গতকালের দৈনিক সুনামকণ্ঠের দুইটি শিরোনাম পাঠককে স্বাভাবিকভাবেই ভাবিয়ে তোলতে পারে বলে কারও কারও মনে হয়েছে। বিখ্যাত একটি ইংরেজি প্রবাদের অনুকরণে একজন তো বলেই ফেলেছেন, সকল মহৎ প্রাণের মানুষের চিন্তা একই রকম হয়ে থাকে। শিরোনাম দুইটির একটি, ‘মানুষের কল্যাণে আজীবন কাজ করে যাব’ এবং অন্যটি ‘জনতার সেবক হিসেবে কাজ করতে চাই’। শিরোনাম দুটি আসলে দু’জনের উক্তি। প্রথমটি অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নানের এবং দ্বিতীয়টি সুনামগঞ্জ সদর ও বিশ্বম্ভরপুর আসনের সংসদ সদস্য পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ’র। দু’জনই আমাদের আপন মানুষ। কিন্তু এই ‘আপন মানুষ’-এর পরিচিতি অতিক্রম করে তাঁদের দু’জনেরই পরিচিতি সাধারণ মানুষের কাছে আলাদা আলাদা ভাবমূর্তিতে আবির্ভূত হয়ে ‘প্রিয় মানুষ’-এর প্রতিমূর্তিরূপে পর্যবশিত হয়েছে। অথচ রাজনীতির মাঠে তাঁরা দু’জনই আলাদা রাজনীতিক আদর্শের অনুসারী। একজন বঙ্গবন্ধুর আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে সচিব থেকে রাজনীতিক হয়েছেন এবং অন্যজন এখন লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে রাজনীতি করেন, জনান্তিকে বলি, তিনি কিন্তু বাল্যকাল থেকে ছিলেন যাকে বলে অন্তপ্রাণ মুজিবসেনা।
যাঁরা রাজনীতি করেন, তাঁরা অন্তত রাজনীতির দিক থেকে বিবেচনায়, প্রত্যক্ষভাবে যতোটা সাধারণ মানুষের জীবন নিয়ন্ত্রণ করেন, বোধ করি অন্যরা তেমনটা পারেন না। সাধারণ মানুষের ভাগ্য নিয়ন্ত্রণে কবি হিসাবে কাজী নজরুল ইসলামের একটি ভূমিকা আছে, তিনি সাধারণ মানুষকে স্বাধীনতার মন্ত্রে দীক্ষিত করেছেন। জাতিকে স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখতে উজ্জীবিত করেছেন। অপরদিকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতাকে বাস্তবায়িত করেছেন, তাঁর রাজনীতিক আদর্শের প্রয়োগ ঘটিয়ে, তাঁর ছয় দফার সংগ্রামটা ছিল প্রত্যক্ষ। নজরুল যতোটা পরোক্ষ ও চেতনার গভীরের শক্তি, জাতির ভাগ্য নিয়ন্ত্রণে রাজনীতিক নেতা হিসেবে বঙ্গবন্ধু ততোটাই প্রত্যক্ষ ও প্রয়োগপ্রকরণে ঐতিহাসিক নিরিখে বাস্তব, রাজনীতির আকাশে সূর্যের মতো জাজ্বল্যমান। এই কারণে রাজনীতিকের নির্ভুল চিন্তা জাতির জন্যে আশীর্বাদ ও তাঁর ভুল চিন্তা জাতির জন্যে অভিশাপ। রাজনীতিকের নির্ভুল সিদ্ধান্ত জাতির উন্নয়ন ও প্রগতিকে নিশ্চিত করে। একজন মাহাথির মোহাম্মদের রাজনীতি মালয়েশিয়াকে উন্নত করে এবং একজন শেখ হাসিনার রাজনীতি দেশকে উন্নতির রাজপথে তুলে দিয়ে প্রগতির পথে চলতে শেখায়।
এই দেশ আজ রোহিঙ্গাসঙ্কট কাঁধে নিয়ে আরও টেকসই ও আমজনতার পক্ষে অধিক কল্যাণকর গণতন্ত্রের স্বপ্ন নিয়ে আর একটি জাতীয় নির্বাচনের পথে যাত্রাপর। যে-কোনও মুহূর্তে দেশ অস্থির করে তোলতে পারে ঘাপটি মেরে বসে থাকা শত্রুরা এবং আমরা জানি আমাদের দেশের রাজনীতি এখনও পুরোপুরি নির্ভুল হয়ে উঠতে পারেনি এবং দেখেশোনে মনে হয়, রাজনীতিকে অনেক রাজনীতিবিদেরা এখানে লাভজনক ব্যবসা করে তুলেছেন। এমতাবস্থায় যখন আমরা শুনি একজন বলেন, ‘মানুষের সেবায় আজীবন কাজ করে যাব’ তো অন্যজন বলেন, ‘জনতার সেবক হয়ে কাজ করতে চাই’, তখন আমজনতার মনে সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠার স্বপ্নের জাগরণ ঘটে। আমরা আমাদের এই দুই জনপ্রতিনিধিকে সাধুবাদ জানাই। তাঁদের এই শুভ ইচ্ছার জয় হোক।