শামস শামীম ::
সুনামগঞ্জ বিদ্যুৎ বিভাগের গ্রাহকদের প্রিপেইড মিটার স্থাপন বাধ্যতামূলক করতে মিটার রিডারদের গ্রাহকদের বিল বাড়িয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে সুনামগঞ্জ বিদ্যুৎ বিভাগ। যার ফলে যেসব গ্রাহক প্রিপেইড মিটার লাগাতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন হঠাৎ করে তাদের বিল বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। গ্রাহকদের একাধিক বিল পর্যালোচনা করে বিল বাড়ানোর অসামঞ্জস্যতা লক্ষ করা গেছে। বিদ্যুৎ বিভাগের এমন ‘প্রতারণা’য় গ্রাহকরা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন।
জানা গেছে, সুনামগঞ্জ বিদ্যুৎ অফিসের অধীনে প্রায় ২২ হাজারের মতো গ্রাহক রয়েছেন। গত বছর একটি প্রকল্পে প্রিপেইড মিটার লাগানো শুরু হয়েছে। কিন্তু প্রিপেইড মিটারের নানা সমস্যার কারণে এটি স্থাপন করতে আগ্রহী নন অনেক গ্রাহক। একটি বেসরকারি কোম্পানিকে টেন্ডার দিয়ে এই কাজ বাস্তবায়ন করাচ্ছে বিদ্যুৎ বিভাগ। অভিযোগ রয়েছে প্রিপেইড মিটার লাগালে প্রকৌশলীরা অতিরিক্ত কমিশন পান এই কারণে অনেকটা জোরপূর্বক গ্রাহকদের প্রিপেইড মিটার লাগিয়ে দিচ্ছে বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মীরা। অনেক সময় গ্রাহক বাসায় না থাকলেও মিটার লাগিয়ে দেয়া হয়। তাছাড়া প্রিপেইড মিটার স্থাপনে গ্রাহকদের অনুনয় করেও কাজ না হলে স্থানীয় প্রভাবশালীদের সঙ্গে নিয়েও জোরপূর্বক মিটার লাগিয়ে দেয়া হচ্ছে এমন অভিযোগও পাওয়া গেছে। তিন মাস আগে শহরের মল্লিকপুরে এমনই একটি ঘটনা ঘটেছে।
প্রিপেইড মিটার না লাগিয়ে পুরাতন ডিজিটাল মিটারকে যেসব গ্রাহকরা রাখতে চান তাদের প্রতি ক্ষুব্ধ হয়ে বিদ্যুৎ বিভাগের সংশ্লিষ্টরা হঠাৎ বিল বাড়িয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন মিটার রিডারদের। মিটার রিডাররা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের এই নির্দেশনার কথাও এই প্রতিবেদকের কাছে স্বীকার করেছেন। তাছাড়া বিলের অসামঞ্জস্যতা লক্ষ করেও সেই নির্দেশনার বাস্তবতা পাওয়া গেছে।
শহরের হাজীপাড়ার ফিরোজা বেগমের ১৬/২ বাসায় গত জুন মাসে জোরপূর্বক প্রিপেইড মিটার লাগাতে যান বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মীরা। তিনি এই মিটার লাগাতে অপারগতা প্রকাশ করে বিদ্যুৎ বিভাগের পরামর্শে কিছুদিন আগে ডিজিটাল মিটার লাগিয়েছেন বলে জানান এবং তিনি এই মিটার লাগাতে চাননা বলেও সাফ জানিয়ে দিয়ে আর তাকে বিরক্ত না করার অনুরোধ জানান। কিন্তু গত জুলাই মাসে তার দুটি মিটারে অস্বাভাবিক বিল লক্ষ করেন তিনি। যেখানে তার ০০৫৫৫৪২ নং মিটারে বিল ছিল মে-জুন মাসে সর্বমোট ১১০০ টাকা। সেখানে জুলাই মাসেই তার ওই মিটারে বিল এসেছে ৯৯৫ টাকা। আরেকটি ০৮১৪১১৫৫ মিটার নম্বরে মে-জুন মাসে তার বিল ছিল ১৫৬৭ টাকা। সেখানে জুলাই মাসে এসে দাঁড়িয়েছে ১৯৩৩ টাকা। এভাবে অস্বাভাবিক বিদ্যুৎ বিল এসেছে তার কাছে। তিনি বলেন, আমার বাসায় প্রিপেইড মিটার লাগাতে যারা এসেছিল তাদের ফিরিয়ে দেওয়ায় এমন অস্বাভাবিক বিল এসেছে।
মল্লিকপুরের বাসিন্দা নূরুন নাহার বলেন, ১ বছর আগে ডিজিটাল মিটার লাগিয়ে দিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগের লোকজন। আমরা কেউ বড়রা বাসায় না থাকায় খালি পেয়ে একদিন ডিজিটাল মিটার লাগিয়ে দিয়ে গেছে বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মীরা। ছোটরা প্রতিবাদ করায় তাদের হুমকিও দিয়েছে।
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিদ্যুৎ অফিসের উপ সহারি প্রকৌশলী হালিম উদ্দিন সকল মিটার রিডারদের নির্দেশ দিয়েছেন এই কাজটি করতে। তার এই নির্দেশের সত্যতা পাওয়া গেছে হাজীপাড়ায় দায়িত্বপ্রাপ্ত বিদ্যুৎ বিভাগের মিটার রিডার মান্নানের কথায়। মান্নান এই প্রতিবেদককে বলেন, হালিম স্যার আমাকে বলেছেন যারা প্রিপেইড মিটার লাগাতে অস্বীকার করেছে তাদের বিল বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য। তবে আপনাদের বাসায় এই কাজটা করিনি ভাই, বিশ্বাস করেন।
এ বিষয়ে গত রোববার বিদ্যুৎ অফিসে গিয়ে নির্বাহী প্রকৌশলীকে পাওয়া যায়নি। সহকারি প্রকৌশলী নূর মোহাম্মদ তারেকের কাছে গিয়ে পরামর্শ চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে কিচ্ছু করার নেই। কোথায় এই অসামঞ্জস্য বিলের বিষয়ে আবেদন করতে হবে চাইলে তিনি বলেন, আমি জানিনা।
নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সেলিমের মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করলেও তিনি কল ধরেননি।