। যদিও তাদের দিক থেকে অদ্যাবধি কোনও কর্মসূচি প্রণীত হয়নি।
ইতোমধ্যে যুক্তফ্রন্ট ও জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়ার সঙ্গে বিএনপির আলোচনাও সমানতালে চলছে। এ মাসের শেষ নাগাদ সম্ভাব্য পরিস্থিতি আরও বদলাতে পারে, এমন সম্ভাবনার কথা জানান জোটের দুই নেতা।
দাবি ও লক্ষ্যের বিষয়ে জানতে চাইলে জেএসডি সাধারণ স¤পাদক আবদুল মালেক রতন বলেন, আমরা কাল (শনিবার) সরকারের দুর্বলতার দিক, এর থেকে মুক্তির উপায়, নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত কীভাবে হবে, আমরা কী চাই- এসব বিষয় তুলে ধরা হবে। তবে অ্যাকশন কর্মসূচির কোনও প্ল্যান তৈরি করি নাই। এটা পরে জানানো হবে।