আইন সম্পর্কে একটা কথা প্রচলিত আছে- আইন আইনপ্রেণতার স্বার্থসংরক্ষণ করে। সে জন্য দেখা যায় কোনও আইন বিশেষ শ্রেণির স্বার্থ ক্ষুণ্ন করলে আইনটির অপমৃত্যু ঘটে শেষ পর্যন্ত, অর্থাৎ আইনটিকে বাতিল করা হয়। কোনও কোনও আইন প্রণয়নই করা হয় কোনও বিশেষ শ্রেণি বা রাজনীতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য। এমনকি এমন হতে পারে যে, আইনটি প্রণয়ন করা হলো বিশেষ কোনও অপরাধের বিচারকে আটকে দেওয়ার জন্য, যেমন দায়মুক্তি আইন। আমাদের দেশে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর মুক্তিযুদ্ধবিরোধীরা দায়মুক্তি আইন প্রণয়ন করেছিল।
আসলে একটি আইন প্রণয়নের পর সেটা কারও পক্ষে কিংবা কারও বিপক্ষে কাজ করতে পারে, কিংবা বিশেষ কোনও শ্রেণি সেটা নিজেদের স্বার্থে বা বিপক্ষকে ঘায়েল করার কাজে ব্যবহার করতে পারে। তাই অবস্থা বিশেষে কোনও কোনও আইন সমাজে কালো আইন বলে খ্যাতি লাভ করে। আবার কোনও কোনও আইন সামাজিক উন্নয়নে বৈপ্লবিক ভূমিকা রাখে।
গতকালের দৈনিক সুনামকণ্ঠে একটি সংবাদপ্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল, “কৃষিপণ্যের বিক্রয় কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করলে জেল-জরিমানা”। অর্থাৎ বলা যায়, বাজারে কৃষিপণ্যের কৃত্রিম সংকট রোধে জেল-জরিমানার বিধান রেখে একটি আইন করা হচ্ছে। আইনটির নাম ‘কৃষি বিপণন বিল-২০১৮’। এমন একটি আইন আমাদের দেশে অত্যন্ত প্রত্যাশিত আইন। লোকেরা কখনোই চায় না কৃত্রিম সংকটের চাপে পড়ে বাড়তি দাম দিয়ে বাজার থেকে পণ্য ক্রয় করতে। কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে অধিক মুনাফা অর্জনের নোংরা সংস্কৃতি প্রতিরোধে এ আইন কার্যকর ভূমিকা রাখবে আমরা এই আশা করি।
প্রসঙ্গক্রমে একটি বিষয় এখানে উল্লেখ করতে চাই। কৃষিপণ্যের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করার কারণে কৃষিপণ্যের দাম বাড়ে। আবার কৃষিপণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে বেপরোয়া চাঁদাবাজিও কৃষিপণ্যের দাম বাড়ার একটি অন্যতম কারণ। কৃষিপণ্য পরিবহন কৃষিপণ্য বিপণনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। আমাদের প্রত্যাশা এই যে, কৃষি বিপণন বিল আইনে কৃষিপণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে চাঁদাবাজি বন্ধের বিধান রাখা হবে।