গতকালের দৈনিক সুনামকণ্ঠের একটি সংবাদ শিরোনাম ছিল, “১৯৮ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মাল্টিমিডিয়া ক্লাস ॥ ল্যাপটপ প্রধান শিক্ষকদের জিম্মায়, নিয়মিত হয় না ক্লাস”। হতেই হবে। যস্মিন দেশে যদাচার। এর নাম বাংলাদেশ। এখানে যা হবার নয় তাই হবে এবং যা হবার তা হবে না। উদাহরণ দিচ্ছি। গতকালের দৈনিক প্রথম আলোর প্রথম পাতার তিনটি শিরোনাম : এক. “নড়বড়ে বাসগুলোর শহরময় দাটাদাপি”, দুই. “ট্রাফিক সপ্তাহ ॥ মামলা হচ্ছে, আইন অমান্য চলছে” এবং তিন. “মেয়েদের অনুর্ধ্ব ১৫ সাফ ফুটবল ॥ পাকিস্তানকে উড়িয়ে দুর্দান্ত শুরু বাংলাদেশের ॥ বাংলাদেশ ১৪, পাকিস্তান ০”। এ সবই যা হবার নয় তা হবার জলন্ত উদাহরণ।
রাস্তায় চলার কথা ছিল, ফিটফাট বাসের কিন্তু সেখানে চলছে পুরনো বাতিল হওয়ার যোগ্য নড়বড়ে বাস, যে-গুলোর রাস্তায় চলার মেয়াদ ফুরিয়ে গেছে অনেক আগেই। তারা তথাকথিত ‘ফিটনেসের সার্টিফিকেট’ জোগাড় করেছে এবং যথারীতি রাস্তায় চলছে, দুর্ঘটনা ঘটাচ্ছে মানুষ মারছে, প্রচলিত ব্যবস্থাকে ¯্রফে খুনি করে তুলছে। ট্রাফিকের আইন আছে। রাষ্ট্র আইন করে দিয়েছে। রাস্তায় চলাচলের জন্য তাই যথেষ্ট। মেনে চললেই হলো। অন্তত নিরাপদ সড়কের ধরণাটি প্রতিষ্ঠা পাবার সাফল্য নব্বইশতাংশ অর্জন সম্ভব হবে। ট্রাফিক আইন কেউ মানছে না। এই না মানার খেসারৎ দিতে গিয়ে বিভিন্ন জটিলতা ভোগের পর চূড়ান্ত পরিণতিতে লাকক্ষয়ী দুর্ঘটনা হজম করতে হচ্ছে। আবার ব্যবস্থার বদনাম। শিক্ষার উন্নয়নে সরকার স্কুলে স্কুলে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসের ব্যবস্থা করে দিয়েছে । খুব উন্নত ও আধুনিক শিক্ষা পদ্ধতি তাতে কোনও সন্দেহ নেই। কিন্তু প্রধান শিক্ষক ল্যাপটপটিকে তাঁর ব্যক্তিত সম্পত্তি করে নিয়েছেন। ছাত্ররা মাল্টিমিডিয়া ক্লাসের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আসলে সেই একই কথা যা হবার তা হচ্ছে না, যা হবার নয় তাই হচ্ছে। মেয়েরা পাকিস্তানে ফুটবল খেলতে গেছে। যাবারই কথা নয়। গেছে। ১৪টি গোল খাবার কথা। ১৪টি গোল দিয়েছে। নিজেরা একটা গোলও হজম করেনি। যা হবার নয় তাই হয়েছে। মেয়েরা নিজের দায়িত্বটি যথাযথ পালনে বদ্ধপরিকর কিন্তু অন্যরা, এমনকি আমাদের শিক্ষক মশাইও, নিজের দায়িত্বে অবহেলা করতে পিছপা হচ্ছেন না। কাকস্য পরিবেদনা। কী আর করা।
এরপর আমরা কী বলতে পারি, কীইবা বলার থাকতে পারে। বললে তো বলতে হয় এই প্রধান শিক্ষক আসলেই শিক্ষক নন, তিনি প্রকৃতপ্রস্তাবে শিক্ষক নামের অবান্তর। তাঁকে তো চাকরিই দেওয়া হয়েছে শিশুদেরকে শিক্ষা দেওয়ার কাজটি সুচারুরূপে সম্পন্ন করার জন্যে। তিনি তা ভুল মেরে বসে আছেন। কিন্তু বেতন তোলছেন যথা সময়েই। শিক্ষা মন্ত্রনারয়ও তাঁকে বেতন দিচ্ছেন। অথচ এমন শিক্ষককে, যে শিক্ষ শিক্ষকতার দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হচ্ছেন, তাঁকে তো বেতন দেওয়ার কথা নয়। সুচারুরূপে তিনি তো শিক্ষকতা করতেই পারছেন না, পরন্তু মাঝপথে শিক্ষা দেওয়ার কাজটিকেই একেবারে মাটি করে দিচ্ছেন। শিশুরা শিক্ষা থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। তাই প্রশ্ন উঠতে পারে যে, যিনি শিক্ষা থেকে ছাত্রকে বঞ্চিত করছেন তাঁকে কেন শিক্ষকতার চাকরি থেকে বঞ্চিত করা হবে না? যার কাছে শিক্ষকতার কোনও গুণই নেই, কেন তাঁকে শিক্ষকতার চাকরিতে বহাল রাখা হবে? উত্তর দেবে কে?