বাংলাদেশে ইংরেজি ‘বাইক’ শব্দটা যতোটা পুরনো ‘ইজিবাইক’ ততোটাই নতুন শব্দ। বাইক শব্দটি ব্যবহার বাঙালির মুখে যতোটাই কম ইজিবাইক ততোটাই বেশি। এর আর একটি নাম আছে টমটম। সুনামগঞ্জ এখনও একটি প্রান্তিক শহর। এই শহর রিকসার সঙ্গে পরিচিত বোধ করি গত বিশ শতকের শেষার্ধ থেকে। আর ইজিবাইকের প্রচলন এখনও, বলা যায়, দশকের ঘর অতিক্রম করেনি। কিন্তু এখন রাস্তায় নামলে ইজিবাইকের দৌরাত্ম্যে নির্বিঘেœ পথচলা প্রায় মুশকিল। ইজিবাইক রিকসাকে ছাড়িয়ে পথ পুরোটাই দখল করে নিয়েছে। এখন বলতে গেলে ইজিবাইকই পথের রাজা।
রিকসা দুর্ঘটনায় বা রিকসার ধাক্কায় কিংবা চাপায় মানুষের মৃত্যু হয়েছে এমন ঘটনা এ শহরে ঘটেছে কি না জানা নেই। যদিও রিকসা চাপায়-ধাক্কায় কারও মৃত্যু হয়ে থাকে সেটা অবশ্যই বিরল কেবল নয়, অবাক করার মতো ঘটনাই বটে। কিন্তু ইজিবাইকের ধাক্কায়-চাপায় পথচারীর মৃত্যু ঘটেছে এমন ঘটনার খবর বিরল কোনও ঘটনা তো নয়ই, বরং মাঝে মাঝেই ঘটছে এমন ঘটনা। ইজিবাইকের সঙ্গে সংঘর্ষে মানুষের মৃত্যু এ শহরে ঘটেনি এমন নয়।
গতকালের সুনামকণ্ঠের একটি শিরোনাম ছিল, “১৮ বছরের নীচে কেউ ইজিবাইক চালাতে পারবে না”। অবৈধ এই ইজিবাইক সড়কে যানজট তৈরি করে, এটির অধিকাংশ চালক শিশুকিশোর বিধায় দুর্ঘটনা ঘটে, ইজিবাইকের ব্যাটারি চার্জ করার জন্যে বিদ্যুৎ চুরির ঘটনা ঘটছে। এই সব কারণ বিবেচনা করে জগন্নাথপুরের পুলিশ প্রশাসন ইজিবাইকের চালক ও মালিকদের ডেকে সতর্ক করে দিয়েছেন, অনুর্ধ ১৮ বছরের কেউ ইজিবাইক বা টমটম চালাতে পারবে না। জনহিতকর এই কাজে নামার জন্য আমরা পুলিশ প্রশাসনকে সাধুবাদ জানাই।
কথাগুলো তিক্ত শোনাবে। তবু সংবাদপ্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে প্রাসঙ্গিক হওয়ায় বলছি। এই ইজিবাইক আইনি বিবেচনায় একটি সম্পূর্ণ অবৈধ যান। মূলত দেশের আইন মেনে এই যানটি চলছে না। এই বেআইনি যানটির সড়কে চলার কোনও অধিকারই নেই। আমাদের আইন এই যানটিকে অনুমোদন দেয়নি। তারপরও এই যানটি কীভাবে দেশের কারখানায় কিংবা দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি হচ্ছে, পথে নামছে, চলছে এমনকি মানুষ মারছে, সেটা বোধগম্য নয়। যানটিকে সর্বাগ্রে আইন মোতাবেক হয় চলতে দেওয়া অথবা নিষিদ্ধ করা উচিত এবং আইনের ঊর্ধ্বে কেউ নয় এই সত্যটি প্রতিষ্ঠা করা রাষ্ট্রের জন্য জরুরি। ইজিবাইক রাষ্ট্রের ভেতরে থেকে রাষ্ট্রকে মানছে না, সেটা রাষ্ট্রকে বুঝতে হবে এবং বুঝতে হবে ইজিবাইক মানুষেই চালায়। রাষ্ট্রদ্রোহী মানুষের নাগরিকের সুবিধা ভোগ করার কোনও অধিকার নেই।